স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিকে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলাও একটা যুদ্ধ। এ যুদ্ধে আপনার দায়িত্ব ঘরে থাকা। আমরা সবার প্রচেষ্টায় এ যুদ্ধে জয়ী হব।’ বৈশ্বিক মহামারি রূপ পাওয়া কভিড-১৯ এ অবস্থায় ৩১ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি আতঙ্কিত না হয়ে এই সংকটকালে সবাইকে সংবেদনশীল ও সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর চার দফা পরামর্শ এরই মধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। নতুন ৩১ দফা নির্দেশনায় করোনাভাইরাস সম্পর্কিত চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণ এবং সচেতনতা কার্যক্রম বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া এবং কেউ যেন সহায়তার বাইরে না থাকে সে ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ খাদ্য উৎপাদনসহ সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণের ওপর জোর দেন তিনি। দেশে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ থাকলেও খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেন। নতুন ৩১ দফা নির্দেশনায় সবাইকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ও করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে। চিকিৎসাসংশ্লিষ্ট সবার জন্য পিপিই নিশ্চিত করতে বলেছেন তিনি। নিয়মিত হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও বলা হয়েছে এই নির্দেশনায়। আবার যাঁরা যাঁরা হোম কোয়ারেন্টিনে বা আইসোলেশনে আছেন, তাঁদের প্রতি মানবিক আচরণ করার বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেন স্থবির না হয়, সে বিষয়ে যথাযথ নজর দিতে হবে। দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক যেন অভুক্ত না থাকে। তাদের সাহায্য করতে হবে। খেটে খাওয়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য অতিরিক্ত তালিকা তৈরি করতে হবে। সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ নজর রাখাসহ ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এ জাতীয় সংকটকালে বাজারে প্রভাব পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাজার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, সরবরাহব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। যাতে বাজার চালু থাকে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। জনস্বার্থে বাংলা নববর্ষের সব অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তটিও সময়োপযোগী।
প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা কাজে লাগানো গেলে বাংলাদেশ শুধু যে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সক্ষম হবে তা নয়, রাষ্ট্র হিসেবে জনকল্যাণে বড় ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি।