কাজিরবাজার ডেস্ক :
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনা ভাইরাস কোনভাবেই যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আরও সতর্ক থাকতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে চীন হয়ে যারা আসছেন, তাদেরও বিশেষভাবে দেখাশোনা করতে হবে। এয়ারপোর্ট এবং পোর্টে স্পেশাল কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে আমাদের মধ্যে বিস্তার ঘটতে না পারে। চীন বা হংকং থেকে যেসব প্লেন আসবে সেগুলোতে বিশেষ নজর রাখতে হবে। চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হয় এমন পোর্টে বিশেষ নজর রাখতে হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশের সরকারী হাসপাতালে অবিলম্বে ‘আইসোলেশন ইউনিট’ খোলার নির্দেশ জারি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সোমবার অধিদফতরের সব বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনের সঙ্গে করোনাভাইরাস নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে এ নির্দেশ দেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ। আপাতত দেশের আটটি বিভাগের সকল জেলাসদর ও মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ ইউনিট খোলা হবে। একইসঙ্গে দেশের সব স্থল ও নৌবন্দরে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সতর্ক দৃষ্টি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এদিকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে একই পরিবারের দু’জনের মৃত্যুতে করোনা ভাইরাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এজন্য গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। চুয়াডাঙ্গায় করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দর্শনা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার দল গঠন করা হয়েছে। ইতোপূর্বে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গ্রহণ করা হয়েছে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, এখনও পর্যন্ত দেশে নোভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া না গেলেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। গত কযয়েকদিন ধরে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন দিয়ে চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত যাত্রীদের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থলবন্দরে আপাতত বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের হেলথ কার্ডের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ এবং ও থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে মনিটরিং করা হবে।
কনফারেন্সে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরিচালক ও রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, সোমবার সকাল পর্যন্ত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার মেশিন ও হ্যান্ড স্ক্যানিং মেশিনের মাধ্যমে দুই হাজার ৪৭০ জন যাত্রীর শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তবে এখনও পর্যন্ত দেশে কোন করোনাভাইরাস রোগী পাওয়া যায়নি।
তিনি জানান, হেলথ কার্ডের মাধ্যমে আগত যাত্রীদের তথ্য-উপাত্ত রাখা হচ্ছে। কোন যাত্রী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তার এ রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগী দেখা দিতে পারে। এ কারণে যাত্রীদের বলা হচ্ছে এ সময়ের মধ্যে যদি কেউ অসুস্থতা অনুভব করে তাহলে যেন আইডিসিআরে যোগাযোগ করে। উল্লেখ্য চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছেই। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে ৮০ জন প্রাণ হারিয়েছে। এছাড়া আরও দুই হাজার ৭৪৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। চীনের গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত তিন শতাধিক মানুষ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশে ৫০ হাজারের বেশি মেডিক্যাল স্টাফ এই ভাইরাস প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসায় অংশ নিয়েছেন।