কাজিরবাজার ডেস্ক :
নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যে সূর্য শীতল হয়ে আসার খবর দিয়েছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। এটি সূর্যের একপ্রকার ‘লকডাউন’ বলেই তারা ধারণা করছেন। এর ফলে বিশ্বে তাপমাত্রা কমে যাবে, পৃথিবী আরও শীতল হয়ে উঠবে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে ভূমিকম্প ও দুর্ভিক্ষের মতো ভয়ংকর দুর্যোগ দেখা দেবে।
চলতি বছরের শুরু থেকেই নভেল করোনাভাইরাসের মহামারির কবলে গোটা বিশ্ব। এরইমধ্যে তিন লাখের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া এই মারণব্যাধি ঠেকাতে প্রায় দিশাহারা হয়ে পড়ার অবস্থা। তার মধ্যে সূর্যের তাপমাত্রা কমে আসার ফলে সম্ভাব্য দুর্যোগের এই খবর দিয়েছে নিউইয়র্ক পোস্ট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সামনে ‘সবচেয়ে ভয়ংকর শীতকালের’মুখোমুখি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন দেশটির সাবেক এক শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। তার ভাষ্য, সূর্যের তাপ কমে আসার কারণে যুক্তরাষ্ট্র তার আধুনিক ইতিহাসের এক ভয়াবহ শীতকালের মুখোমুখি হতে চলেছে।
নিউইয়র্ক পোস্ট এক প্রতিবেদনে বলেছে, সূর্য বর্তমানে ‘সোলার মিনিমাম’ পরিস্থিতিতে রয়েছে। এর ফলে পৃথিবীতে সূর্যের স্বাভাবিক সময়ে সরবরাহ করা তাপমাত্রা অনেক কমে গেছে। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি সূর্যের কার্যকলাপ নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে।
‘এ কারণে বিশ্ববাসী সামনে এমন গভীরতম এক সময়ের ভেতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, যেসময়ে সূর্যের আলো কার্যত অদৃশ্য হয়ে যাবে’- বলছেন বিশ্বখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড. টনি ফিলিপস।
তিনি বলেছেন, সূর্যের সোলার মিনিমাম চলছে। এটি অত্যন্ত গভীর। সানস্পট গণনাগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে এটি বিগত শতাব্দীর সবচেয়ে গভীরতম অবস্থানে রয়েছে। সূর্যের চৌম্বকীয় শক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। এর মানে হলো সৌরজগতে অতিরিক্ত মহাজাগতিক শক্তির প্রবেশের আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
‘সৌরজগতে অতিরিক্ত মহাজাগতিক রশ্মি প্রবেশ করলে নভোচারী ও মেরুঅঞ্চলের জন্য তা হবে বিপদজনক। এছাড়া এটি পৃথিবীর ওপরের বায়ুমণ্ডলের বৈদ্যুতিক-রসায়নকে প্রভাবিত করে এবং বজ্রপাতও বাড়াবো’- নিউইয়র্ক পোস্টকে বলেন জোতির্বিজ্ঞানী টনি ফিলিপস।
সূর্যের এই লকডাউনে যাওয়ার ঘটনাকে ‘ডাল্টন মিনিমাম’ এর পুনরাবৃত্তি হিসেবে আশঙ্কা করছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। ১৭৯০ এবং ১৮৩০ এর মধ্যে সূর্যের মিনিমাম সোলারের কারণে নির্মম শীতের মুখে পড়েছিল পৃথিবী। এছাড়া ফসলের ভয়াবহ ক্ষতি, দুর্ভিক্ষ এবং শক্তিশালী আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ওই দুই মহাঘটনা বিজ্ঞানীদের কাছে ডাল্টন মিনিমাম হিসেবে চিহ্নিত।
ওই সময় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাত্র দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় পৃথিবী ডুবেছিল। বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিল খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা।
এছাড়া ১৮১৫ সালের ১০ এপ্রিল দুই হাজার বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অগ্নুৎপাতের ঘটনা ঘটেছিল। ইন্দোনেশিয়ার তামবোরা পর্বতশৃঙ্গে ঘটা সেই অগ্নুৎপাতে মুহূর্তেই অন্তত ৭১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
পরের বছর ১৮১৬ সালে গ্রীষ্মকালীন সময়েও ছিল প্রবল শীত। এমনকি জুলাইয়ের গরমের দিনও আচ্ছন্ন ছিল তুষারপাতে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই বছর সূর্যের সানস্পট ৭৬ শতাংশ পর্যন্ত ফাঁকা দেখা গেছে। মহাকাশ যুগে এমন ঘটনা মাত্র একবার ঘটেছে।