বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা শুরু হচ্ছে আজ

8

কাজিরবাজার ডেস্ক :
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে আজ বুধবার রাজধানীর হাতিরঝিলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গা ও অপসারণের কাজ শুরু হচ্ছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের উপস্থিতিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নির্ধারিত ঠিকাদার দিয়ে ভবনটি ভাঙ্গার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরু করা হবে বলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। বুধবার সকাল দশটায় দুটি বেজমেন্টসহ মোট ১৫ তলা ভবনটি ভাঙ্গার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক শুরু করা হবে। তবে পরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ ভবনটি ভাঙ্গা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন রাজউক চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব সাঈদ নূরে আলম।
রাজউক সূত্র জানায়, বিশাল এ ভবনটি কোন প্রকার বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে নয় সরাসরি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই এটি ভাঙ্গা হবে। একই সঙ্গে বিশাল এ ভবনটি ভাংতে কোন প্রকার জননিরাপত্তা যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য কয়েক ধাপে সর্বোচ্চ ৬ মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভবনটি ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার জন্য রাজউক দরপত্র আহ্বান করার পর সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাংতে কাজ পায় সালাম এ্যান্ড ব্রাদার্স নামক একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকার। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও প্রদান করা হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ভবন ভাঙ্গার কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায় সালাম এ্যান্ড ব্রাদার্স। যদিও শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কর্তন করে নেয় রাজউক। তারপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ফোর স্টার গ্রুপকে কাজ দেয়া হয়। তাদের দরপত্রে টাকার পরিমাণ ছিল এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। জানা গেছে, পরবর্তীতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রাজউককে ভবনটি ভাঙ্গা বাবদ প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পূর্ব ঘোষিত অর্থের চেয়ে আরও কম প্রদান করতে আগ্রহ প্রকাশ করে রাজউকে দেয়া আবেদনের প্রেক্ষিতে তা যাচাই বাছাই শেষে এক কোটি দুই লাখ টাকায় ভবনটি ভাঙ্গার দায়িত্ব প্রদান করে রাজউক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাতিরঝিলের বিজিএমইএ ভবন ভাঙ্গার বিষয় নিয়ে কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হয়। ওই ভবন থেকে লিফট, এসিসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয় কর্তৃপক্ষ। এখন যেহেতু লিফট,এসিসহ অনেক মূল্যবান সামগ্রী নেই, সে কারণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান আগে তাদের দেয়া দর কমানোর দাবি জানায়। তাদের দাবি অনুযায়ী অবশেষে এক কোটি দুই লাখ টাকায় ভবনটি ভাঙ্গায় সম্মত হয় রাজউক কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিলের মধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় দেন সর্বোচ্চ আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সময় পার হওয়ার পর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত বছরের ১৬ এপ্রিল মাঠে নামে রাজউক। এরপর বিজিএমইএ ভবনে অভিযানে আসে রাজউক। প্রথম দিনই তৎকালীন দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওলিউর রহমান ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সুযোগ দিয়ে পরবর্তীতে ভবনটি সিলগালা করে দেন। পরে অবশ্য আরও কয়েক দফা সুযোগ দেয়া হয় মালামাল সরানোর জন্য।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ভবনটি ভাঙ্গার কাজ সঠিকভাবে তদারকি করতে রাজউক কর্তৃক একটি বিশেষ টিম ও ঠিকাদার কর্তৃক একটি পৃথক টিম গঠন করা হবে। টিম দুটি যে কোন প্রকার সমস্যা দেখলে যৌথভাবে পর্যবেক্ষণ করে তার যে কোন সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজউক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভবনটি ভাঙ্গার সময় যাতে কোন প্রকার শব্দ দূষণ, বালি দূষণ বা কোন প্রকার নিরাপত্তাহীনতার সমস্যার সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। একই সঙ্গে কয়েক ধাপে সময় নিয়ে ভবনটির বিভিন্ন অংশের ভাঙ্গার কাজ করা হবে তা নিয়ে একটি পরিকল্পনা তৈরি করে নিলামে পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর আগে বিশাল এ ভবনটি ধাপে ধাপে মোট ১১ মাসে সুষ্ঠুভাবে ও নিরাপদে ভবনটি ভাঙ্গা সম্ভব বলে রাজউকের কাছে সময় চায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর প্রেক্ষিতে রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবেদিত বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই শেষে বিবেচনাপূর্বক নির্ধারিত ৬ মাসের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভবনটি ভাঙ্গার সকল কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে রাজউক ঠিকাদারকে চিঠি প্রদান করে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের দিকে হাতিরঝিলে আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিজিএমইএ ভবন অপসারণে আপীল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয় ২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল। ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে বিজিএমইএ-কে এক বছর ১০ দিন সময় দেন।