কাজিরবাজার ডেস্ক :
এসএমএসের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ ও অধিকাংশ কোটা বাতিল করে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির নতুন নীতিমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সভায় আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে করা নীতিমালায় সম্মতি দিয়েছে মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব নীতিমালা জারি করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে আয়োজিত সভায় একাদশ শ্রেণীর খসড়া নীতিমালা-২০২০ তুলে ধরা হয়। সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন উপস্থিত ছিলেন। সভায় আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির প্রধান ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক ছাড়াও ঢাকার বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, নীতিমালায় কোটা বাতিল, রেজিস্ট্রেশন ফি বৃদ্ধি, এসএমএস আবেদন বাতিলসহ গুরুত্বপূর্ণ চারটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। ভর্তি আবেদন ১০ মে শুরু হয়ে ২৫ জুন শেষ করার প্রস্তাব করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড। যদিও আবেদনের সময় চূড়ান্ত হয়নি।
সভায় আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে খসড়া নীতিমালা তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি যে সকল পরিবর্তনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন ঢাকা বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক। নীতিমালায় এ বছর একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির ক্ষেত্রে কেবল মুক্তিযোদ্ধা, প্রবাসী ও বিকেএসপি কোটা বহাল রেখে অন্যান্য কোটা বাতিল করা হয়েছে। ভর্তি প্রক্রিয়ায় জটিলতা ও ব্যয় কমাতে এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করে কেবল অনলাইনে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। ভর্তি নিশ্চয়ন ফি ১৩০ টাকার বদলে ১৩৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। চূড়ান্ত তালিকায় নাম আসলে একজন শিক্ষার্থীকে এ পরিমাণ টাকা দিতে হবে।
নীতিমালায় অনুসারে এবারও অনলাইনে ১০টি কলেজ বা মাদ্রাসায় আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে। এর জন্য নেয়া হবে ১৫০ টাকা। ফলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস করে ভর্তির জন্য আবেদন আর করা যাবে না। আগে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে প্রতিটি আবেদনের জন্য ১২০ টাকা ফি নেয়া হতো।
শতভাগ মেধা কোটা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশেষ কোটা হিসেবে পাঁচ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা, বিকেএসপি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ এবং প্রবাসী শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ কোটা বহাল রেখে বিভাগীয় ও জেলা সদর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধস্তন দফতরসমূহের কোটা বাতিল করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ফি পাঁচ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার মধ্যে আংশিক এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন প্রতিষ্ঠানের বাংলা মাধ্যম ভর্তির জন্য নয় হাজার ও ইংরেজী মাধ্যমের ভর্তি ফি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হবে। কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ফি তিন হাজার টাকার বেশি করা যাবে না। এছাড়াও মফস্বল ও পৌর এলাকার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হয়েছে এক হাজার টাকা, পৌর জেলা সদরে দুই হাজার টাকা, ঢাকা ব্যতীত অন্যান্য মেট্রোপলিটন এলাকায় তিন হাজার টাকার বেশি নেয়া যাবে না।
ভর্তির আবেদনের একটি তারিখও প্রস্তাব করেছে বোর্ড। সে অনুসারে প্রথম ধাপের ভর্তি আবেদন আগামী ১০ থেকে ২০ মে পর্যন্ত গ্রহণ করা হতে পারে। ২৭ থেকে ৩১ জুন যাচাই-বাছাই, আপত্তি ও নিষ্পত্তি কার্যক্রম চলবে। ৮ জুন প্রথম ধাপের ফল প্রকাশ করা হতে পারে। তবে পুনর্নিরীক্ষায় এসএসসি পরীক্ষা ফল পরিবর্তনকারীরা ১ জুন থেকে ৩ জুন পর্যন্ত আবেদন করার সুযোগ রাখা হয়েছে।
এরপর দ্বিতীয় ধাপে আবেদন ১৭ জুন শুরু হয়ে ২০ জুন শেষ হবে। একইদিন রাত ৮টার পর এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে। তৃতীয় ধাপে ২৩ জুন আবেদন শুরু হয়ে ২৫ জুন পর্যন্ত। ২৫ জুন রাত ৮টার পর এ ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে বলে সম্ভাব্য সময় ধরা হয়েছে।
এদিকে নীতিমালায় পরিবর্তনের বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক মোঃ হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ভর্তি নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হচ্ছে। কারণ এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়ম ও ভোগান্তি তৈরি হয়। অনেক কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনকারীর অনুমতি ছাড়াই আবেদন করে ফেলেন। পরে সমস্যা নিয়ে সকলে শিক্ষা বোর্ডে এসে আর্তনাদ করেন। এ সমস্যা সমাধানে এবার মোবাইলে আবেদন প্রক্রিয়া বাতিল করে শুধু অনলাইনে আবেদনের কথা বলা হয়েছে।