রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের রিট শুনতে বিব্রত হাইকোর্ট

14

রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করে গত ১৩ ফেব্রæয়ারি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা গেজেট স্থগিত চেয়ে করা রিট আবেদন শুনতে বিব্রত বোধ করেছেন হাইকোর্ট। এরপর রোববার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটি প্রধান বিচারপতি বরাবরে পাঠানোর আদেশ দেন। বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি আহমেদ সোহেল বলেন, আমি পাঁচ বছর দুদকের আইনজীবী ছিলাম। যেহেতু এ রিট আবেদনে দুদকের প্রশ্ন জড়িত এ কারণে রিট আবেদনটি শুনতে বিব্রত বোধ করছি। এরপর রিট আবেদনটি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন আদালত। নিয়ম অনুযায়ী, এখন রিট আবেদনটি শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ গঠন করে দেবেন প্রধান বিচারপতি।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এম এ আজিজ খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান দাউদ। এর আগে গত ৭ মার্চ এ রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম এ আজিজ খান।
আবেদনে নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বিবাদী করা হয়েছে। রিটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া এবং পরে গেজেট প্রকাশ করার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।
আইনজীবীর দাবি, রাষ্ট্রপতি বাছাই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয়নি। যাচাই-বাছাই সঠিক মতো হলে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হতো না। কারণ মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার ছিলেন। দুদক আইন ২০০৪ এর ৯ ধারা অনুসারে দুদকের সাবেক কমিশনার লাভজনক কোনো পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন না। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। গত ১৩ ফেব্রæয়ারি ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলমের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সালের ২৭ নম্বর আইন) এর ধারা ৭ এবং রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বিধিমালা, ১৯৯১ এর বিধি ১২ এর উপ-বিধি (৬) অনুসারে নির্বাচনী কর্তা ও নির্বাচন কমিশনারের ঘোষণা মোতাবেক মো. সাহাবুদ্দিন, বাবা-মরহুম শরফুদ্দিন আনছারী, বাসা/হোল্ডিং-৮৮/১, গ্রাম/রাস্তা. শিবরামপুর, পাবনা পৌরসভা, ডাকঘর- পাবনা, পোস্ট কোড-৬৬০০, উপজেলা-পাবনা সদর, জেলা-পাবনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।
বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ পূর্তি হবে আগামী ২৩ এপ্রিল। শপথ নিয়ে ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে যেতে এ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নব-নির্বাচিত মো. সাহাবুদ্দিনকে।
গত ১৯ ফেব্রæয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ২৫ জানুয়ারি এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ‘নির্বাচনী কর্তা’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে বাছাইয়ে একক প্রার্থী থাকায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচনী কর্তা ইতোমধ্যে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন।
সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরের পাঁচ বছর তার পদে অধিষ্ঠিত থাকতে পারেন। বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল কার্যভার গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক তার দায়িত্বের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে পদটি শূন্য হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিন থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করার বিধান রয়েছে। সংবিধানের এসব বিধানের আলোকে পরবর্তী (২২তম) রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয় গত ২৪ জানুয়ারি। আর ২৩ ফেব্রæয়ারির মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল।
২০১৮ সালে ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ৫ ফেব্রæয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই ছিল ৭ ফেব্রæয়ারি। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় ছিল ১০ ফেব্রæয়ারি ও ভোটগ্রহণের সময় রাখা হয়েছিল ১৮ ফেব্রæয়ারি। সে সময় ২২ দিনের মধ্যে পুরো কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে সে সময়ও বর্তমান রাষ্ট্রপতি একক প্রার্থী থাকায় বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীনের সময় ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ থেকে মো. আবদুল হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। ওই বছরের ২০ মার্চ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান মৃত্যুবরণ করলে মো. আবদুল হামিদ সেদিন থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২২ এপ্রিল তিনি বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
এরপর মো. আবদুল হামিদ ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রæয়ারি ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় মেয়াদে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং ওই বছর ২৪ এপ্রিল ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সংবিধান অনুযায়ী, দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ায় তার আর এ পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল না।