কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে থাকা অবস্থাতেই সীমিত আকারে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। সেই নির্দেশনা মেনে আগামী ৩১ মে থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। লঞ্চে ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যাত্রী বহন করতে হবে, সে কারণে বাড়বে ভাড়া। তবে যাত্রী ও লঞ্চ শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি। তারা বলছে, এটা সরকারকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
লঞ্চ চলাচল পুনরায় শুরু করার বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার বিকাল চারটায় একটি সভা ডেকেছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সেখানে ভাড়া নির্ধারণ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি সভাপতি মাহবুব উদ্দিন জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা লঞ্চ চলাচল শুরু করছেন। এক্ষেত্রে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের বিষয়টি সরকারকে দেখতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার পরে আমাদের লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। এখন আবার চলাচলের নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা সেটি অবশ্যই মানবো। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে, স্বাভাবিকের তুলনায় যাত্রী কম নিতে হবে। আর এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই ভাড়া বাড়বে। আগামীকাল এ বিষয়ে আলোচনা হবে।’
সভাপতি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ফেরিঘাটের চিত্র দেখেছি। মানুষ বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে। লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রে মানুষ সামাজিক দূরত্ব কতটা মানবে বা সরকার তাদেরকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে এবিষয়ে আমরা সন্দিহান।‘
এদিকে লঞ্চের কেবিনে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস সুরক্ষার বিষয়ে খুব একটা সমস্যা হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদীবন্দরের বন্দর কর্মকর্তা আলমগীর কবির।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সুরক্ষা নিশ্চিত করে কেবিনে যাত্রী নিতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে ডেকে কীভাবে যাত্রী পরিবহন করা হবে সে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হবে। আগামীকালের আলোচনায় এবিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনার পরে মূলত সিদ্ধান্ত আসবে।’
আলমগীর কবির বলেন, ‘এখন অন্যান্য সময়ের মতো অবস্থা নেই। একেবারে প্রয়োজন না হলে অনেকেই যাতায়াত করছেন না। ফলে আমরা আশা করছি, অন্যান্য সময়ের চাইতে এখন যাত্রী সংখ্যাটাও তুলনামূলকভাবে কম হবে। এসব বিষয়েও আলোচনায় হবে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার এক অডিও বার্তায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চালুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘লঞ্চ শ্রমিক-মালিকের সঙ্গে বিআইডব্লিওটিএর আলোচনা হবে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধির আওতায় আনা যায়। ৫০০ জন যাত্রী একটি লঞ্চে আসে, সেই ক্ষেত্রে আমরা ২০০ জন যাত্রী আনা-নেয়া করব। সেক্ষেত্রে পরিবহন খরচটা উঠে আসবে কি না, সেটাও একটা বিষয়। আমরা মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তবে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমাদের পরিবহন চালু করতে হবে।’
খালিদ মাহমুদ বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কীভাবে লঞ্চ চালু করা যায় এটা নিয়ে আমরা গত ২০ মার্চ লঞ্চ শ্রমিক-মালিক ও বিআইডব্লিউটিএ একটি বৈঠক করেছি। সেই বৈঠকের আলোকেই আবার আলোচনাসাপেক্ষে লঞ্চ চালু করব।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর গত ২৪ মার্চ থেকে সবধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এসময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের লোকজন ঢাকায় আসতে এবং ঢাকা থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যেতে নানাধরনের ঝুঁকি নিতে দেখা গেছে যাত্রীদের। ফেরিতে কোনো ধরনের সামাজিক দূরত্ব না মেনে চলাচল করতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষকে। ঈদের পর তারা আবার একইভাবে ঢাকায় ফিরছেন। এতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।