কাজিরবাজার ডেস্ক :
বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নভেল করোনাভাইরাস। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের তান্ডবে দিশেহারা মানুষ। তাদের মনে একটাই জিজ্ঞাসা- কবে আসবে করোনাভাইরাসের ওষুধ বা টিকা। যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরে করোনাভাইরাসের ১০ লাখ টিকা বাজারে ছাড়া হবে। তবে তার আগে আগামী সপ্তাহে এই টিকা যুক্তরাজ্যে মানবদেহে প্রয়োগ করা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে যাদের দেহে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে তারাও প্রস্তুত আছেন।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আদ্রিয়ান হিল বলেন, করোনাভাইরাসের টিকার জন্য বিশ্ব আসলে আর অপেক্ষা করতে পারছে না। কবে তারা শুনতে পাবে যে, করোনাভাইরাসের টিকা সফলভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে এবং সেটা মানবদেহে কাজ করেছে। আগামী সপ্তাহেই আমরা মানবদেহে করোনার টিকা প্রয়োগ করব। অবশ্য তার আগেই আমরা উৎপাদন শুরু করেছি। প্রথমে আমরা ৩ লিটারের ডোজ প্রস্তুত রাখছি। এরপর ৫০ লিটার, ১০০ লিটার, ২০০ লিটার এমনকি ২০০০ লিটার উৎপাদন করা হবে। যদি ফল ভালো আসে তাহলে প্রাথমিকভাবে সেগুলো বাজারে ছাড়া হবে।
যদিও এই ধরনের টিকার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা আগেই নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন না। কিন্তু করোনাভাইরাসের এই টিকাটি সফল হওয়ার ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা ৮০ শতাংশ আশাবাদী। সে কারণে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা ১০ লাখ ডোজ উৎপাদন করতে যাচ্ছেন।
প্রফেসর আদ্রিয়ান হিল বলেন, প্রাথমিকভাবে যেটা উৎপাদন করছি সেটা অবশ্য আমরা ঝুঁকি নিয়েই করছি। কারণ যদি টিকা মানবদেহে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ না করে তাহলে কেউ এগুলো কিনবে না। তবে আমরা সফলতার ব্যাপারে ৮০ শতাংশ আশাবাদী। টিকা যদি কাজ করে তাহলে আমাদের লক্ষ্য হবে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে মিলিয়ন ডোজ তৈরি করে বাজারজাত করা। তখন অবশ্য এর চাহিদা অনেক বাড়বে। বিশ্বের শত মিলিয়ন ডোজ প্রয়োজন হবে। হয়তো চলতি বছরের শেষদিকে সেটাও সম্ভব হবে লকডাউন থেকে বিশ্বকে মুক্তি দিতে।
টিকার ডোজ তৈরির ব্যাপারে ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যের তিনটি ও বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে টিকাটির উন্নয়নে। এই দলে এমন বিজ্ঞানী ও গবেষক রয়েছেন যারা মার্স ভাইরাসের টিকা তৈরি করেছিলেন।
করোনাভাইরাসের এই টিকা তৈরির জন্য যুক্তরাজ্যে সরকার অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীদের ২.২ মিলিয়ন পাউন্ড (২৩৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা) দিয়েছে। যেটার মাধ্যমে তারা টিকা তৈরি, মানবদেহে প্রয়োগ, টিকার উন্নয়ন ও উৎপাদন করছে।
তবে ব্রিটেনের বাণিজ্যমন্ত্রী আলোক শর্মা বলেছেন, করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য ব্র্রিটিশ সরকার সর্বাÍক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ ভ্যাকসিন বাজারে আসবে এ নিয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে বলা যাবে না। তিনি বলেন, আমরা একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করেছি। যত কম সময়ে সম্ভব তারা এই ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ব্রিটিশ জনগণের জন্য সরবরাহ করবে।
আলোক শর্মা বলেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ, অগ্নিনির্বাপণ কর্মী ও প্রিজন অফিসারদের মধ্যে করোনা টেস্ট শুরু করা হবে। সরকার চলতি মাসের শেষ নাগাদ প্রতিদিন এক লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে শুক্রবার পর্যন্ত প্রতিদিন অন্তত ৩৫ হাজার মানুষকে পরীক্ষা করা হয়েছে।