সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন ॥ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন আজ

24

কাজিরবাজার ডেস্ক :
অপেক্ষার পালা শেষ। ঢাকার দুই সিটিতে ভোট আজ। মেয়র ও কাউন্সিলর জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে দুই সিটিতে সকাল আটটা থেকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন দুই সিটির মোট ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ভোটার। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে বিরতি ছাড়াই চারটা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। এবারই প্রথম ব্যালট পেপারের পরিবর্তে ঢাকা সিটির ভোটার সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট দিচ্ছেন। ইসির পক্ষ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য ঢাকার দুই সিটিতে কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ২ হাজার ৪৬৮। এর মধ্যে ঢাকা উত্তরে ভোট কেন্দ্র ১ হাজার ৩১৮ এবং ঢাকা দক্ষিণে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১ হাজার ১৫০। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সকাল আটটায় ভোট শুরুর ১৫ মিনিট আগে প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে ইভিএমে শূন্য ভোট রয়েছে তা দেখানো হবে।
এদিকে ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে কমিশনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ভোট কেন্দ্রে ও নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ভোট কেন্দ্রে নিরাপত্তায় আলাদা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইভিএমসহ ৪৩ ধরনের ভোট সরঞ্জাম কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম, ইভিএম ফিঙ্গার মেশিন ফরম, ছবিসহ ভোটার তালিকা, অমোচনীয় কালির কলম, বিশেষ খাম, ভোটদান প্রক্রিয়ার পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুনসহ ভোটের ৪৩ ধরনের সরঞ্জাম কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। শুক্রবার রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও কলেজে ইভিএম বিতরণ কার্যক্রম পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন হবে প্রতিযোগিতামূলক। ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের যথেষ্ট প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এতে কারচুপির কোন সুযোগ নেই। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার মধ্যে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচনে কোন ধরনের পক্ষপাতিত্বের সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এবারই প্রথম ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেয়র পদে সাতটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ১৩ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই এবার। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের নৌকা প্রতীকের সঙ্গে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনে রয়েছেন মোঃ আতিকুল ইসলাম এবং শেখ ফজলে নূর তাপস। অপরদিকে এই দুই সিটিতে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন তাবিথ আউয়াল এবং ইশরাক হোসেন।
গত বছর ঢাকার উত্তর সিটির উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মেয়র পদে নির্বাচিত হন। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিযোগিতায় রয়েছেন। অপরদিকে ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এই সিটিতে তাবিথ আউয়াল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবারও তিনি বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে এবার দুই দলেরই নতুন মুখ। আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস ও বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন এবার প্রথম মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এর আগে তাপস ঢাকার-১০ আসন ধানমন্ডি থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার মেয়র প্রার্থী হওয়ার আগে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ইশরাক হোসেন এবারই প্রথম ভোটের মাঠে নেমেছেন। তার পিতা সাদেক হোসেন খোকা অবিভক্ত ঢাকা সিটির সর্বশেষ মেয়র ছিলেন। সম্প্রতি ক্যান্সারের আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঢাকার দুই সিটির এই চার প্রার্থী এবার জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনী প্রচারে দিয়েছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
এছাড়া দুই সিটির মেয়র পদে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন-ঢাকা উত্তরে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মোঃ ফজলে বারী মাসউদ, সিপিবির ডাঃ আহম্মেদ সাজেদুল হক রুবেল, এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান ও পিডিপির শাহীন খান। দক্ষিণে জাতীয় পার্টির হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আব্দুর রহমান, এনপিপির বাহারানে সুলতান বাহার, গণফ্রন্টের আব্দুস সামাদ সুজন ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ।
মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে দুই সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭৩৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন ২৫১ জন। সংরক্ষিত ১৮ টি ওয়ার্ডের জন্য ৭৭ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৭৫টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের বিপরীতে প্রার্থী রয়েছেন ৩২৫ জন এবং সংরক্ষিত ২৫ কাউন্সিলর পদের বিপরীতে এই সিটিতে নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৮২ জন।
ভোটার : ঢাকার দুই সিটিতে ৫৪ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৩ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এবারই তারা ইভিএমের মাধ্যমে ভোট প্রদানের নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে যাচ্ছেন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে একজন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন তারা। ঢাকা উত্তরের ১ মেয়র ও ৫৪ কাউন্সিলর প্রতিনিধি বাছাইয়ে ভোট দেবেন ৩০ লাখ ১০ হাজার ২৭৩ ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১৫ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৭, মহিলা ভোটার ১৪ লাখ ৬০ হাজার ৭০৬ জন। ঢাকা উত্তরে ভোট গ্রহণের জন্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ৩১৮টি। বুথ সংখ্যা ৭৮৪৬টি। প্রতি কেন্দ্রে একজন করে প্রিসাইডং অফিসার এবং প্রতি বুথের জন্য ১ জন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা দক্ষিণে একজন মেয়র, ৭৫ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে প্রতিনিধি বাছাইয়ে ভোট দেবেন ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছেন ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৬১৬, মহিলা ভোটার ১১ লাখ ৫৯ হাজার ৫৩৪ জন। এই সিটিতে ভোট গ্রহণের জন্য কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০টি। বুথ রয়েছে ৬ হাজার ৫৮৮টি। এবারে ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য প্রতি কেন্দ্রে টেকনিক্যাল পার্সন হিসেবে দুজন সেনাবাহিনী সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণের জন্য শুক্রবার সকাল থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে ভোটের ৪৩ ধরনের সরঞ্জাম বিতরণ করেছেন। আটটি করে মোট ১৬টি ভেন্যু থেকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ভোটের সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের দুই হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে এক হাজার ৫৯৭টিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করে কেন্দ্র নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসব কেন্দ্রে আজ ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ভোটের নিরাপত্তায় ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৫০ হাজার সদস্য। দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণের এক হাজার ১৫০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭২১টি কেন্দ্রকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম সাংবাদিকদের বলেন, এই সিটির এক হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৮৭৬টি কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ, বাকি ৪৪২টি কেন্দ্র সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হলেও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে ১৮ জন করে।
রিটার্নিং কর্মকর্তারা জানান, আজ ভোট শুরুর আগে পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ইভিএম মেশিনে যে ‘শূন্য’ ভোট রয়েছে তা দেখানো হবে। কোন ইভিএম মেশিনে সমস্যা দেখা দিলে রিজার্ভ মেশিন ব্যবহার করা হবে। তারা বলেন, ভোট শেষে প্রিসাইডিং অফিসাররা ট্যাবের মাধ্যমে অনলাইনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফল পাঠিয়ে দেবেন। পরে কেন্দ্রীয়ভাবে তা ঘোষণা করা হবে।