চীন হংকং জাপান ও ইরাকে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা ॥ করোনা আতঙ্কে ইরানে জুম্মার নামাজ বন্ধ

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চীনে সবশেষ হিসেব অনুযায়ী প্রাণঘাতী নোবেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮২৪। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ২৭ শ’ ৭৮ জনের। এত মৃত্যু ও আক্রান্তের মধ্যেও হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে সারিয়ে তুলেছে ৩৬ হাজার ১১৭ রোগীকে। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য অধিদফতর। শুধু বৃহস্পতিবারই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ৩ হাজার ৬২২ জন। এদিকে হংকংয়ে ১৮ কোটি স্কুল শিক্ষার্থীকে টেলিভিশনে পাঠ দিচ্ছেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া ইরান সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে শুক্রবার জুম্মার নামাজ বাতিল ঘোষণা করে।
বিশ্বব্যাপী দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দেশের সংখ্যা। শেষ খবর পর্যন্ত বিশ্বের ৫৩ দেশে ছড়িয়েছে এ ভাইরাস। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে এখনই কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপ না নেয়া গেলে বিশ্বজুড়ে এর প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস গেব্রিয়েসাস। ভাইরাসটি ‘নির্ণায়ক বিন্দুতে’ পৌঁছেছে এবং এর ‘মহামারী হয়ে ওঠার আশঙ্কা’ রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের একের পর এক পদক্ষেপের মধ্যেই তেদ্রোস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারগুলোকে দ্রুত ও আরও জরুরী পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন এ পর্যায়ে ভাইরাসটি এখন চীনের বাইরের দেশগুলোতে হু হু করে ছড়িয়ে পড়ছে। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো চীনের চেয়ে দেশটির বাইরে বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চীনের ভেতর ভাইরাসটিকে ‘বেঁধে রাখা’ সম্ভব না হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন চিকিৎসা উপকরণের মজুদ বাড়াচ্ছে; বিশ্লেষকরা বিশ্বজুড়ে নতুন অর্থনৈতিক মন্দারও আশঙ্কা করছেন।
কয়েকদিন ধরে ইরান ও ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ইরানের নারী ও পরিবার বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাসুমে এবতেকারও আছেন। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ নাইজেরিয়াসহ অন্তত নতুন ১০ দেশে ভাইরাসে আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গেছে। তেদ্রোস বলেন, (চীন ছাড়া) বাকি পৃথিবীতে যা ঘটছে, তা নিয়েই এখন আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা এখন এমন এক সংবেদনশীল পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, সংক্রমণ পরিস্থিতি যে কোন দিকে যেতে পারে, নির্ভর করছে কিভাবে তা আমরা মোকাবেলা করব।
ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এরই মধ্যে ৮৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বিশ্বের বাকি সব মহাদেশে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চীনসহ প্রায় অর্ধশত দেশে আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। বিশ্বে মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে দুই হাজার ৮৫৮ জনে।
এদিকে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বিশ্বজুড়ে ভ্রমণ বিষয়ক নানা বিধিনিষেধ ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে শঙ্কায় বিভিন্ন শেয়ার বাজারের সূচক পড়ে গেছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ড ও হংকংয়ের পাশাপাশি জাপান ও ইরাকও তাদের দেশের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, চীন ও হংকংয়ের ১৮ কোটি স্কুল শিক্ষার্থী তাদের বাড়িঘর থেকে পাঠক্রম অনুকরণ করছে। এক্ষেত্রে টেলিভিশনে শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের পাঠ দিচ্ছেন। সৌদি আরব বিদেশী ওমরাহযাত্রীদের দেশে ঢোকায় সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ সিদ্ধান্ত জুলাইয়ে দেশটিতে হজ করতে যাওয়া বিদেশীদের ওপর কোন প্রভাব ফেলবে কি না, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। ইরান দেশের ভেতর মানুষের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে; করোনাভাইরাস আতঙ্কে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে তেহরান ও অন্যান্য শহরে জুমার নামাজের জামাত বন্ধ করা হয়েছে। দেশটিতে ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল।
চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে আসা সব বিদেশীদের দেশে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। ভাইরাস এরই মধ্যে ইতালিতে ১৭ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। দেশটি তাদের ১১ শহরকে ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রেখেছে। গ্রীস তাদের কার্নিভাল সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বাতিল করেছে। বৃহস্পতিবার দেশের ভেতর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও ৪৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন চীনের ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। এর মধ্যে ৪১ জনই হুবেই প্রদেশের। এদিন আরও ৩২৭ নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার খবর দিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। তাদের নয়জন ছাড়া বাকিরা সবাই হুবেইয়ের। সব মিলিয়ে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৭৮ হাজার ৮২৪ জনে। দক্ষিণ কোরিয়ায় আরও ২৫৬ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মূল ভূখণ্ডের বাইরে ইরানে ২৬ জন, ইতালিতে ১৭ জন, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৩ জন, জাপানে ৮ জন, হংকং ও ফ্রান্সে দুজন করে ৪ এবং ফিলিপিন্স ও তাইওয়ানে দুজন; মোট ৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
কোয়ারেন্টাইনে মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট-পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চীন সফর করে যাওয়ার পর মঙ্গোলিয়ার প্রেসিডেন্ট খলতমা বাতুলগা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সগবাটার দামদিনকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন (ভাইরাস সংক্রমণরোধে আলাদাভাবে রাখা) পাঠানো হয়েছে। তাদের সঙ্গে সফর করে আসা অন্য শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও একইভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। শুক্রবার মঙ্গোলিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম মন্তসেম এ খবর জানিয়েছে। তবে রাষ্ট্রীয় হাসপাতালে নাকি প্রেসিডেন্ট ভবনে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।