এখনও জ্বলছে দিল্লি, নিহত ৩৭

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
হিংসার আগুনে জ্বলছে দিল্লি। মৌজপুর, ব্রহ্মপুরী, ভজনপুরা চক, গোকুলপুরী-সহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে দফায় দফায় সংঘর্ষ। রাজধানীতে হিংসার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। উত্তরপূর্ব দিল্লিতে চলতি হিংসায় শেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, অন্তত ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত দুই শতাধিক ব্যক্তি। দিল্লির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। শোকপ্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব।
এদিকে দিল্লির সংঘর্ষের ঘটনা জাতীয় লজ্জা বর্ণনা করে অবিলম্বে হস্তক্ষেপের জন্যে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন কংগ্রেসের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট সোনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিং-সহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের বি জে পি এবং দিল্লির আম আদমি পার্টি সরকারকে ঘটনার জন্যে কাঠগড়ায় তুলেছে কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে ডেপুটেশন শেষে সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, দেশের নাগরিকের জীবন, স্বাধীনতা এবং সম্পত্তি রক্ষায় সুনিশ্চিত করতে আবেদন জানানো হয়েছে। হিংসা রুখতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন তিনি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন, চার দিন ধরে দিল্লির বুকে যে তাণ্ডব চলেছে, তা ভীষণ উদ্বেগের। এই ঘটনা জাতীয় লজ্জা। তার কথায়, হিংসা মোকাবিলায় কেন্দ্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ।তার আরও অভিযোগ, দিল্লির হিংসার ঘটনায় নীরব দর্শক কেন্দ্র ও দিল্লি সরকার। রাইসিনা হিলসে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর সোনিয়া গান্ধী বলেছেন, দুটো কথা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতিকে। দেশের মানুষের নিরাপত্তা যেন সুনিশ্চিত থাকে। কারও যেন প্রাণ না যায়। আর দ্বিতীয়ত, দিল্লিতে হিংসার ঘটনা রুখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পুরোপুরি ব্যর্থ। তাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে অবিলম্বে সরানো হোক। সোনিয়া রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন, তিনি যেন সরকারকে বলেন রাজধর্ম পালন করতে। অন্যদিকে, দিল্লিতে সংঘর্ষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নাগরিকদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আমেরিকার আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন যে বার্তা দিয়েছে তার তীব্র প্রতিবাদ করেছে ভারত। কমিশনের তরফে বলা হয়, মুসলিমদের ওপর আঘাতের আবহে, ভারত সরকারের উচিত, ধর্মের ঊর্দ্ধে উঠে তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায়, দিল্লি সংঘর্ষ নিয়ে করা মন্তব্যকে ঘটনাগতভাবে বেঠিক, ভুল বোঝানো এবং রাজনীতিকরণের চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে ভারত। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রবিশ কুমার বলেছেন, মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশন, সংবাদমাধ্যমের একাংশ এবং বেশ কয়েকজন ব্যক্তির দিল্লিতে হিংসা নিয়ে মন্তব্য দেখা হয়েছে।এগুলি ঘটনাগতভাবে বেঠিক, ভুল বোঝানো এবং ইস্যুকে রাজনীতিকরণের পদক্ষেপ।
দিল্লিতে হিংসা ছড়িয়ে পড়া এবং মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বেরিন স্যান্ডার্স এবং সেখানকার প্রথমসারির বেশ কয়েকজন নেতা। যদিও ওই সমস্ত নেতাদের সম্পর্কে বিশদে কিছু জানায়নি বিদেশমন্ত্রক, তবে দিল্লি সংঘর্ষ নিয়ে মার্কিন সাংসদদের যারা ভারতের সমালোচক, তাদের বলেই মনে করা হচ্ছে। মার্কিন আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেছেন, দিল্লিতে যে সংঘর্ষ চলছে এবং আক্রমণের যে খবর পাওয়া যাচ্ছে, বাড়ি, দোকানপাট এবং প্রার্থনাঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তা খুবই খারাপ। যে কোনও দায়িত্ববান সরকার সত্ত্বর প্রয়োজন ধর্মের ঊর্ধ্বে নাগরিকদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।