দেশে হোম কোয়ারেন্টাইন লোকের সংখ্যা বাড়ছে

34

কাজিরবাজার ডেস্ক :
করোনা ভাইরাস আতঙ্কে দেশে হোম কোয়ারেন্টাইন লোকের সংখ্যা বাড়ছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আট জেলায় ১৩২ বিদেশ ফেরত ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে মানিকগঞ্জে ১০৯ জন, নীলফামারীতে একজন, চট্টগ্রামে সাত, বরিশালের গৌরনদীতে চার, ঝালকাঠিতে চার, নেত্রকোনায় চার, জামালপুরে দুই ও কুড়িগ্রামে একজন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এদিকে ভয়াবহ করোনাভাইরাস আতঙ্কে শুক্রবার থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে যাতায়াতকারীদের নতুন করে ফরম পূরণ করতে হবে যাত্রীদের। এদিকে ভারতীয় সময় শুক্রবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে কোন পাসপোর্টধারী যাত্রী বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন ভারতীয় ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশনের ওসি সুমিত ম-ল। অন্যদিকে করোনা আতঙ্কে রাজশাহীতে বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক পর্যায়ে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসক হামিদুল হক। কুমিল্লার লাকসামে প্রতিদিনই বাড়ছে মাস্কের দাম। করোনাভাইরাস এড়াতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বরগুনার আমতলীতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত তিনদিনে মানিকগঞ্জের সাতটি উপজেলায় নতুন করে ৩০ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বিদেশ ফেরত লোকের সংখ্যা দাঁড়াল ১০৯ জনে। তাদের সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইনে (নিজ বাড়িতে) রাখা হয়েছে। তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ না থাকলেও বিদেশ থেকে আসার কারণে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলায় ১২ বেডের আইসোলেশন ইউনিট এবং কেয়ারজানিতে অবস্থিত আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ১০০ শয্যার কোয়ারেন্টাইন ইউনিট প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
নীলফামারী : নীলফামারীতে চীন থেকে ফেরত আসা ৩৫ ব্যক্তির মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইন শেষ হয়েছে ৩৪ জনের। বর্তমানে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন একজন। তারা সবাই শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া সদর আধুনিক হাসপাতালে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
চট্টগ্রাম : ইতালি থেকে চারদিন আগে চট্টগ্রামে আসা সাতজনকে রাখা হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। এর মধ্যে কয়েকজন নিজ থেকেই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী ১৫ দিন তারা নিজ বাসায় আইসোলেশনে থাকবেন। বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন শেখ ফজলে রাব্বি এ তথ্য জানান। এদিকে করোনাভাইরাস এড়াতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সকল ধরনের সভা সমাবেশ ও অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, বিদেশ ফেরত কিছু যাত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা ছাড়া চট্টগ্রামে করোনা সংক্রমিত কোন রোগী পাওয়া যায়নি।
ঝালকাঠি : রাজাপুরে বিদেশ ফেরত চারজনকে কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বুধবার সকাল থেকে তাদের নিজ ঘরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। সূত্র জানায়, সৌদি থেকে দু’জন, চীন থেকে একজন এবং ইতালি থেকে এক ব্যক্তি রাজাপুরের গ্রামের বাড়িতে আসেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। তবে তাদের শরীরে কোন ভাইরাস পাওয়া যায়নি। তারা চারজনই সুস্থ আছেন। এরপরেও তাদের নিজ ঘরে ১৪ দিনের জন্য কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
বরিশাল : গৌরনদীতে ইতালি প্রবাসী চার ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করা হয়েছে। তবে তাদের শরীরে এখন পর্যন্ত করোনার কোন উপসর্গ মেলেনি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চার প্রবাসী ২ মার্চ ইতালির মিলান থেকে ঢাকায় আসেন। এরপর তারা গৌরনদীর নিজ বাড়িতে যান। সেখানে ১০ মার্চের আগ পর্যন্ত তারা মানুষের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই মেলামেশা করেন। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ওই প্রবাসীদের সন্ধান পাওয়ার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ১০ মার্চ থেকে ওই চারজনকে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইন করেন।
নেত্রকোণা : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে নেত্রকোণায় বিদেশ ফেরত চার প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের দু’জনের বাড়ি নেত্রকোণা সদরে। অন্য দু’জনের বাড়ি কলমাকান্দা ও খালিয়াজুরীতে। এদের একজন চীনে এবং তিনজন ইতালিতে থাকেন। ওই চারজন গত মঙ্গল ও বুধবার দেশে ফেরেন। সিভিল সার্জন ডাঃ তাজুল ইসলাম খান জানান, চারজনই বর্তমানে সুস্থ, স্বাভাবিক।
জামালপুর : জামালপুরে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে বিদেশ ফেরত দুই পুরুষকে বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবেলা এবং জনগণকে সচেতন করতে জেলা প্রশাসককে সভাপতি ও সিভিল সার্জনকে সদস্য সচিব করে ১১ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণ সতর্কতায় বিদেশ ফেরত এক প্রবাসী বাংলাদেশীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গত ৮ মার্চ দুবাই থেকে দেশে এলে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুবাই ফেরত ওই ব্যক্তি সম্পূর্ণ সুস্থস্বাভাবিক রয়েছেন। তারপরও আমরা তাকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়েছি।
বেনাপোল : করোনাভাইরাসের কারণে শুক্রবার থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভারতে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ভারত সরকার। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ একপত্রের মাধ্যমে এ আদেশ জারি করে। বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের পুলিশ পরিদর্শক মহাসিন উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে এক নির্দেশনায় এ আদেশ জারি করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : করোনাভাইরাসের সতর্কতা হিসেবে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশে যাতায়তকারী যাত্রীদের নতুন করে একটি ফরম পূরণের মাধ্যমে উভয় দেশে প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক করেছে কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ওই ফরমে প্রত্যেক যাত্রীকে তাদের নাম, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর, পাসপোর্ট নম্বরসহ ১৫টি তথ্য দিতে হবে। এছাড়া দুই সপ্তাহের মধ্যে কোন কোন দেশ ভ্রমণ করেছেন, চীনে ভ্রমণ করে থাকলে কোন শহরে ছিলেন এসব তথ্যও দিতে হবে।
পঞ্চগড় : করোনাভাইরাসের আতঙ্কে ভারতের সিকিম রাজ্যের পর এবার ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সব ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারতীয় সরকার। শুক্রবার ভারতীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে বাংলাদেশী কোন পাসপোর্টধারী যাত্রী ভারতে প্রবেশ করতে পারবে না। এই নিষেধাজ্ঞা চলবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের বিপরীতে ফলবাড়ি ইমিগ্রেশনের ওসি সুমিত মন্ডল বলেন, ভারতীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর শুক্রবার বিকেল থেকে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সব স্থলবন্দরে বাংলাদেশী পর্যটকসহ বিদেশী পর্যটকদের ভারতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। আকস্মিক এই নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ ও ভারতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা বিপাকে পড়েছেন।
রাজশাহী : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিভাগীয় শহর রাজশাহীতে বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার। শিশু থেকে শুরু করে নারী-পুরুষ সবাই ব্যবহার করছেন মাস্ক। আবার মাস্কের সরবরাহও কমে গেছে। চাহিদা বেশি থাকায় বেড়েছে দামও। আগের তুলনায় দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহীর মানুষের উদ্বেগের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক হামিদুল হক। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনবহুল স্থান যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই উত্তম।
লাকসাম : দেশে করোনাভাইরাসে তিন রোগী শনাক্ত হওয়ার পর লাকসামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েছে মাস্কের দাম। প্রতিটি মাস্ক বিক্রি হয়েছে ১০০-১৫০ টাকা। কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বাজার থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।