নানা প্রতিবন্ধকতায় হাওরাঞ্চলে স্কুলগুলোতে পাঠদান ব্যাহত, শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত খেলাধূলায়

11
হাওরাঞ্চলগুলোতে ঝুঁকি নিয়ে নদী পথে এভাবেই প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হয়। তবে করোনার কারণে আপাতত স্কুল নেই তাই ঝুঁকিও নেই।

আল-হেলাল সুনামগঞ্জ থেকে :
চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলে শিক্ষা কার্যক্রম একেবারেই ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এক প্রকার ভুলেই গেছে যে তারা লেখাপড়ায় ব্যস্ত থাকা নিয়মিত ছাত্রছাত্রী। কারণ করোনা নামের ব্যাধির ব্যাপারে যখনই তাদের জ্ঞান হলো তখন হাওরের কৃষক পরিবারের সন্তানরা সারা বছরের খাবারের বোরো ধান কাটা, মাড়াই করা আর ধান শুকানো নিয়েই ব্যস্ত ছিল। এখন বর্ষাকাল বজ্রপাত, ঝড়, তুফান আর চারদিকে পানি থৈ থৈ করায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য স্কুলমুখী হতে দেন না অভিভাবকরা।
গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর দফায় দফায় ছুটি বেড়েছে। আবার কবে খুলবে সে নিশ্চয়তাও নেই। বর্ষায় হাওরে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিভাবে নিশ্চিত করা হবে তার নেই কোন পরিকল্পনা।
হাওরাঞ্চলের স্কুলছুটি মানেই শিশু শিক্ষার্থীদের আনন্দের সীমা নেই। বাড়িতে পড়াশুনার চাপ নেই ফলে ঘুরে বেড়ানো, বাড়ির কাজ আর খেলাধূলা নিয়েই ব্যস্ত থাকে তারা।
৬ মাস পায়ে হেটে চলাচল করলেও বর্ষায় প্রেক্ষাপট ভিন্ন হয়ে যায়। চারদিকে থাকে পানি আর পানি। সমুদ্রের ন্যায় আকার ধারণ করে হাওরগুলো। ফলে যোগাযোগ মাধ্যম ছোট ডিঙি নৌকা, খেয়া নৌকা আর লম্বা বাঁশের সাঁকোই হয় একমাত্র ভরসা। কিন্তু এতেও রয়েছে জীবনের ঝুঁিক।
সচেতন নাগরিক জাহাঙ্গীর আলম ভূইয়া জানান, হাওরাঞ্চলের ৯০ ভাগ মানুষই অভাব অনটন নিয়ে জীবন যাপন করে। তাদের নেই নিজস্ব নৌকা কেনার ক্ষমতা। ফলে বর্ষায় ডিঙ্গি নৌকা ও লম্বা বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচলে থাকে জীবনের ঝুঁকি। অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। তাই অভিভাবকগন নিজ সন্তানদের সুরক্ষায় স্কুলে পাঠানো থেকে বিরত থাকেন। অনেক শিক্ষক স্কুল থেকে বাড়ি দূরে থাকায় অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে স্কুলে আসেন না। ফলে স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জিল্লুর রহমান জানান, করোনা পরিস্থিতিতে পাঠদান কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি বর্ষায় শিক্ষক শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা যাওয়ার জন্য কাঠের তৈরী নৌকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। যাতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থাকে আর হাওর এলাকার শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আবাসিক বিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টিও বিবেচনাধীন আছে।