পর্যাপ্ত আয়োজনবিহীন অনলাইন ক্লাস বন্ধ করতে হবে অথবা সকল শিক্ষার্থীদের ডাটা চার্জ প্রদান, নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান, ডিভাইস প্রদান সহ অন্যান্য আয়োজন নিশ্চিত করে অনলাইন ক্লাস নিতে হবে এবং এই করোনা মহামারির সময়ে শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া মওকুফে রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন ও অর্থ বরাদ্দের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মদনমোহন কলেজ শাখার উদ্যোগে স্মারকলিপি পেশ করা হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করেন কলেজ অধ্যক্ষ সর্ব্বানী অর্জ্জুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলেজ শাখার সংগঠক পলাশ কান্ত দাস, সাকিব রানা প্রমুখ।
স্মারকলিপি উল্লেখ করা হয়, “করোনা মহামারীতে দেশের মানুষ বিপর্যস্ত। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। মার্চ মাসে সংক্রমণের শুরু থেকেই চিকিৎসা ব্যবস্থার ভঙ্গুর চিত্র স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। এখনও পর্যন্ত দেশের ৪৩টি জেলায় করোনা টেস্টের ল্যাব নেই, নেই অক্সিজেন, আইসোলেশন ও ভ্যান্টিলেশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। উপরন্তু করোনা টেস্টের ফি বাড়ানো হয়েছে। বেসরকারিভাবে টেস্ট করার অনুমতি দিয়ে লুটপাটের ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করেছে। এ পরিস্থিতিতে নিম্ন মধ্যবিত্ত, শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ কাজ হারিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। সরকারি ভাবে সংকট নিরসনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিপরীতে যতটুকু বরাদ্দ ছিল তা নিয়েও চলেছে লুটপাট। এই সংকটকালীন মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনও বিপন্ন। শিক্ষার্থীদের পরিবারের অর্থ সংকটের মধ্যেও স্কুল-কলেজের বেতন পরিশোধ করতে হচ্ছে। শুরু থেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি স্কুল, কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও অনলাইন ক্লাস চালু করা হয়। আমরা জানি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। স্বাভাবিক সময়েই এ বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের নিয়মিত ক্লাস নেয়ার আয়োজন নেই। ক্লাসরুম সংকট, শিক্ষক সংকটের ফলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এরকম পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস শুরুর জন্য যে প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল তার কোন কিছুই লক্ষ্য করা যায়নি। প্রায় ২৮ লক্ষ শিক্ষার্থীকে অনলাইন ক্লাসের আওতায় নিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের ডিভাইস, মোবাইল নেটওয়ার্ক, ডাটা কেনার সামর্থ্য, বাড়ির পরিবেশ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ ও পদক্ষেপ নেয়ার দরকার ছিল তার কিছুই করা হয় নি। বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। এসকল শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ টিউশন, পার্টটাইম চাকরি করে নিজের পড়াশোনার খরচ ও পরিবারের খরচ বহন করে। কিন্তু এই করোনা সংকটে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই টিউশন হারিয়ে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও অনেকে কাজ হারিয়েছে। তাহলে এ পরিস্থিতিতে কিভাবে একজন শিক্ষার্থী প্রতি মাসে শুধু ডাটা কিনতে ২০০০/২৫০০ টাকা খরচ করবে? বাংলাদেশের ৪৫ ভাগ গ্রামে এখনও বিদ্যুৎ সুবিধা নাই। অধিকাংশ গ্রামেই নেটওয়ার্ক খুবই দুর্বল। আবার সব শিক্ষার্থীদের স্মার্টফোনই নেই। ফলে বাস্তবতা অনুযায়ী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস চালু করার কোন পরিস্থিতি নেই। সেক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাস চালু করতে হলে সকল শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে ডিভাইস ও ডাটা কেনার জন্য আর্থিক বরাদ্দ, নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা উন্নত করা, পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। অনলাইন ক্লাস চালু রাখলে অবশ্যই সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের পরিপূরক আয়োজন করতে হবে। এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অনলাইন ক্লাস কখনও স্বাভাবিক ক্লাসের বিকল্প হতে পারে না। কারণ জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীর যে পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়া দরকার হয় তা অনলাইনে সম্ভব নয়। ফলে অনলাইন ক্লাস এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে নেয়া হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে এ সকল অনলাইন ক্লাসের পরিপূরক ক্লাস নিতে হবে। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেস ভাড়া নিয়ে ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় অধিকাংশ ছাত্ররা মেসে থাকে। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্ররা মেসে না থাকলেও মেস মালিকরা প্রতিনিয়ত ভাড়ার জন্য ছাত্রদের চাপ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি ৩/৪ মাসের মেস ভাড়া না দিতে পারায় বাড়ির মালিক শিক্ষার্থীদের মালপত্র সহ সার্টিফিকেট ও ফেলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এ সংকট মোকাবিলায় এসময়ে মেস ভাড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের যাতে কোনরকম চাপ, ভয়-ভীতি, নিপীড়ন না করা হয় তার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন ও অর্থ বরাদ্দের দাবি সর্বমহলে উঠেছিল। কিন্তু আমরা দেখলাম সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হল না। এমতাবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ লক্ষ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের লক্ষ্যে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ বাস্তবায়নে আপনি যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করি। দাবিসমূহ :
পর্যাপ্ত আয়োজনবিহীন অনলাইন ক্লাস বন্ধ করতে হবে অথবা সকল শিক্ষার্থীদের ডাটা চার্জ প্রদান, নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান, ডিভাইস প্রদান সহ অন্যান্য আয়োজন নিশ্চিত করে অনলাইন ক্লাস নিতে হবে। মেস ভাড়া মওকুফে রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন ও অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। ৩. চলতি বছরের বেতন ফি মওকুফ কর। বিজ্ঞপ্তি