দেশের ৬৮টি কারাগারের কনডেম সেলে ১৭৬৯ ফাঁসির আসামী মৃত্যুদন্ডের অপেক্ষায়

24

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশের ৬৮ কারাগারের কনডেম সেলে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় আছে ১৭৬৯ ফাঁসির আসামি। এর মধ্যে ৪৭ জন নারী। মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আছে ৩৭ আসামি। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামির মধ্যে আছে ৩ শতাধিক জঙ্গি। বিডিআর বিদ্রোহ ও সাত খুনের মামলার মতো বড় মামলার রায়ে কনডেম সেলে আছে ফাঁসির আসামি। দেশের ১৩ কেন্দ্রীয় কারাগার ও ৫৫ জেলা কারাগার মিলে মোট ৬৮ কারাগারের কনডেম সেলে আছেন এসব ফাঁসির আসামি। বহুল আলোচিত ঢাকার রমনা বটমুল, চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামিরাও আছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের কারাগারের কনডেম সেলে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামির সংখ্যার মধ্যে যুক্ত হয়েছে চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার জনসভার আগে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা মামলায় ৫ ফাঁসির আসামি এবং রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে বোমা হামলা মামলায় ১০ আসামির মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির আসামি। সোমবার একইদিনে পৃথক আদালতে বহুল আলোচিত এই দুই মামলায় দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া শেষে ১৫ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন আদালত। ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরীর লালদীঘি ময়দানে সমাবেশে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে তার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালালে ২৪ জন মারা যান। আহত হন দু’শতাধিক মানুষ। দীর্ঘ ৩২ বছর বিচার প্রক্রিয়ায় এই ঘটনায় ৫ পুলিশের মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছে আদালত। অপরদিকে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি সিপিবির রাজধানীর পল্টন ময়দানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সমাবেশে এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এই বোমা হামলার ঘটনাযু ৮ জন নিহত হয়। গুরুতর আহত হয় আরও ২৩ জন। সিপিবির সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠী। দীর্ঘ ১৯ বছর পর মামলায় ১০ আসামির মৃত্যুদন্ড ও অন্যদের দন্ড প্রদান করে আদালত। সোমবার বহুল আলোচিত এই দুই মামলায় রায় ঘোষণা করার পর মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ফাঁসির ১৫ আসামিও অন্য ফাঁসির আসামির সংখ্যায় যুক্ত হয়েছে। সর্বশেষ ১৫ ফাঁসির আসামিকেও কারাগারের কনডেম সেলে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কারাগার কর্মকর্তা।
স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মামলায় ১৯ বছর আগে জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ (অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর) আট আসামিকে মৃত্যুদন্ড দেয় বিচারিক আদালত। সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড অনুমোদন) ও আপীল এখনও উচ্চ আদালতে বিচারাধীন। একইভাবে ছয় বছর আগে আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় বিচারিক আদালত ১৪ জনকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। এটাও এখনও হাইকোর্টের অনুমোদনের অপেক্ষায়। সারাদেশের কারাগারগুলোতে এ রকম বিভিন্ন মামলায় মৃত্যুদ-ের সাজাপ্রাপ্ত ১ হাজার ৭৬৯ আসামি কারাগারের কনডেম সেলে (নির্জন প্রকোষ্ঠে) চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অনেকের মামলা হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। আবার অনেকের ডেথ রেফারেন্স শেষ হওয়ার পর আপীল করেছেন। সেটা আপীল বিভাগে বিচারাধীন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চ আদালতে থাকা অনুরোধ জানিয়েছে উচ্চ আদালতে থাকা এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে। এ বিষয়ে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদির মধ্যে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অনিষ্পন্ন মামলা এবং সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে বিচারাধীন মামলাগুলো ৬ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বিচারাধীন রয়েছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের মে মাস থেকে ২০১৯ সালের মে মাস পর্যন্ত মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত ৪৮ জনের আপীল নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আইনে ডেথ রেফারেন্স কতদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে, তার বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে পেপারবুক তৈরির পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিশু রাজীব হত্যা ও রাজন হত্যা মামলা, সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ আল আলী হত্যা, নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলা ও পিলখানা হত্যা মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। চাঞ্চল্যকর মামলাগুলো যতদ্রুত নিষ্পত্তি হয় তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ও মৌখিকভাবেও তাগিদ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।