দেশে এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে একদিনে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যার হিসাবে যা সর্বোচ্চ। এ সময়ে সারা দেশে দেড় হাজারের বেশি ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার ডেঙ্গুবিষয়ক এসব তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছে।
হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৩৩ জন। এ নিয়ে চলতি বছর মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২৭ জনে। এর মধ্যে ৮০ জনই মারা গেছেন জুলাইয়ে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন ৭৭৯ জন। বাকি ৭৫৪ জন ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢাকার ১৫ হাজার ৪৭৬ জন ও ঢাকার বাইরের ৮ হাজার ৫২৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ভর্তি আছে ৫ হাজার ৫৬৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ৩ হাজার ৪৪৩ জন ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ২ হাজার ১২৬ জন।
সরকারের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে যত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ও যতজনের মৃত্যু হয়েছে তা এর আগে কোনো বছরের প্রথম ছয় মাসে দেখা যায়নি। জুলাইয়ে ডেঙ্গুতে ৮০ জনের মৃত্যু ঘটেছে। গত বছরের একই মাসে যেখানে মৃত্যু হয়েছিল নয়জনের। দেশে ২০২১ সালে ১০৫ জন, ২০২০ সালে ৭ জন ও ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দ্রæত বাড়তে দেখা যাচ্ছে। গত মাসে মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের। জুলাইয়ের প্রথম ১৮ দিনেই সেই সংখ্যা বেড়ে তিন গুণ হয়েছে।
রোগতত্ত¡বিদরা বলছেন, চলতি বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে তা ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন আগে ডেঙ্গু সম্বন্ধে ধারণা ছিলো ডেঙ্গু স্বচ্ছ জলে বংশ বিস্তার করে। ডেঙ্গু হুল ফোটায় সকালে ও বিকেলে। এসব ধারণা এখন নেই। বিশেষত ডেঙ্গুর একটা সিমটম দেখা গেছে ভয়াবহ। সেটা হলো টেস্টে ডেঙ্গু ধরা পড়ে না। অথচ ডেঙ্গুর সব সিমটম থাকে। সব মিলিয়ে ডেঙ্গুর অনেক ভেরিয়েন্ট দেখা দেয়ার কারণে এখন সব ধরনের জলেই ডেঙ্গু বংশ বিস্তার করছে। কামড়াচ্ছে দিনে রাতে সব সময়। আগামীতে এ রোগের প্রকোপ আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ডেঙ্গুতে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিল এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছে। মশাবাহিত সংক্রামক রোগ ডেঙ্গু উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। সব মিলিয়ে এ মুহ‚র্তে যে অবস্থা দেখা দিয়েছে তাতে দেশে জনস্বাস্থ্যের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করেন রোগতত্ত¡ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যে পরিস্থিতি রয়েছে তাতে জনস্বাস্থ্যের ‘ইমার্জেন্সি’ বা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা যাবে না। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে হবে। আমরা মনেকরি ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি বিচার করে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে আন্তরিক হবে এ প্রত্যাশা আমাদের।