কাজিরবাজার ডেস্ক :
কারগারে বন্দিদের মধ্যে যাতে করোনাভাইরাস ছড়াতে না পারে, সে জন্য তাদের সঙ্গে স্বজন কিংবা অন্য কারও সাক্ষাৎ বন্ধ করা হচ্ছে। কারা অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ইতিমধ্যে কিছু কারাগারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সাক্ষাতের সুযোগ। আর কোনো কোনো কারাগারে সীমিত সংখ্যক আবেদনকারীর সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আগে সাক্ষাৎপ্রার্থীকে জীবাণুমুক্ত নিশ্চিত করা হয়। তারপর পাঁচ মিনিটের জন্য বন্দির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে দেশে দেশে লকডাইন চলছে। বাংলাদেশে লকডাউন ঘোষণা না হলেও এখন দেশের প্রায় সব মানুষ যার যার ঘরে অবস্থান করছে। সব ধরনের পরিবহন বন্ধ। দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত ১০ দিনের সাধারণ ছুটিতে। ফলে দেশজুড়ে এক অলৌকিক নির্জন-নীরবতা চলছে।
দেশের কারাগারগুলোতে অবস্থান করছে হাজার হাজার বন্দি। প্রতিদিন হাজারো মানুষ তাদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে ভিড় জমান। তাই করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কা সেখানে থেকে যায়।
কয়েকটি কারাগারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করেনা প্রার্দুভাবের ঢেউ যাতে বন্দিদের মধ্যে না ছড়ায় সে জন্য কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ‘লকডাউনের’ কারণে কারাগারগুলোতে সাক্ষাৎপ্রার্থীর সংখ্যা অনেকটাই কম। কোথাও কোথাও জরুরি প্রয়োজনে কেউ ঝুঁকি নিয়ে তাদের স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন।
কারাগার সূত্রগুলো বলছে, এই সীমিত সুযোগও সামনে বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে কারাগারের টেলিফোন বুথ থেকে কয়েদি বা হাজতি বন্দিরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলতে পারবেন। তবে জঙ্গি, চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার আসামিরা এই সুবিধা পাবেন না।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘এ্ সময়ে বন্দিদের একেবারে জরুরি প্রয়োজন না হলে সাক্ষাৎ করার সুযোগ নেই। আমাদের কারাগারে টেলিফোনের বুথ রয়েছে। সেখানে চাইলে যেকোনো হাজতি বা কয়েদি তাদের স্বজনদের সঙ্গে পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারবেন। আর একান্ত জরুরি প্রয়োজনে বন্দীরা তাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানের সঙ্গে বা মামলার আইনগত বিষয় নিয়ে পাঁচ মিনিট কথা বলতে পারবেন।
বৃহস্পতিবার এই কারাগারে ১০-১৫ জন এসেছিলেন তাদের বন্দি স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে। জেলার মো. মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাদের জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছি।’
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে দেশের অন্য কারাগারগুলোর তুলনায় বন্দির সংখ্যা কম। নতুন বন্দি যারা এখানে আসবে তাদের নতুন ওয়ার্ডে রাখা হবে বলে জানান জেলার ফরিদুর রহমান রুবেল। নতুন বন্দির মাধ্যমে যাতে কারাগারে করোনাভাইরাস সংক্রমিত না হয় সে জন্য এ ব্যবস্থা।
জেলার বলেন, তার কারাগারে বন্দির সংখ্যা কিছুটা কম বলে তারা নতুন বন্দিদের আলাদা রাখতে পারবেন। কিন্তু দেশের অন্য কারাগারগুলোতে বন্দির আধিক্যের কারণে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। আর এখন বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসা স্বজনদের সংখ্যা অনেক কম। যারা এসেছেন তাদের জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছি।’
দেশে বেশির ভাগ কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি বন্দি। এমনকি কোথাও কোথাও ১০ গুণ বন্দি রয়েছে, এমন খবরও সংবাদমাধ্যমে আসে। এ ধরনের কারাগারে সমস্যা অনেক বেশি। সেসব কারাগারে সাক্ষাৎকারীদের বিষয়ে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার নেছার আলম বলেন, কার কাছ থেকে ভাইরাস ছড়াবে সেটা চিহ্নিত করা মুশকিল। তাই সচেতনতাই এখন বড় অস্ত্র। আমরা সচেতনতামূলক কাজ করছি। নতুন বন্দি ও বন্দিদের স্বজনরা এলে তাদের জীবাণুমুক্ত করে সাক্ষাতের সুযোগ দিচ্ছি।’
কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে এই সময়ে সাক্ষাতের সুযোগ রাখা হয়নি। জেলার নাসির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের কারাগারের বন্দিদের স্বজনরা দেখা করার সুযোগ নেই। (বৃহস্পতিবার) এখন পর্যন্ত কেউ আসেনি সাক্ষাৎ করার জন্য।’
কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ সীমিত করা হয়েছে বলে জানান কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, ‘দেখা-সাক্ষাৎ খুব সীমিত করা হয়েছে। আবার মাদারীপুর কারাগারে অনেক বিদেশি (প্রবাসী) থাকায় সেখানে সাক্ষাৎ বন্ধ করা হয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ধাপে ধাপে বন্ধ করা হবে সাক্ষাতের বিষয়টি। একবারে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ করলে বন্দিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে।’