কাজিরবাজার ডেস্ক :
ঢাকার দুই সিটির মেয়র পদে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী হচ্ছেন দক্ষিণে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস এবং উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। বিএনপির দুই প্রার্থী দক্ষিণে ইশরাক হোসেন এবং উত্তরে গতবারের প্রার্থী তাবিথ এম আউয়াল। জাতীয় পার্টি দক্ষিণের জন্য ঘোষণা করেছে হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন এবং উত্তরে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) কামরুল ইসলামের নাম। রবিবার আওয়ামী লীগ দুই মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি কাউন্সিলর পদের জন্য দলীয় প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে। বিএনপি কাউন্সিলর পদের জন্য আজকে সাক্ষাতকার শেষ করে আগামীকাল মঙ্গলবার তালিকা দেবে বলে জানিয়েছে। জাতীয় পার্টি কাউন্সিলরের তালিকা প্রকাশ করবে আজ। আগামীকাল মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ সময়। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থিতার পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার বাছাই এবং ৯ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ভোট গ্রহণ করা হবে।
দলীয়ভাবে প্রার্থিতা বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যেও সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষ হওয়ার পর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার শুরু করতে পারবেন। জানা গেছে, উত্তরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আজ তার মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। এছাড়া বিএনপির প্রার্থীরা ইতোমধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর এখন তারা যে কোন সময় মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থীরা আজ মনোনয়নপত্র জমা দিতে সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। এখন শুধু দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। সেখান থেকে নির্দেশ এলে যে কোন সময় প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থী ছাড়াও এখন পর্যন্ত মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ২ হাজারের বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। অনেকে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আজ ও আগামীকালের মধ্যেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও তা দাখিল করবেন। তফসিল অনুযায়ী আগামীকাল বেলা ৫টার মধ্যে প্রার্থীদের স্ব স্ব মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
এই নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নেবেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ আতিকুল ইসলাম এবং ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। রবিবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের জন্য এই দুই প্রার্থীর মনোনয়ন ঘোষণা করেন। এর মধ্যে আতিকুল ইসলাম এ বছর ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখে অনুষ্ঠিত ঢাকার উত্তরে মেয়র পদে উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হন। সাবেক মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে এই পদ শূন্য হয়। এবারও দল থেকে তাকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি উত্তরের নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। তাকে নির্বাচন করতে হলে মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। আজকের মধ্যে তার পদত্যাগের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামীকালের মধ্যে বনানীতে অবস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যয়নসহ তাকে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর সাবেক এই সভাপতি আতিক এর আগে ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন।
অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ঢাকার-১০ ধানমন্ডি এলাকার সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি এবারই প্রথম মেয়র পদে নৌকার কান্ডারি হিসেবে ভোটের মাঠে হাজির হচ্ছেন। বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন এবার দলীয় মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। তিনি গত ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন। এবার দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় দলীয় প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারছেন না। তবে ইচ্ছে করলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন।
সাঈদ খোকনের বদলে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ব্যারিস্টার তাপস বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির ছোট ছেলে। তিন মেয়াদ ধরে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসা তাপস বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদেরও নেতৃত্বে আছেন। তার বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ গত নভেম্বরে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য তাপস ইতোমধ্যে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
এবার ঢাকা দক্ষিণে নতুন প্রার্থী বাছাই করেছে বিএনপি। অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেনকে এবার মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি এই সিটিতে ধানের শীষের কান্ডারি হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন। গত নির্বাচনে এই সিটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নির্বাচন করে পরাজিত হন। উত্তর সিটিতে মেয়র পদের জন্য এবার বিএনপির পুরনো প্রার্থী তাবিথ এম আউয়ালের ওপর আস্থা রেখেছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টুর বড় ছেলে তাবিথ গত নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বিন্দ্বতা করেন। আগের নির্বাচনে মিন্টুকেই বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হলে ছেলে তাবিথ এম আউয়াল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে তিনি আনিসুল হকের কাছে পরাজিত হন। আনিসুল হকের মুত্যুর পর উপনির্বাচন তফসিল দেয়া হলে সেবার তাবিথকেই প্রার্থী হিসেবে বাছাই করা হয়। আদালতের আদেশে নির্বাচন স্থগিত হয়ে যায়। পরে এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে আদালতের বাধা কেটে যাওয়ায় আবারও নির্বাচনে জন্য তফসিল ঘোষণা করা হলে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। ফলে অনেকটা একতরফাভাবে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম নির্বাচিত হন।
জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিও মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ঢাকা উত্তরের জন্য মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) কামরুল ইসলাম। তিনি কিছুদিন আগেই জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। গতবার জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন পান সঙ্গীত শিল্পী সাফিন আহমেদ। পরে বাছাইয়ে শাফিন আহমেদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হলে তিনি আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। ফলে গত নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থী ছিল না। অপর দিকে দক্ষিণের জন্য জাতীয় পার্টি এবার দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলনকে বাছাই করেছে। তিনি দলের পক্ষ হয়ে লাঙ্গল প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। আগের বারের নির্বাচনেও তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিলেন।
আইন অনুযায়ী মেয়র পদে নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে। এজন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমার দেয়ার সময় দলীয় প্রার্থিতার পক্ষে তাদের প্রত্যয়নপত্রও জমা দিতে হবে। বাছাই এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে এসব প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেবে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যয়ন নিতে হবে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে। বিএনপির প্রার্থীদের প্রত্যয়ন নিতে হবে দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছ থেকে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের প্রত্যয়ন করবেন দলীয় চেয়ারম্যান জি এম কাদের। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে যার স্বাক্ষরে দলীয় প্রার্থীর প্রত্যয়ন দেয়া হবে তাদের নাম ও নমুনা স্বাক্ষর ইসিতে ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।
কাউন্সিলর পদে নির্বাচন নিদর্লীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হলেও এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের মধ্যেই প্রতিযোগিতা হবে। মেয়র পদে প্রার্থী মনোনয়নের পাশাপাশি কাউন্সিলর পদেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি একক প্রার্থী বাছাই করে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে। এই পদে দল থেকে মনোনয়ন দেয়া হলেও ইসির কাছে তারা দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হবেন না। জানা গেছে, সব ওয়ার্ড এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত হয়েছে। বিএনপির প্রার্থী আজকের মধ্যে বাছাই সম্পন্ন করা হতে পারে। জাতীয় পার্টির কাউন্সিলর প্রার্থী আজ সোমবারের মধ্যে ঘোষণা করে হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।