গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের দায়িত্ব গ্রাহকের – জ্বালানি বিভাগ

28

কাজিরবাজার ডেস্ক :
গৃহস্থালির গ্যাস বিতরণে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের দায়িত্ব গ্রাহকের কাঁধেই চাপিয়ে দিল জ্বালানি বিভাগ। সারাদেশে গৃহস্থালিতে গ্যাস সংযোগের সংখ্যা ৪৩ লাখ। গত ১৪ বছরে দুটি বিতরণ কোম্পানি দুই লাখ ৭৫ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপন করেছে। বিতরণ কোম্পানির এই ব্যর্থতার মধ্যেই খোলাবাজার থেকে প্রিপেইড মিটার ক্রয় এবং সংযুক্ত করণে নতুন নীতিমালার গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালা মেনে গ্রাহক বাজার থেকে মিটার ক্রয় করে নিজের আঙ্গিনায় স্থাপন করতে পারবেন। যদিও এখনও বাজারে গ্যাসের কোন প্রিপেইড মিটার পাওয়া যায় না।
সোমবার বিকেলে হাইড্রোকার্বন ইউনিট রাজধানীর কাওরানবাজারে পেট্রো সেন্টারে গ্যাসে প্রিপেইড মিটার স্থাপন নিয়ে এক সেমিনারের আয়োজন করে। ওই সেমিনারে বলা হয়, উদ্যোক্তারা মিটার আমদানি করে বা তৈরি করে খোলা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। আগে শুধু বিতরণ কোম্পানিগুলোই গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপন করে দিত। মোট গ্রাহক ৪৩ লাখের মধ্যে তিন লাখের মতো গ্রাহকের প্রিপেইড মিটার রয়েছে। সরকার যেহেতু নতুন করে গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে তাই আবাসিকে নতুন প্রিপেইড মিটার ৪০ লাখের মধ্যেই সীমিত থাকবে। এই পরিস্থিতিতে কোন উদ্যোক্তা দেশে গ্যাসের প্রিপেইড মিটার তৈরির কারখানা স্থাপনে সম্মত হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
বণিক সমিতির (এফবিসিসিআই) প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, প্রিপেইড মিটার তৈরি করার কারখানায় কেবল গ্যাসেরই প্রিপেইড মিটার তৈরি হয় না। সেখানে আরও নানা ধরনের মিটার তৈরি করা যেতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য বেসরকারী খাতকে সম্পৃক্ত করা। যাতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনে গতি আসে। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে শুধু গ্রাহক ব্যবহার অনুযায়ী বিল পরিশোধ করবে না বরং গ্যাসের ব্যবহার নিরাপদ হবে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, অনেক বাসায় গ্যাসের রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত লাইনে ছিদ্র রয়েছে। গ্রাহকের নিজ দায়িত্বে এসব ঠিক করে নেয়া উচিত।
একজন গ্রাহক সাধারণত ৪০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করলেও তার বিল হিসাব করা হয় ৮৮ ঘনমিটার ব্যবহার ধরে। এতে দেখা যায় গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার না করেই অতিরিক্ত বিল দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোন গ্রাহক বেশি গ্যাস ব্যবহার করে কম বিল দেয় আবার কোন গ্রাহক কম গ্যাস ব্যবহার করে বেশি বিল দেয়। দুই চুলার একজন গ্রাহক প্রতিমাসে এখন ৯৭৫ টাকা বিল দিয়ে থাকে। কিন্তু এর বিপরীতে প্রিপেইড মিটার যারা স্থাপন করেছেন তাদের বিল আসছে সর্বোচ্চ ৪৫০ টাকা। ফলে গ্রাহক প্রতিমাসে ৪৭৫ টাকা প্রিপেইড মিটারে সাশ্রয় করতে পারেন। সেমিনারে জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেন, আমরা উদ্যোক্তাদের প্রিপেইড মিটার আমদানি বা তৈরি করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। তারা আমদানি করবেন এবং দামও তারাই ঠিক করবেন। গ্রাহক বাজার থেকে মিটার কিনে আমাদের ল্যাবে পরীক্ষা করে সংযুক্ত করবেন। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির স্বীকার না হন এসব নীতিমালাতে একটি সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
সেমিনারে নীতিমালাটি উপস্থাপন করেন জ্বালানি বিভাগের যুগ্ম সচিব সানাউল হক। তিনি বলেন, নীতিমালায় প্রিপেইড মিটারের স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হয়েছে। আমদানিকারকরা এই মানের মিটার আমদানি করবেন। মিটার আমদানির পূর্বে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। গ্রাহক বাজার থেকে মিটার ক্রয় করার পর তা বিতরণ কোম্পানির ল্যাবে পরীক্ষা করে সংযোজন করবেন।
সেমিনারে হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক এ এস এম মঞ্জুরুল কাদির বক্তব্য রাখেন। এ সময় পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন উপস্থিত ছিলেন।