সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ॥ হিরণ মাহমুদ নিপু ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার দাবি

37

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার দাবি করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. কাইয়ুম চৌধুরী আনাছ। দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় নিপু ও তার সহযোগীদের হামলায় গুরুতর আহত হয়ে তাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
সোমবার দুপুরে সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বালুচর এলাকায় তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করেন। গত ২৬ মার্চ চাঁদা না দেওয়ার কারণে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বহিষ্কৃত সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু ও তার সহযোগীদের হামলায় তিনি মারাত্মক আহত হন। পরে তিনি ওসমানী হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসা নিয়ে ফিরেছেন। তিনি নিপুসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছেন। তবে এখন পর্যন্ত আসামি গ্রেফতার হলেও বাকিরা ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে আনাছ বলেন, ‘বালুচর এলাকায় বর্তমানে সকল অপরাধের গডফাদার সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বহিস্কৃত সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু। নিপু ও তার সহযোগীরা ওই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অপহরণ কর্মকান্ড ছাড়াও মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়েও তাদের চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পাইনি। দীর্ঘদিন নিপুর সহযোগী আলম, সাইদুল ইসলাম বাহার ও গিয়াস-এর নিকট ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা চাঁদা দিতে বাধ্য হয়েছি। বালুচর এলাকার এমন কোনো ব্যবসায়ী নেই যাদের নিকট থেকে নিপু চাঁদা আদায় করে না। বাসা ও দেওয়াল নির্মাণ করতে গেলেও তাকে চাঁদা দিতে হয়। ভয়ে কেউ কখনও প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ করার সাহস পায় না। সম্প্রতি আমি চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৬ মার্চ রাত আনুমানিক ১০টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পথে মুছব্বির মিয়ার মার্কেটের সামনে নিপু ও তার সহযোগীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার উপর হামলা চালায়। আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায়, পিঠে, হাতে বিভিন্ন জায়গায় কোপায়। রক্তাক্ত জখম অবস্থায় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে আমাকে ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ সময় তারা আমার পকেট থেকে নগদ ১৯ হাজার টাকা, স্যামসাং জে-সেভেন ও জে-টু মডেলের দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ওসমানী হাসপাতালের ১১নং ওয়ার্ডে ভর্তি থাকাবস্থায় গত ২৮ মার্চ আমি শাহপরাণ থানায় একটি অভিযোগ প্রেরণ করলে পুলিশ মামলা নিতে অনীহা প্রকাশ করে।
বাধ্য হয়ে গত ২ এপ্রিল সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম আদালত বরাবরে আমি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। আদালত মামলাটি গ্রহণ করার জন্য শাহপরাণ থানা পুলিশকে নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ এপ্রিল শাহপরাণ থানায় মামলাটি রুজু হয়। মামলা নং ০৬। মামলায় মোট ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২/৩ জনকে আসামি করি। নিপু ছাড়াও এ মামলার অন্য আসামিরা হলো : বালুচর এলাকার আলম মিয়া (৪৫), সাইদুল ইসলাম বাহার (২৩), বোরহান মিয়া (২০), ঝুনুন মিয়া (৩০), সামছু মিয়া (৪০), শাহাব আহমদ (২৮), জুয়েল মিয়া (২৭), সবুজ ওরফে এন্ডিং সবুজ (৩০), মো. গিয়াস উদ্দিন (৪০) এবং কাওছার (২৬)।
তিনি বলেন, মামলা দায়েরের পর শুধুমাত্র একজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে নিপু ক্ষিপ্ত হয়ে মামলা তুলে নিতে আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। গত ৯ এপ্রিল সন্ধ্যায় নিপুর নেতৃত্বে তার সহযোগীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমার বাড়িতে গিয়ে আমাকে খুঁজতে থাকে। আমাকে না পেয়ে পরিবারের লোকজনকে হুমকি দিয়ে বলে দায়েরকৃত মামলা তুলে না নিলে তারা আমাকে খুন করবে। এমনকি আমার পরিবারের কেউই রেহাই পাবে না। এই ঘটনায় আমি বাদী হয়ে শাহপরাণ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি। যার নং ৫০১। নিপু ও তার সহযোগীদের মারমুখী আচরণ ও হুমকিতে আমি এবং আমার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সে আবারও যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে।’
তিনি বলেন, নিপুর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। যার বিরুদ্ধে এতো অভিযোগ, এত মামলা তারপরও পুলিশ কেনো তাকে গ্রেফতার করছে না, এমন প্রশ্ন বৃহত্তর বালুচর ও টুলটিকর ইউনিয়নবাসীর সাধারণ মানুষের মুখে মুখে। তাই নিপুসহ তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন মহল ও সরকার দলীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আবু সুফিয়ান চৌধুরী, আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাজু আহমেদ, শাহরিয়ার, ফাহিম চৌধুরী, মুজাহীদ, শুভ, এনামুল, শাহরিয়ার হোসেন ও এহসানুল হক তমাল।