সাহিত্যে নোবেল পেয়ে ইতিহাস গড়লেন হান কাং

3

কাজির বাজার ডেস্ক

২০২৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন দক্ষিণ কোরিয়ার ৫৩ বছর বয়সী লেখিকা হান কাং। বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার পর তার নাম ঘোষণা করা হয়। সাহিত্যের জন্য প্রথম দক্ষিণ কোরীয় হিসেবে এ পুরস্কার জিতে ইতিহাস গড়লেন তিনি। দ্য সুইডিশ একাডেমি জানিয়েছে, তার দারুণ কাব্যময় গদ্যের জন্য এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, যা ঐতিহাসিক ক্ষতগুলোকে সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরে এবং মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ করে।
হান কাং ১৯৭০ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়াংজু শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৯ বছর বয়সে পরিবারসহ সিউলে চলে যান। তিনি একটি সাহিত্যিক পরিবার থেকে এসেছেন। তার বাবা একজন স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক। তাই তিনি একটি সাহিত্যিক পরিবেশেই বেড়ে ওঠেন। লেখালেখির পাশাপাশি হান কাং শিল্প ও সংগীতের প্রতিও গভীরভাবে আকৃষ্ট, যা তার পুরো সাহিত্যিক কাজেও প্রতিফলিত হয়েছে। ১৯৯৩ সালে হান কাং প্রথমে কবিতা দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবন শুরু করেন, যা ‘লিটারেচার অ্যান্ড সোসাইটি’ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে তার প্রথম গদ্য সংকলন ‘লাভ অব ইয়োসু’ প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি একের পর এক উপন্যাস ও ছোটগল্প প্রকাশ করেন।
তার উল্লেখযোগ্য একটি উপন্যাস হলো ২০০২ সালে প্রকাশিত ‘ইউর কোল্ড হ্যান্ডস’। সেখানে মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও ব্যক্তিত্বের মধ্যে দ্ব›েদ্বর চিত্র ফুটে উঠেছে। হান কাংয়ের আন্তর্জাতিক সাফল্য আসে ২০০৭ সালে প্রকাশিত উপন্যাস ‘দ্য ভেজিটেরিয়ান’-এর মাধ্যমে, যা তিনটি অংশে লেখা। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র ইয়ং-হাই যখন খাদ্যাভ্যাসের সামাজিক নিয়ম মেনে চলতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন এর সহিংস পরিণতির কাহিনি তুলে ধরা হয়। এই উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারও জিতেছিলেন এই কথাসাহিত্যিক।
হান কাংয়ের সাহিত্যিক কাজগুলোতে শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা গভীরভাবে মিলে যায়, যা প্রাচ্য দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তার প্রতিটি রচনায় তিনি মানবজীবনের ভঙ্গুরতাকে প্রকাশ করেন, যেখানে দেহ ও আত্মা, জীবিত ও মৃতের মধ্যকার সম্পর্ককে অনন্যভাবে তুলে ধরা হয়েছে। তার কাব্যময় ও পরীক্ষামূলক লেখার শৈলীতে তিনি আধুনিক গদ্যের একজন উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। গত বছর নরওয়ের নাট্যকার জন ফস সাহিত্যে নোবেল জিতেছিলেন, যার নাটকগুলো বিশ্বের সমসাময়িক নাট্যকারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মঞ্চস্থ হয়েছে। সুইডিশ একাডেমিকে বহুদিন ধরে সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাদের পুরস্কারের তালিকায় পশ্চিমা সাদা পুরুষ লেখকদের আধিক্যের জন্য। ২০১৮ সালের #মিটু কেলেঙ্কারির পর থেকে সুইডিশ একাডেমি বড় ধরনের সংস্কার এনেছে এবং বিশ্বব্যাপী ও লিঙ্গসমতার ভিত্তিতে সাহিত্য পুরস্কার প্রদানের প্রতিশ্রæতি দিয়েছে। সে সময় থেকে একাডেমি চারজন নারীকে সম্মানিত করেছে, যার মধ্যে হান কাংও আছেন। অন্য তিনজন হলেন ফ্রান্সের অ্যানি এরনো, মার্কিন কবি লুইস গøুক ও পোল্যান্ডের ওলগা টোকারচুক।
হান কাং আগামী ১০ ডিসেম্বর বিজ্ঞানী ও নোবেল পুরস্কারের প্রতিষ্ঠাতা আলফ্রেড নোবেলের মৃত্যুবার্ষিকীতে সুইডেনের রাজা কার্ল ষোড়শ গুস্তাভের কাছ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করবেন।