সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী ॥ ২১টি বছর জাতির পিতার নাম নিশানা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল

126
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৭৫-এর পর সত্যিই বাংলাদেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সেই অন্ধকার ভেদ করে এখন বাংলাদেশ আলোর পথে যাত্রা শুরু করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন ও আদর্শ নিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তা বাস্তবায়নে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। তাই মুজিববর্ষ কে (বিএনপি) মানল বা কে মানল না- সেজন্য জাতি বসে নেই, বসে থাকেনি। তারা যদি কাউকে সম্মান না দেখাতে পারে তাহলে সেটা আইন দিয়েই তো তাদের মনের ইচ্ছাটা পূরণ করা যাবে না। তবে বাঙালী জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। ২৯৮টি কর্মসূচীর মাধ্যমে বাংলাদেশসহ সারাবিশ্ব বছরব্যাপী মুজিববর্ষ পালন করবে। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য বিরল সম্মানের।
বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত, যারা সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যকান্ডের জড়িত খুনীদের বিচারের হাত থেকে মুক্ত করে পুরস্কৃত করেছে, যারা স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, যাদের বিচার শুরু হয়েছিল- তাদের বিচারের পথ বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়ে মন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছিল- তাদের (বিএনপি) কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না। তারা যদি কাউকে সম্মান না দেখাতে পারে, সেজন্য জাতি বসে থাকেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার অবদান, নাম, শ্লোগান ও ভাষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছিল। আজকে সেই সঠিক ইতিহাস সারাবিশ্বে উদ্ভাসিত হয়েছে। শুধু বাঙালীর মুখে নয়, সারাবিশ্বে বঙ্গবন্ধুর অবদান স্বীকৃতি পেয়েছে।
স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ত্রিশ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী দেশে-বিদেশে গৃহীত বিস্তারিত কর্মসূচী সংসদে তুলে ধরেন।
বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না : সম্পূরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ’৭৫-এর পর ২১টি বছর জাতির পিতার নাম-নিশানা ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলার মাটিতে সত্যকে কখনও মিথ্যা দিয়ে চাপা দিয়ে রাখা যায় না, মুছে ফেলা যায় না- সেটা আজ প্রমাণিত সত্য। প্রমাণিত সত্য বলেই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। গত আড়াই হাজার বছরে বিশ্বের যত নেতৃত্বের ভাষণ তার দেশ ও দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে- তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ। এটা গোটা বিশ্বই স্বীকার করে নিয়েছে।
সংসদ নেতা বলেন, জাতির পিতার যে আদর্শ আমরা ধারণ করেছি, যে আদর্শ ও চেতনা নিয়ে জাতির পিতা দেশকে স্বাধীন করেছিলেন, তার সেই চেতনা ও আদর্শ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হয়েছি। আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সত্য ইতিহাস আজ উদ্ভাসিত হয়েছে। আজকে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ইউনেস্কোর মাধ্যমে বিশ্বের জাতিসংঘভুক্ত সব দেশ উদযাপন করবে। এর থেকে বড় সত্য আর কী আছে? কাজেই কে মানল বা কে মানল না- তার জন্য কেউ বসে থাকেনি। জাতির পিতা বলেছিলেন, ৭ কোটি বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। এখন ৭ কোটি থেকে ১৬ কোটি জনগণ হয়েছে। কিন্তু তাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, পারবেও না। বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।
কী পেলাম কখনও ভাবি না : বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবাই এমপি, কেউ উঁচু বা নিচুতে নেই। আর আমি কখনও নিজেকে উঁচুতে রয়েছি তা কখনও ভাবি না। আর কী পেলাম আর কী পেলাম না, সেই হিসাব আমি কখনও মেলাই না। কী মর্যাদা পেয়েছি, না পেয়েছি সেটা নিয়েও আমার কোন চিন্তা নেই। আমার চিন্তা একটাই দেশের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, দেশের মানুষকে কি দিতে পারলাম। যে মানুষগুলোর জন্য আমরা পিতা (বঙ্গবন্ধু) জীবন দিয়ে গেলেন, সেই মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম- সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় কথা। আর আমার কাছে কখনোই আমিত্ব বলে কোন কিছু নেই।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রাজনৈতিক জীবনে বারবার মৃত্যুকে সামনে থেকে দেখেছি, কিন্তু কখনও পিছু হটিনি। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমাদের গড়ে তুলতে হবে। দেশের দরিদ্র মানুষের জীবনমান যেন আরও উন্নত ও সুন্দর হয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ করাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। দেশ ও এ দেশের মানুষের জন্য বঙ্গবন্ধুর অবদান, স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী লাখো শহীদের রক্ত যাতে বৃথা না যায়, দেশের মানুষ যেন বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে- সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে নিয়ে যাব।
তিনি বলেন, সারাবিশ্বের যে সব দেশে আমাদের দূতাবাস আছে, সেসব দূতাবাসের মাধ্যমে মুজিববর্ষ পালন করা হবে। তাছাড়া ইউনেস্কোভুক্ত দেশসমূহও তা পালন করবে। আর মুজিববর্ষ উদযাপনের সময় অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান- অনেকেই আসবেন। আমরা ভাগে ভাগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেব। আর মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসবে। সেখানেও অনেক দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সংসদ সদস্যদের দাওয়াত দেব, তারা সংসদে এসে বক্তব্য দিয়ে যাবেন।
১৭ মার্চ ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মুজিববর্ষের উদ্বোধন : সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ ও আবদুস সালাম মুর্শেদীর পৃথক দুটি প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, আগামী ১৭ মার্চ, ২০২০ সালের জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে এক বর্ণাঢ্য উৎসবমুখর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বছরব্যাপী কর্মসূচী বাস্তবায়ন শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির উদ্যোগে আগামী ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ৩১ বার তোপধ্বনি ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে কর্মসূচীর উদ্বোধন হবে। এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, বিশেষ প্রার্থনা, জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন দফতর, সংস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
সংসদ নেতা জানান, মুজিববর্ষ পালনে সরকারী-বেসরকারী দফতর সংস্থা প্রতিষ্ঠান এমনকি ব্যক্তি থেকে অসংখ্য প্রস্তাব পাওয়া গেলেও বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনায় ২৯৮টি কর্মসূচীতে সীমিত রাখা হয়েছে।
কর্মসূচী তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও খ-চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হবে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় ২০২০ সালের মার্চ মাসে জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন আয়োজন করবে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট জন্মশতবার্ষিকীর বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজন করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ‘জুলিও কুরি’ পদক প্রাপ্তি দিবস উদযাপন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন পালন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জাতির পিতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, বাংলা ও ইংরেজীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশব্যাপী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমূহের উদ্যোগে তৃণমূলের জনগণকে সম্পৃক্ত করে মুজিববর্ষ উদযাপন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে অন্তর্ভুক্ত করা, ইংরেজীতে বঙ্গবন্ধু’র ছবি, স্কেচ ও আলোকচিত্র নিয়ে বই ‘শেখ মুজিব : লাইফ এ্যান্ড টাইমস’ প্রকাশ করা হবে। এছাড়া বিদেশী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ও অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং বঙ্গবন্ধু নির্বাচিত ভাষণ ইংরেজী ছাড়াও হিন্দী, উর্দু, ফরাসী, জার্মান, চাইনিজ, আরবি, ফারসি, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, কোরিয়ান ও জাপানী এই ১২ ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশ করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হবে : মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও আদর্শকে বাংলাদেশের জনগণ ও বিশ্ববাসীর মাঝে ছড়িয়ে দিতে চায়। জাতিসংঘের অঙ্গ সংস্থা ইউনেস্কো বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় এই আয়োজন আন্তর্জাতিক রূপ লাভ করল এবং অনন্য মাত্রায় উন্নীত হলো।
তিনি বলেন, ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে এখন সমগ্র বিশ্ব ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালর ২৬ মার্চ পর্যন্ত নানা আয়োজনে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করবে। জাতিসংঘের এই আয়োজনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সুদীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস এবং বাঙালী জাতির ও বাংলাদেশের জনগণের জন্য তার সুমহান আত্মত্যাগ বিশ্ববাসীর কাছে আরও বৃহৎ পরিসরে প্রকাশিত হবে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জাতির পিতার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন নিঃসন্দেহে আরও ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
সংসদ নেতা বলেন, জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য বিরল সম্মানের। বাংলাদেশ সরকার নিজ দেশে আয়োজনের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতাবার্ষিকী পালনে ইউনেস্কোর সঙ্গে সমন্বয় করবে এবং ইতোমধ্যে আমাদের দূতাবাসসমূহ এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। ইউনেস্কো কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের মধ্য দিয়ে নিঃসন্দেহে বিশ্ববাসী নতুন করে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ ও বর্ণাঢ্য কর্মজীবন সম্পর্কে জানার সুযোগ পাবে।
মুজিববর্ষে কর্মসূচীর মধ্যে আরও যা থাকছে : সংসদে প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমী কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মভিত্তিক ১০০টি গ্রন্থ প্রকাশ করা হবে। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দফতর জেনেভা জাতিসংঘ দফতরের পাশাপাশি বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থা ও ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দফতরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে পাঁচটি বঙ্গবন্ধুর চেয়ার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ, ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজে বঙ্গবন্ধুর সেন্টার স্থাপন, লন্ডনের মাদাম তুসো জাদুঘর এবং জাতিসংঘ সদর দফতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন করা হবে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শভিত্তিক চিত্রকর্ম আলোকচিত্র প্রদর্শন, ওমেন পিস এ্যান্ড সিকিউরিটি শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার, বঙ্গবন্ধুর উন্নয়ন দর্শন ও লিভ নো ওয়ান বেহাইন্ড এবং মুসলিম উম্মাহর ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও সব ধর্মের অধিকার সুরক্ষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করা হবে।
এছাড়া সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজনের পাশাপাশি সেনাবাহিনী নৌবাহিনী বিমানবাহিনী স্ব স্ব কর্মসূচীসহ বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, পুলিশ, র‌্যাবের নিজস্ব কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী অমর একুশে বইমেলা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হবে।ঢাকা লিট ফেস্ট কর্তৃক ঢাকা লিটারারি ফেস্টিভ্যাল বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করা হবে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কর্তৃক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২০ আয়োজন করা হবে। বঙ্গবন্ধু স্মরণে সারাদেশে এক কোটি বৃক্ষরোপণ করা হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অবজারভেটোরি স্থাপন করা হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বিমানের উড়োজাহাজ ও বিমানবন্দর সজ্জিত করবে। শিল্প মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প পুরস্কার প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, মিডিয়া, প্রচার ও ডকুমেন্টেশন উপ-কমিটি ১১টি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে সিএনএন, বিবিসি, আল-জাজিরা, স্কাই নিউজ চ্যানেল-২৪ ও এনডিটিভিতে কন্টাক্ট রিলিজ, আন্তর্জাতিকভাবে বহুল প্রচারিত প্রভাবশালী পত্রিকায়, সাময়িকী ও ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ করা হবে। এছাড়া দেশের সব জেলা ও থানায় ডিজিটাল স্ক্রিন স্থাপন করে প্রতিদিন ডিজিটাল স্ক্রিনে নতুন নতুন কনটেন্ট সরবরাহ এবং বিদেশে বড় বড় শহরে ডিজিটাল স্ক্রিন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। আর চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র কমিটি বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর ২৪টি খ- ভিডিওচিত্র নির্মাণ, একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ এবং মানব মুক্তির থিম নিয়ে ডিসেম্বর ২০২০ সালে একটি আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করা হবে। আর ইংরেজী ও বাংলায় দুটি পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের উপর পূর্ণদৈর্ঘ্য বায়োপিক চলচ্চিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
মুজিববর্ষ পালন আমাদের দুই বোনের কাছে বিশাল পাওয়া : সাবেক হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পর যে সম্মান বাঙালী জাতি পেয়েছিল, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে সেই সম্মান ধুলায় লুণ্ঠিত হয়েছে। সেই জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী বাংলার মাটিতে উদযাপন করতে পারার চেয়ে বড় সৌভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না। শুধু জাতির পিতার কন্যা হিসেবে না, আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে দেশের জনগণ আমাদের সেই সুযোগ দিয়েছে, এটা বড় সৌভাগ্য। এজন্য বাংলার জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করে যেতে পারছি, সেটা কত বড় পাওয়া তা আমি ও আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।