বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ ॥ মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধন বিকালে

18

কাজিরবাজার ডেস্ক :
আজ ১০ জানুয়ারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ সালের এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে জাতির এ অবিসংবাদিত নেতা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। তিনি পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান। তারপর দিলিস্ন হয়ে ঢাকা ফেরেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালনের ব্যাপক প্রস্তুতিকে সামনে রেখে এবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হচ্ছে। আগামী ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী। বাংলাদেশ এ বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছে। এদিন থেকেই মুজিববর্ষ উদযাপন শুরু হবে। আর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের এ দিনে সারাদেশে শতবর্ষ উদযাপনের ক্ষণগণনা শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণগণনার উদ্বোধন করবেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, রাজধানীতে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির আবহ কেমন ছিল তা জানান দিতেই মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরুর দিন তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে বিমান অবতরণ করানো হবে।
সার্বিক পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, বিকাল ৩টায় তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে কাউন্ট-ডাউনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৪টার মধ্যে ক্ষণগণনা শুরু হবে। একই সঙ্গে মুজিববর্ষের লোগো আনুষ্ঠানিক উন্মোচনও করা হবে।
কামাল চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়। তার ফিরে আসার ক্ষণ ও তার জন্মশতবর্ষের আয়োজন আমরা একবারে উদযাপন করব। সে লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে আনুষ্ঠানিকভাবে বছরব্যাপী জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজন শুরু হবে। এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। আরও বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতারও উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ অনুষ্ঠানে দুহাজার আমন্ত্রিত অতিথি এবং ১০ হাজার দর্শক থাকবেন। অংশ নিতে আগ্রহীদের মোবাইল ফোনের অ্যাপসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
এদিকে মুজিববর্ষের কাউন্ট-ডাউন উপলক্ষে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি স্পট, ৫৩ জেলা ও দুটি উপজেলায় মোট ৮২টি কাউন্ট-ডাউন ঘড়ি বসানো হয়েছে। ১০ জানুয়ারি একযোগে সেগুলোয় মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হবে।
সূত্র জানায়, ক্ষণগণনা উদ্বোধনের যেসব অনুষ্ঠান হবে, সেসবের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে সেনাবাহিনী। তাদের সহযোগিতায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরাও। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- এদিন সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশে সংগঠনের সবাই কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন। এছাড়া বিকেল ৩টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ক্ষণগণনা কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণ।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু সর্বস্তরের জনগণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। স্বাধীনতা ঘোষণার অব্যবহিত পর পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের নির্দেশে তাকে গ্রেপ্তার করে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে আটক রাখা হয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে ৯ মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে জাতি বিজয়ের পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করে।
জাতির পিতা পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে, ইংরেজি হিসেবে ৮ জানুয়ারি। এদিন বঙ্গবন্ধু ও ড. কামাল হোসেনকে বিমানে তুলে দেওয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তারা পৌঁছান লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে। সকাল ১০টার পর থেকে তিনি কথা বলেন, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী অ্যাডওয়ার্ড হিথ, তাজউদ্দিন আহমদ ও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ অনেকের সঙ্গে। পরে ব্রিটেনের বিমানবাহিনীর একটি বিমানে করে পর দিন ৯ জানুয়ারি দেশের পথে যাত্রা করেন।
১০ তারিখ সকালেই তিনি নামেন দিলিস্নতে। সেখানে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভিভি গিরি, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, সমগ্র মন্ত্রিসভা, নেতৃবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য অতিথি ও সেদেশের জনগণের কাছ থেকে উষ্ণ সংবর্ধনা লাভ করেন।
বঙ্গবন্ধু ভারতের নেতৃবৃন্দ এবং জনগণের কাছে তাদের অকৃপণ সাহায্যের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। তার এ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রা হিসেবে।’
এরপর বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছেন। ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা জানানোর জন্য আকুল হয়ে অপেক্ষায় ছিল। আনন্দে আত্মহারা লাখ লাখ মানুষ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স ময়দান পর্যন্ত তাকে স্বতঃস্ফূর্ত সংবর্ধনা জানান। বিকেল ৫টায় রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১০ লাখ লোকের উপস্থিতিতে তিনি ভাষণ দেন।
পর দিন দৈনিক ইত্তেফাক, সংবাদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিয়ে এভাবেই লেখা হয়- ‘স্বদেশের মাটি ছুঁয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা শিশুর মতো আবেগে আকুল হলেন। আনন্দ-বেদনার অশ্র“ধারা নামল তার দু’চোখ বেয়ে। প্রিয় নেতাকে ফিরে পেয়ে সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি আনন্দাশ্র“তে সিক্ত হয়ে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে বাংলার আকাশ-বাতাস।
জনগণ নন্দিত শেখ মুজিব সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে তার ঐতিহাসিক ধ্র“পদি বক্তৃতায় বলেন, ‘যে মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে মানুষকে আমি এত ভালোবাসি, যে জাতিকে আমি এত ভালোবাসি, আমি জানতাম না সে বাংলায় আমি যেতে পারব কি না। আজ আমি বাংলায় ফিরে এসেছি বাংলার ভাইয়েদের কাছে, মায়েদের কাছে, বোনদের কাছে। বাংলা আমার স্বাধীন, বাংলাদেশ আজ স্বাধীন।’ সশ্রদ্ধ চিত্তে তিনি সবার ত্যাগের কথা স্মরণ করেন, সবাইকে দেশ গড়ার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন।