পরিবহন শ্রমিকদের দুর্দশা নিরসন হোক

12

করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে সমাজের সর্বস্তরে। যাদের প্রতিদিন কাজ করে খেতে হয়, এমন শ্রেণির মানুষেরই সমস্যা দেখা দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের নতুন সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োগপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক। আর তাঁদের বেতনও হওয়ার কথা মাসিক। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাস-ট্রাকের চালকদের প্রায় সবাই দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে চলেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছে। এর আওতায় গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। গাড়ির চাকা বন্ধ থাকায় দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল পরিবহন শ্রমিকরা বেকার হয়ে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণার পর কর্মহীন হয়ে পড়েছেন দেশের সড়ক পথের পরিবহন শ্রমিকরা। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা এই শ্রমিকদের পরিবার নিয়ে এখন অনাহারে-অর্ধাহারে কাটছে দিন। শ্রমিকদের অভিযোগ, এই দুর্দিনে নেতাদের কেউই তাঁদের পাশে নেই। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছেন না তাঁরা। রাজধানীতে বাস টার্মিনাল পাহারার বিনিময়ে দৈনিক খোরাকি পাচ্ছেন কিছু পরিবহন শ্রমিক।
প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, যানবাহন চলাচল যখন স্বাভাবিক ছিল, তখন যানবাহনপ্রতি প্রতিদিন ৭০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হতো। আর এখন ব্যক্তিমালিকানাধীন সড়ক পরিবহন শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের কোটি টাকার বেশি ব্যবহার হচ্ছে না। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের বিপুল অঙ্কের তহবিল যেন পরিবহন শ্রমিকদের জন্য থেকেও ‘নেই’। দিনমজুরদের জন্য সরকারের ঘোষিত ৭৬০ কোটি টাকার সহায়তার কতটুকু পরিবহন শ্রমিকরা পাবেন তা-ও তাঁরা জানেন না। ৯৮ শতাংশ পরিবহন শ্রমিক অনুদান বা অন্যান্য সরকারি সহায়তা পেতেও বিড়ম্বনায় আছেন নিয়োগপত্র না থাকায়। কয়েক দিন ধরে ত্রাণের দাবিতে পরিবহন শ্রমিকরা পথে পথে ঘুরছেন, বিক্ষোভ করছেন। প্রকাশিত খবরে বলা হচ্ছে, সরকারের কাছে শ্রমিকদের সহায়তার দাবি জানিয়ে চাঁদার ভাগ পাওয়া নেতারা ‘ঘরবন্দি’ আছেন। অন্যদিকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের ৪০০ কোটি টাকা থেকেও পরিবহন শ্রমিকরা কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না করোনাকালে। কারণ নিয়ম অনুসারে এ সহায়তা শুধু চিকিত্সার জন্য দিতে পারবে অধিদপ্তর।
অসহায় শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা যেমন দরকার, তেমনি প্রতিদিনের যে চাঁদা আদায় করা হয়, তারও ন্যায্য হিস্যা দরকার। এই টাকা কোথায়, কিভাবে খরচ হয় তা জানা প্রয়োজন। সাধারণ শ্রমিকরা কেন পরিবার নিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাবেন?