জেড.এম.শামসুল :
সিলেটসহ সারা দেশে মশা-মাছি বাহিত রোগ-জীবাণুর বংশ বিস্তার করছে। অতীতের মতো দেশে ম্যালেরিয়া বর্তমানে ডেঙ্গুর মত মরণ ব্যাধির আবির্ভাব দেখা দিয়েছে। এ মরণ ব্যাধি ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার হাত থেকে রক্ষা পেতে মশা-মাছি বাহিত রোগ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে জনস্বাস্থ্য বিভাগে আলাদা ‘দফতর’ বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অতীব জরুরী হয়ে পড়ছে। ফলে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
মশার কামড়ে মরণ-ব্যাধি ডেঙ্গু জ্বরে সাধারণ মানুষ হতাহতের শিকার কম হননি। মশার কামড়ে সাধারণ মানুষ চার ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়। এ গুলোর মধ্যে অ্যাডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গুজ্বর, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস ও ইউলোফিবার বা হলুদ জ্বর ছাড়া ও বিভিন্ন রোগে ভোগতে হয়। চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বর সহ বিভিন্ন মশা-মাছি বাহিত ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এডিস মশাসহ অন্যান্য মশার উপদ্রব রোধ করতে ব্যর্থ হলে অবস্থা ভয়াবহ হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ শীতের শুরুতেই মশার উপদ্রব পরিলক্ষিত হচ্ছে, বছরের শুরুতে অতিরিক্ত জাত-বেজাত মশার উপদ্রবে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। প্রতিনিয়ত শিশু, বয়োবৃদ্ধ সহ নানান পেশার মানুষ মশার উপদ্রবের শিকার হচ্ছেন, নানান ধরনের জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বরং নতুন ভাবে কিউলেস্ক্র মশা যোগ হয়েছে।
স্মরণে রাখতে হবে, ২০১৯ সালে দেশময় মরণব্যাধি ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ও হতাহতের সংখ্যা কম নয়। তখন দেশের লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। তখনই প্রশাসন সহ সর্বস্তরে দেখা দেয় যত তাড়াহুড়া, নেয়া হয় মশার উপদ্রব থেকে রক্ষার শলা-পরামর্শ, নীতি-নির্ধারণ করতে আর্থিক ব্যয়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়। শেষ-মেশ কোন পরামর্শ কোন কাজে আসে না। ভাল কোন মশার ঔষধ ¯েপ্র করতে দায়িত্বপ্রাপ্তরা ব্যর্থ হন। এবারে ও কি মরণ ব্যাধি মশা বাহিত রোগে আক্রান্তের মুহূর্তে মশা-মাছি নিধন শুরু হবে।
সিলেট অঞ্চলের খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে ছোট-বড় টিলায় ঘেরা এ অঞ্চলে ঝোঁপ-জঙ্গলে ভরপুর। তাই এ অঞ্চলে জাত-বেজাত মশার উপদ্রব লেগে রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে মশা-মাছি বাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। এ অঞ্চলে ম্যালেরিয়া, কলেরা, টাইফয়েটসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানীর সংখ্যা কম নয়। সেই অতীতকাল থেকে সিলেট অঞ্চলে মশার ঔষধ ¯েপ্র করা হতো। এ ¯েপ্র করা ঔষধের কার্যকারিতা বছর গড়িয়ে যেতো। বিগত কয়েক যুগ থেকে সিলেট অঞ্চলের সীমান্ত এলাকার গ্রাম-গঞ্জে মশার ঔষধ ¯েপ্র না করায় সিলেট অঞ্চলে সব ধরনের মশা-মাছির উপদ্রব বেড়েছে। যা চলতি বছর ডেঙ্গু মশার উপদ্রব কম হয়নি। ডেঙ্গু মশার কামড়ে হতাহতের সংখ্যা কম নয়। মশা বাহিত রোগ-ব্যধির মধ্যে ম্যালেরিয়া সাময়িক ভাবে রোধ হলে ও ডেঙ্গু নামক ব্যাধির আতংকে জনসাধারণ চরম হতাশায় ভুগছেন। এ ব্যাধি রোধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্বাস্থ্য বিভাগ হিমশিম খাচ্ছেন। কয়েক যুগ পূর্বে আমাদের দেশে ম্যালেরিয়া নামক ব্যাধিতে প্রতি বছর হতাহতের সংখ্যা কম ছিল না। ম্যালেরিয়া ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে আসলেও ডেঙ্গু নামক এ ব্যাধিতে আক্রান্তের কারণে হতাহতের সংখা কম নয়। ডেঙ্গু নামক ব্যাধি দিনদিন বিস্তার লাভ করছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে শুধু ২০১৯ এর জানুয়ারী মাস থেকে সারা দেশে ডেঙ্গু ব্যাধিতে প্রায় লক্ষাধিক আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত অসংখ্যক রোগী মারা ও গেছেন। মশা বাহিত রোগ আমাদের দেশে হুমকি হয়ে উঠছে। অনেকের ধারণা ছিল, শহরে এডিস ইজিপটাই প্রজাতির মশা ডেঙ্গু রোগ ছড়ায়। বর্তমানে এডিস অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মশা গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়াছে। জনস্বাস্থ্যবিদ ও কীট তত্ত্ববিদদের মতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, গোদ, জাপানিজ এনকেফালাইটিস সহ অনেক রোগের বাহক মশা। শীতের মৌসুমে সারা দেশে মশার উপদ্রব বেড়ে যায়। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমলেও নিশ্চিত হওয়া যাবে না যে, ডেঙ্গু মশাসহ অন্যান্য মশার প্রাদর্ভাব বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না। শীতের আগমনের সাথে ম্যালেরিয়াসহ অন্যান্য মশা-মাছি বাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আশংকা বিরাজ করছে।
প্রতিবছর দেশে মশা-মাছি বাহিত নানা রোগে লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়ে থাকে। মশা-মাছি সংক্রান্ত রোগ সমূহ নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে কোন প্রতিষ্ঠানের তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ সব নিয়ন্ত্রণ করার কোন ব্যবস্থাই নেই। তবে মশক নিবারণি দফতর থাকলেও কোন কার্য়ক্রম দেখা যায় না।
এককালে দেশে ম্যালেরিয়া প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে ম্যালেরিয়া ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। এ প্রতিষ্ঠানের একমাত্র কাজ ছিল, দেশে মশা নিধন করা। তখন দেশের সীমান্ত এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব ছিল খুবই বেশী, তাই ম্যালেরিয়ার মশা নিধনসহ মশা-মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষার লক্ষ্যে শীত-মৌসমে বাধ্যতামূলক মশার ঔষধ ¯েপ্র মারা হতো। মশার ঔষধ ¯েপ্র করার আগের দিন গ্রামের সকলকে বলে দেয়া হতো ইউনিয়ন পরিষদের লোকজন আসবে, সবার বাড়ীর ঘর গুলোতে এবং বাড়ীর আশ-পাশ ঝোঁপ জঙ্গলে যেন মশার ঔষধ ¯েপ্র করানো হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের মেম্বার নিজে উপস্থিত থেকে গ্রামের প্রতিটি ঘর-বাড়ীতে ঔষধ ¯েপ্র করা হতো। তখনকার সময় ¯েপ্র মারার দিন একটা মিনি উৎসবে রূপ নিত। সকাল ৮টার ভিতর খাওয়া-দাওয়ার পালা শেষ করতে হতো। স্কুলে যাওয়া বারণ ছিল। কারণ ঔষধ ¯েপ্র করার দিন যার-যার বিছানা পত্র নিজে টিক-টাক করে রাখতে হতো। আমার মনে হয়, ১৯৭৫ এর পর থেকে গ্রামে-গঞ্জে সীমান্ত এলাকায় মশার ঔষধের ¯েপ্র করা বন্ধ হয়ে পড়ে। মশা-মাছির উপদ্রব ও মশা-মাছি বাহিত রোগের বিস্তার কম হতো। সদ্য-স্বাধীন দেশে বাংলার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসন আমলে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সারাদেশে মশা-মাছির উপদ্রব এবং মশা-মাঁিছ বাহিত রোগ-জীবাণু থেকে রক্ষায় দেশব্যাপী ¯েপ্র মেরে মশা-মাছির বংশ নিধনের চেষ্টা করা হতো। গত কয়েক বছর পূর্বে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মশারি বিতরন করা হয়। এখনও সীমান্ত এলাকায় মশা বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বিরাজমান। তবে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসলে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে।
বিগত কয়েক বছর থেকে দেশের কোথায় ও মশার ঔষধ ¯েপ্র-করা হয়না। শুধু শহর সমুহে নামে মাত্র মশা-মাঁিছর ঐষধ ¯েপ্র করা হয়। তাহা শুধু কাগজে-কলমে, ফটো-সেশন লোক দেখানোর জন্যে। গ্রাম-গঞ্জ তা থেকে বঞ্চিত থাকে। অথচ‘‘( গ্রাম বাঁচলে-দেশ বাঁচবে‘‘),মনে রাখতে হবে গ্রামের মেহনতি মানুষ শহরের মানুষের খাদ্য যোগিয়ে থাকে। তাই গ্রামের মানুষের সার্বিক উন্নয়নই দেশ-জাতির উন্নয়ন।
বিশেষঞ্জদের মতে; আমাদের দেশ বর্তমানে আবহাওয়া, তাপমাত্রা আদ্রতা,আকাশ মেগলা,মাঝে-মধ্যে বৃষ্টি পাতের কারনে ডেঙ্গু মশা সহ অন্যান্য মশার বিস্তার লাভ করতে পারে, সেহেতু মশা-জাতীয়ও রোগ ব্যধি থেকে রক্ষায় আগে-ভাগে প্রস্তুতি চালাতে হবে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মশা-মাছি রোধে প্রদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংস্লিষ্ট বিভাগের প্রতি জোর দিয়েছেন।
মশা বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রনে আনার জন্যে মশা নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্টান করা সময়ের দাবিতে পরিনত হয়ে উঠছে।