মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
করোনা ভাইরাস সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কায় গত দুইদিনে মৌলভীবাজারের জেলায় পৃথক এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রবাস ফেরত যুবকদের বিয়ের আসর পন্ড করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমান আদায় করেছে ভ্রাম্যমান আদালত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার পৌর শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে গ্রীস ফেরত যুবককে বিয়ের আসর থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে ভ্রাম্যমান আদালত করোনা ভাইরাস সংক্রামণ হতে পারে জেনেও বিয়ের আয়োজন করায় কনের বাবা এবং কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজারসহ মোট ১ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
জানা যায়, সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের এক যুবক গ্রীস থেকে দেশে ফিরেন চলতি মাসের ৮ মার্চ। তার মধ্য ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন না মেনে ১৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বরযাত্রী নিয়ে বিয়ের আসরে বসেন শহরের পৌর কমিউনিটি সেন্টারে।
খবর পেয়ে সেখানে হাজির হয়ে প্রশাসন বিয়ে বন্ধ করে দেন। একই সাথে মেয়ে পক্ষকে ৫০ হাজার এবং কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজারকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসময় বরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
মৌলভীবাজার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নেছার উদ্দিন জানান, খবর পেয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে পৌর কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে বিয়ের আসর থেকে বিয়ে বন্ধ করে বরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজারকে সতর্ক করা হয় যেনো এমন আয়োজন পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।
এদিকে কুলাউড়া উপজেলায় বিয়ের আসরে থেকে দুবাই প্রবাসী রিয়াদ উদ্দিনকে (৩০) ওমান ফেরত এক প্রবাসীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় বর-কনেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার দুপুরে পৃথক ওই অভিযানে দুই প্রবাসীকে নগদ অর্থদন্ড প্রদান করেন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার কাদিপুর ইউনিয়নের ছকাপন গ্রামের বাসিন্দা হাজি আনসার আলীর ছেলে রিয়াদ উদ্দিন দুবাই থেকে দেশে ফেরেন। ওই সময় থেকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত তার বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টানে থাকার কথা ছিল। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন না মেনে বিয়ের প্রস্তুতি নেন এবং প্রকাশ্য ঘোরাফেরা করতে থাকেন। একপর্যায়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিয়ে করেন একই উপজেলার ভূকশিমইল ইউনিয়নের শশারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা জলিল আহমদের কন্যা ইপা বেগমকে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের স্থানীয় সাত্তার কমিউিনিটি সেন্টারে বিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কিন্তু কোয়ারেন্টাইন না মেনে কমিউনিটি সেন্টারে বরযাত্রী নিয়ে বিয়ের আসরে বসেন ওই প্রবাসী। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি জানতে পেরে সেন্টারে গিয়ে হাজির হন। পরে বিয়ের আসর পন্ড করে দিয়ে বর রিয়াদ উদ্দিনকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি বর-কনেকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়।
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, উপজেলার কাদিরপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ভাটেরা ইউনিয়নে ওমান থেকে দেশে ফিরেছেন। সরকারি আদেশ অনুযায়ী ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও তার মধ্যে একজন (বৃহস্পতিবার) বিয়ের আসরে বসেন আর অপরজন ওমান প্রবাসী আজ শুক্রবার বিয়ের আয়োজন করেছেন। তাদের উভয়কে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে বিয়ের আয়োজন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বর-কনেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে- বুধবার (১৮মার্চ) দুপুরে মৌলভীবাজার শহরে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর বিবাহ স্থগিত করেন পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার)। ওই অনুষ্ঠান স্থগিত করে নিয়ম অনুযায়ী হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়েছেন ওই প্রবাসীকে।
২/৩দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে অনেক আগ থেকেই বিবাহের নির্ধারিত তারিখ ঠিক করে ছিলেন ওই প্রবাসী।
বুধবার দুপুরে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলে তার আগে খবর পেয়ে পুলিশ সুপারের বর-কনের আত্মীয়স্বজনেরা ডেকে বিয়ে বন্ধ করে দেন।
নির্দেশনা অনুযায়ী বিদেশ থেকে এসে হোম কোয়ারেন্টাইনে না থেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার দিনক্ষণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওই বরের। তার আগে খবর পেয়ে পুলিশ সুপার বিয়ে বন্ধ করেন।
মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো.ফারুকব আহমেদ পিপিএম (বার) বলেন,আমরা বর্তমান পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলি। প্রবাসী যুবক আমাদের নির্দেশনায় তারা তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। আপাতত বিয়ের কাজ স্থগিত। তিনি আরও বলেন,আমরা মানুষকে সচেতন করতে কাজ করে যাচ্ছি। করোনা ভাইরাস নিয়ে মানুষকে কাউন্সিলং করছি।
মৌলভীবাজার সিভিল সার্জন মো. তৌহিদ আহমদ বলেন, মৌলভীবাজার জেলায় মোট ২১৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন। তার মধ্যে প্রবাস ফেরত ২১৬ জন। ৪-৫ জন হলেন আত্মীয়স্বজন। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সংস্থার প্রতিদিনের এসব তথ্য।’
শ্রীমঙ্গল দুইটি সিনেমা হলকে জরিমানা আদায় করে বন্ধ : মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গল উপজেলার পর্যটন শহরের দুইটি সিনেমা হলকে জরিমানা করে বন্ধ কয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিকালে রাধানাথ সিনেমা হল ও ভিক্টোরিয়া সিনেমা হলকে জরিমানা আদায় বন্ধ করে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার ইউএনও মো. নজরুল ইসলাম এতথ্য নিশ্চিত করেন।