কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেছেন, নোবেল করোনাভাইরাস একটি বৈশি^ক মহামারী। সারা বিশে^ এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে মৃত্যুর মিছিল চলছে। এর প্রাদুর্ভাব থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে সারাদেশে সরকারী ভাবে বিভিন্ন বাধা নিষেধ জারি করেছেন। করোনা মহামারী থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের সবাইকে সরকারী নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। এই ভাইরাসকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ সে ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে এই মহামারী সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে, তখন পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাবে। তিনি আরো বলেন, করোনা থেকে জনগণকে সচেতন ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার জন্য সিলেট জেলা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত সকল থানা পুলিশ দিনরাত নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রতিদিন জেলা পুলিশের উদ্যোগে সচেতনতা মূলক কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার পাশাপাশি সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী যাতে করে জনসাধারণ লকডাউন মেনে চলেন এজন্য মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সিলেটের সকল গুরুত্বপূর্ণ থানা এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে মোবাইল কোর্টে জেল-জরিমানা এবং বাজার মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার ও প্রবাস ফেরতদের হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে পুলিশের কঠোর নজরদারী বৃদ্ধি করা হয়েছে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছি। সিলেটের মানুষ যাতে করে প্রাণঘাতী এ মহামারী থেকে রক্ষা পেতে পারেন এজন্য লকডাউন মেনে অতি প্রয়োজনীয় কাজ ছাড়া যাতে করে কেউ ঘর থেকে বের হতে না পারেন এজন্য পুলিশ সর্বদা তৎপর রয়েছে। কেউ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে জনগণের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি এই দুর্যোগ মুুহূর্তে সরকারের পাশাপাশি জেলা পুলিশ এবং জেলার অধিনস্থ সকল থানা পুলিশ ঘরবন্দী, অসহায়, দিনমজুর মানুষের হাতে সাধ্য অনুযায়ী খাদ্য তুলে দেয়ার জন্য খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে যাচ্ছে। পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম আরো বলেন, সরকারী নির্দেশনা মেনে এখন থেকে সিলেট জেলায় কোন ধরনের গণজমায়েত করে কেউ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করতে পারবেন না। বাড়িতে বাড়িতে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খাদ্য পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। এ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসন সহযোগিতা করে যাবে। প্রয়োজনে দানশীল ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন থানা পুলিশের কাছে তাদের অনুদানের খাদ্য সামগ্রী দিতে পারেন সেটা আমরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দেব। তিনি সবাইকে সরকারী নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান, অন্যথায় এখন থেকে পুলিশ আরো কঠোর হবে। পুলিশ সুপার বুধবার বিকেল ৩টায় কানাইঘাট থানা পুলিশের উদ্যোগে কঠোর সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দারুল মাদ্রাসা মাঠে ৬০টি অসহায়-হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, ভোজ্য তৈল বিতরণ কালে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। এছাড়া পুলিশ সুপার কানাইঘাটের বেদ পল্লী এবং পৌরসভার রায়গড় গ্রামের বেশ কয়েকটি দরিদ্র পরিবারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন। পরবর্তীতে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সব মিলিয়ে ৫’শত পরিবারে এসব খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দিবে টীম কানাইঘাট থানার সদস্যরা। খাদ্য সামগ্রী বিতরণকালে পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম’র সাথে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দক্ষিণ ইমাম মোহাম্মদ সাদিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর হেডকোয়ার্টার লুৎফুর রহমান, কানাইঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আব্দুল করিম, সিলেট প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ও কানাইঘাট প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এম.এ হান্নান, পৌর মেয়র নিজাম উদ্দিন, কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুদ্দোহা পিপিএম, ওসি তদন্ত আনোয়ার জাহিদ, দারুল মাদ্রাসার নায়েবে মুহতামিম মাও. আলিমুদ্দীন দুর্লভপুরী, কানাইঘাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন সহ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ প্রমুখ। থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম জানিয়েছেন, আজ প্রায় দেড়শ পরিবারের পুলিশ সুপার স্যার খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। পর্যায়ক্রমে উপজেলার একেবারে অসহায় দরিদ্রদের চিহ্নিত করে আমরা আরো সাড়ে ৩’শ পরিবারে খাদ্য সামগ্রী বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিবো। তিনি বলেন, পুলিশ তার সাধ্যনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু আমাদের শ্রমজীবি ও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। আমি বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানাবো আপনারা এই দুর্যোগ মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবেন।