কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিল, শত শত মানুষের প্রাণহানি। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে এই দৃশ্য দেখছে ইতালির মানুষ। মহামারি করোনাভাইরাসে একদিনে মৃতের সংখ্যা হাজারের কোটা ছুঁইছুঁই অবস্থাও দেখেছে দেশটি। তবে মৃতের সংখ্যা কমে আসায় কিছুটা আশা দেখছে ইউরোপের এই দেশটির বাসিন্দারা।
রবিবার ইতালিতে মারা গেছে ৪৩১ জন, যা গত ১৯ মার্চের পরে সবচেয়ে কম। দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যাও কমতে শুরু করেছে। গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা তিন হাজার ৩৪৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে এক হাজার ৬৭৭ জন। চিকিৎসাধীন এক লাখ দুই হাজার ২৫৩ জন।
এ নিয়ে দেশটিতে মোট রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৩ জন বলে জানিয়েছেন নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি।
তিনি বলেন, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। ফলে এ পর্যন্ত চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩৪ হাজার ২১১ জন।
ইতালির ২১ অঞ্চলের মধ্যে লোম্বারদিয়ায় করোনার সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত (মিলান, বেরগামো, ব্রেসিয়া, ক্রেমনাসহ) ১১টি প্রদেশ। আজ এ অঞ্চলে মারা গেছে ১১০ জন, যা গত এক মাসে সবচেয়ে কম। শুধু এ অঞ্চলেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দশ হাজার ৬২১ জনে দাঁড়িয়েছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৯ হাজার ৫২ জন। আজ মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৬০ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩৪৩ জন। মোট সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ১৭ হাজার ১৬৬ জন।
এদিকে রবিবার স্টার সানডের বিশেষ প্রার্থনায় পোপ ফ্রান্সিস করোনাভাইরাসে মৃতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।
দেশজুড়ে ‘জরুরি নয়’ এমন সব ধরনের ব্যবসা বন্ধ রয়েছে।এছাড়া বাড়ির বাইরে সবধরনের খেলাধুলা ও ব্যায়াম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সুপার মার্কেট, ফার্মেসি, পোস্ট অফিস ও ব্যাংক এবং গণপরিবহন এখন পর্যন্ত চালু রয়েছে।
লকডাউনের মেয়াদ তৃতীয় দফায় বাড়িয়ে ৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে আজ ১৪ এপ্রিল থেকে বইয়ের দোকান, শিশুসামগ্রী সরবরাহকারী, কাঠ কোম্পানিগুলোর মত পণ্যের দোকান খুলে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তে।
লোম্বারদিয়ার প্রেসিডেন্ট আত্তিলিয়ো ফোনতানা বলেন, নতুন আইন লোম্বারদিয়ার জন্য কার্যকর হবে না। বইয়ের দোকান, শিশুসামগ্রী সরবরাহকারী, কাঠ কোম্পানিগুলোর পণ্যের দোকান এ অঞ্চলে বন্ধ থাকবে।
লোম্বারদিয়ার মতো একই ঘোষণা দিয়েছেন পিয়েমোন্তের প্রেসিডেন্ট জাইয়া। বইয়ের দোকান, শিশুসামগ্রী সরবরাহকারী, কাঠ কোম্পানিগুলোর পণ্যের দোকান এ অঞ্চলে বন্ধ থাকবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী জোসেপ্পে কন্তের আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের এই দুর্দিনে প্রায় আট হাজার অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অ্যাম্বুলেন্স কর্মী স্বাস্থ্যসেবা দিতে করোনা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। শনিবার তিউনিশিয়ার একটি মেডিকেল টিম চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে ইতালিতে এসেছে। এছাড়াও কাতার, আলবেনিয়া, চীন, কিউবা এবং রাশিয়া থেকে আগত মেডিকেল টিম ইতালির বিভিন্ন অঞ্চলে আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।