খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তিতে আপত্তি নেই ভাই-বোনদের

35
Bangladesh Nationalist Party (BNP) Chairperson Begum Khaleda Zia attends a rally in Dhaka January 20, 2014. Opposition leader Khaleda has urged the ruling Awami League party to renew talks for forming a democratic government, dubbing the present government as "unconstitutional". The BNP-led 18 party alliance boycotted Bangladesh's parliamentary elections on January 5. REUTERS/Andrew Biraj (BANGLADESH - Tags: POLITICS ELECTIONS) - RTX17MS7

কাজিরবাজার ডেস্ক :
কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে থেকে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তার মুক্তিতে সব রকমের চেষ্টা করে যাচ্ছে দল ও পরিবার। দলের নেতা ও পরিবারের সদস্যদের গত দুদিনের বক্তব্যে সেটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে বিএনপি নেতারা কার্যত দ্বিধাবিভক্ত। তবে খালেদা জিয়ার দ্রুত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আপত্তি নেই তার ভাই-বোনদের। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) খালেদা জিয়াকে দেখে এসে একথা জানান তার ভাই-বোনেরা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপ হচ্ছে এবং সেজন্য তারা বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোলে হলেও তার মুক্তি চান তারা।
সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি সরকার খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করুক। যেভাবেই হোক, তাকে বিদেশে নেয়ার জন্য আমাদের অনুমতি দিক। প্যারোলে দিলেও দিতে পারে। কারণ তার (খালেদা) শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ।’
খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে রাজি হবেন কিনা এমন প্রশ্নে সেলিমা ইসলাম বলেন, উনার সম্মতি থাকবে। উনার অবস্থা এতই খারাপ হয়ে গিয়েছে যে, ৫ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। বাম হাত সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। ডান হাতেরও খারাপ অবস্থা। তার চোখ দিয়েও অনবরত পানি পড়ছে। পায়ে কোনো সাপোর্ট রাখতে পারছেন না। এই অবস্থায় একটা মানুষ তো চিকিৎসার জন্য যেখানেই হোক যেতে চাইবে।
এদিকে খালেদা জিয়ার সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে তাকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করতে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দার। সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশে পাঠানোর জন্য মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ চেয়ে তার পরিবারের পক্ষ থেকে এটাই প্রথম লিখিত আবেদন।
এই আবেদন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে। শামীম ইস্কান্দার আবেদনে লিখেছেন, খালেদা জিয়ার দ্রুত অবনতিশীল স্বাস্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে যেকোনও অপূরণীয় ক্ষতি এড়াতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা প্রয়োজন।
খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ব্যয় বহন করে এবং তাদের দায়িত্বে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে এই আবেদনে।
এই আবেদন বিবেচনা করা হবে বলে আশা করছেন খালেদা জিয়ার পরিবার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এমন আবেদন করার বিষয়ে সেলিমা ইসলাম বলেন, মেডিকেল বোর্ড যেন বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারকে সুপারিশ করে সেজন্য তাদের এই আবেদন।
‘আবেদনে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চেয়েছি। আর বলেছি যে, উনাকে নি:শর্ত মুক্তি দিতে। কারণ এটা মিথ্যা মামলা। সেজন্য আমরা নি:শর্ত মুক্তির জন্য বলেছি’-যোগ করেন সেলিমা ইসলাম।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে যান পাঁচ স্বজন সেজো বোন সেলিমা ইসলাম, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতিমা, তার ছেলে অভিক এস্কান্দার, তারেক রহমানের স্ত্রীর বড় বোন শাহিনা জামান খান বিন্দু ও কোকোর শাশুড়ি ফাতিমা রেজা। প্রায় ঘণ্টাখানেক সেখানে অবস্থান করেন তারা।
এদিকে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে জানেন না বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উনার পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোলের জন্য আবেদন করা হয়েছে কিনা সেটি আমার জানা নেই। পরিবারের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানানো হয়নি।
তবে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য বিএনপি সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে খালেদা জিয়াকে হত্যা করার জন্য কারাগারে জোর করে আটকে রেখেছে। আমরা তাকে বাঁচাতে চাই। তার মুক্তির জন্য সাংবিধানিকভাবে যতরকমের চেষ্টা করার আমরা সবই করছি। আইনগতভাবেও যতরকম পথ আছে সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে এটি আইনের মধ্যে নেই। সে জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তার মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়া না দেয়ার পুরো ইচ্ছেটাই সরকারের হাতে। অন্যায়ভাবে তাকে গ্রেফতারের জন্য সরকারই দায়ী। এ ধরনের মামলায় সাত দিনের মধ্যে জামিন হওয়ার কথা। সাধারণ নাগরিকও সাত দিনে জামিন পায়। কিন্তু উনাকে দু’বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ড নিয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়া। তার জেল খাটার দুই বছর পূর্ণ হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি। প্রায় ১০ মাস ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।