পৃথিবীব্যাপী এখন এক আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। এই ভাইরাস শুধু মানুষের জীবনই কেড়ে নিচ্ছে না, একই সঙ্গে কেড়ে নিচ্ছে জীবিকাও। ধ্বংস করে দিচ্ছে একেকটি দেশ ও অঞ্চলের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। ভাইরাস সংক্রমণের দিক থেকে পৃথিবীর শীর্ষ ২০ দেশের একটি বাংলাদেশ। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, সংক্রমণের এই হার দিন দিন আরো বাড়তে পারে। ফলে দেশে যে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা আরো গভীর হতে পারে। দেশে বেকারত্বের হার দ্রুত বাড়ছে। মানুষের আয়-উপার্জন ক্রমেই কমছে। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্পে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়ে গেছে। শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন, এরই মধ্যে ৭০ হাজারের বেশি শ্রমিক ছাঁটাইপ্রক্রিয়ার শিকার হয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রক্রিয়া থেমে আছে। বাসাবাড়িতে কাজ করা গৃহকর্মীসহ নির্মাণশিল্প, পর্যটনশিল্পসহ ছোটখাটো দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় কাজ করা লাখ লাখ শ্রমিক দুই মাসের বেশি সময় ধরে পুরোপুরি বেকার রয়েছেন। এর প্রভাব পড়ছে তাঁদের জীবনযাত্রায়। অনেককেই খেয়ে, না খেয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। নিম্নমধ্যবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্ত অনেকের আয়-উপার্জন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। অনেকেরই স্থায়ীভাবে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে কাজ করেন ৩৫ থেকে ৪০ লাখ শ্রমিক। এ ছাড়া সহযোগী বিভিন্ন কারখানা বা কর্মকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন আরো সমসংখ্যক শ্রমিক। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের কারখানাগুলো এখন কমবেশি ৫৫ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। এই সক্ষমতায় কারখানা চালাতে গেলে তাদের শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কোনো বিকল্প নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ২৫ শতাংশের মতো শ্রমিক ছাঁটাই করা হতে পারে। এর অর্থ এ খাতে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক চাকরি হারাতে পারেন। সহযোগী শিল্প-কারখানায় বেকার হতে পারেন আরো অনেকে। সমাজে এর যে প্রভাব পড়তে পারে তা রীতিমতো অকল্পনীয়। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গণপরিবহন চলতে শুরু করলেও করোনাভীতির কারণে গণপরিবহনে মানুষের চলাচল অনেক কমে গেছে। তার ওপর সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে গিয়ে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এসব কারণে বাস মালিকদের দাবি, বর্ধিত ভাড়া নিয়েও তাঁরা লাভজনকভাবে পরিবহন চালাতে পারছেন না। এর ওপর সংক্রমণের হার দেখে বিভিন্ন এলাকাকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করার প্রক্রিয়া চলছে। রেড জোনে গণপরিবহন চলাচলে বাধা আসতে পারে। এসব কারণে গণপরিবহনের প্রায় ৭০ লাখ শ্রমিকের একটি বড় অংশই বেকার হয়ে পড়তে পারে।
আমরা আশা করি, সরকারের নীতিনির্ধারকরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাবেন এবং দেশের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।