কাজিরবাজার ডেস্ক :
চীন থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। মারণ থাবা বাসাতে থাকে একের পর এক দেশে। তবে সবচেয়ে ভয়াল থাবা বসায় ইউরোপে। ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যান করোনায় আক্রান্ত হয়ে। করোনার কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে লকডাউন আর সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে রুখা যায় করোনা।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২ হাজার চারশ মানুষ মারা গেছেন স্পেনে। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লকডাউন থাকায় করোনার সংক্রমণ কমেছে। আবার মৃত্যুর সংখ্যাও তৃতীয় দিনের মতো কমেছে স্পেনে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ শনিবার বলেছেন, আমরা টানেলের শেষে আলো দেখতে শুরু করছি।
চলা-ফেরায় কড়া নিয়ম চালু থাকায় ইউরোপের আরো দুই দেশ, ফ্রান্স ও ইতালিতেও মৃত্যুর সংখ্যাটি কমে এসেছে। ইতালিতেও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। শুক্রবার দেশটিতে মারা যান সাতশ ৬৬ জন মানুষ। আর শনিবার মারা যান ছয়শ ৮১ জন মানুষ।
করোনার মারণ থাবায় স্পেনে ১২ হাজার চারশ ১৮ জন মানুষ মারা যান। ইতালিতে মোট মারা গেছেন ১৫ হাজার তিনশ ৬২ জন। আর ফ্রান্সে মারা গেছেন সাত হাজার পাঁচশ ৬০ জন। ধারণা করা হচ্ছে, লকডাউনের কারণেই তিন দেশে কমেছে ম্ত্যৃুর সংখ্যা। তাই কড়াকাড়ি বিধি-নিষেধ আরো বাড়ানো হতে পারে বলে জানিয়েছে দেশ তিনটির কর্তৃপক্ষ। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন আরো বাড়ানো চিন্তা করছেন।
এদিকে, করোনা ঠেকাতে কড়া বিধি-নিষেধ আরো কড়া হয়েছে ইতালিতে। তাই করোনার সংক্রমণ কমে এসেছে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, মহামারির তীব্র পর্যায়টি এপ্রিলের মাঝামাঝি নাগাদ শেষ হয়ে যাবে।
ইতালির ট্রেন্তিনো-দক্ষিণ টাইরোলের উত্তরাঞ্চলটিতে এপ্রিল ৬ তারিখে জরুরি অবস্থা শেষ হবে। বেসিলিকাটা, লিগুরিয়া ও আম্বরিয়ার মধ্য অঞ্চলগুলোর জরুরি অবস্থা শেষ হবে এপ্রিলের ৭ তারিখে। লাজিও অঞ্চলে করোনা নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা শেষ হবে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে। ভেনেটো ও পাইডমন্টের উত্তর অঞ্চলগুলোতে, যেখানে করোনা রোগী প্রথম সনাক্ত হয়; সেখানে ১৪ ও ১৫ এপ্রিলের মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইতালির লম্বার্ডি এবং এর প্রশাসনিক কেন্দ্র মিলানোতে সবচেয়ে ভয়াবহ থাবা বসিয়েছে করোনা। তবে এপ্রিলের ২২ তারিখের মধ্যে করোনার নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা শেষ হবে সেখানে। এমিলিয়া-রোমগনার সংলগ্ন অঞ্চল, যেখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক করোনা রোগী পাওয়া যায়, সেখানে ২৮ এপ্রিলের পর নতুন কোনো করোনা রোগী পাওয়া যাবে না। আর মে মাসের ৫ তারিখে করোনা মুক্ত হবে ইতালির তস্ক্যানা নামক অঞ্চল।
দেশটির একটি ইনস্টিটিউটটি মহামারি সংক্রান্ত সব ধরনের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে একটি অ্যালগরিদমের ওপর ভিত্তি করে এই পূর্বাভাস দিয়েছে। নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা, সুস্থ ও মারা যাওয়ার সংখ্যা বিবেচনা করে তারা এই ধরনের পূর্বাভাস দিয়েছে।
তবে ইতালির কোনো বাসিন্দা যদি বাড়ির বাইরে বের হন; তাহলে ফেসমাস্ক পরে বাড়ির বাইরে যেতে হয়। কোনো বাজারে যেতে হলেও নিরাপত্তার কথা ভেবে মাস্ক পরে যেতে বলা হয়েছে দেশটির পক্ষ থেকে। তবে দেশটিতে এখনো লকডাউন রয়েছে। জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারে না
ফ্রান্সেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। শুক্রবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ২৩ হাজার ৬০ জন। আর শনিবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হলেন সাত হাজার সাতশ ৮৮ জন। মৃতের সংখ্যাও কমেছে। শুক্রবার দেশটিতে এক হাজার একশ ২০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর শনিবার মারা যান এক হাজার ৫৩ জন। ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ জীবন বাঁচানোর জন্য অসাধারণ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আর কয়েক সপ্তাহ ধরে লকডাউনে রয়েছে দেশটি।