জগন্নাথপুর থেকে সংবাদদাতা :
জগন্নাথপুরে ৯ বছর বয়সের এক অবুঝ শিশুর মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ রহস্যের বেড়াজালে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সবাই। মিলছে না কোন কিনারা। চলছে মামলা। বিচার পেতে দ্বারেদ্বারে ঘুরছে বাদী পরিবার। মামলা থেকে রেহাই পেতে চলছে আসামীদের তৎপরতা। এ নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। কেউ বলছেন সত্য। আবার কেউ বলছেন মিথ্যা। সত্য-মিথ্যার বিপাকে ঘুরপাক খাচ্ছেন সবাই। উন্মোচন হচ্ছে না ঘটনার আসল রহস্য। অবুঝ এ শিশুটির মৃত্যু স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক। মিলছে না সঠিক উত্তর। এমন অবস্থা চলছে জগন্নাথপুর পৌর এলাকার পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামে।
জানা যায়, চলতি ২০১৯ সালের ১ জুন সন্ধ্যায় জগন্নাথপুর পৌর এলাকার পশ্চিম ভবানীপুর গ্রামের আমির খানের ৯ বছরের ছেলে সোহাগ খান নিখোঁজ হয়। এ সময় তাকে খোঁজে পেতে গ্রামের মসজিদে-মসজিদে মাইকিং করা হয়। তাতেও সন্ধান মেলেনি। পরদিন ২ জুন সকালে গ্রামের মাঠে সামান্য পানিতে হতভাগ্য শিশু সোহাগ খানের মৃতদেহ পাওয়া যায়। তখন গ্রামের লোকজনের সহযোগিতায় তার দাফন করা হয়। এ সময় তার মৃত্যু নিয়ে কোন প্রশ্ন আসেনি। জানানো হয়নি থানা পুলিশকে।
তবে ঘটনার প্রায় ২ মাস পরে মৃত সোহাগের মা সুজিয়া বেগম বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত মন্তাজ উল্লার ছেলে ছমির উদ্দিন, মৃত আবদুল মমিনের ছেলে রনি মিয়া, রেজাউল মিয়া, খালিক মিয়ার ছেলে সুবেল মিয়া, মৃত কাদির মিয়ার ছেলে নেছার মিয়া, আনফর উল্লার ছেলে ইমন মিয়া, মৃত সাবাজ মিয়ার ছেলে লেখন মিয়া, আজিম উল্লার ছেলে আকবুল মিয়া, আনছার মিয়ার ছেলে নুর হোসেন, মৃত গজেন্দ্র দাসের ছেলে লিফটন দাস, লিটন দাস, মৃত গগন দাসের ছেলে রাজেন্দ্র দাস ও মৃত রজাক মিয়ার ছেলে রুবেল মিয়া সহ ১৩ জনকে আসামী করে সুনামগঞ্জ আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য জগন্নাথপুর থানা পুলিশে পাঠান। বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন থানার এসআই আফছার আহমদ।
এর মধ্যে মামলার ২নং আসামী ঘটনার আগ থেকে প্রবাসে রয়েছেন। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আসামীরা পার পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে বাদীর স্বামী আমির খানের দাবি আমরা প্রবাসীকে আসামী করিনি। নানু মিয়ার স্থলে তার ভাই রনি মিয়ার নাম হয়ে গেছে।
১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সরজমিনে মামলার বাদী সুজিয়া বেগম ও তার স্বামী আমির খান সহ তাদের পরিবারের লোকজন জানান, আমরা প্রথমে বুঝতে পারিনি কিভাবে সোহাগের মৃত্যু হয়েছে। পানিতে তার লাশ পাওয়ায় মনে করেছি তার মৃত্যু পানিতে ডুবে হয়েছে। পরে বিভিন্ন কারণে সন্দেহ হয় এবং তাকে গলা টিপে মারায় এ মামলা করেছি। ঘটনার সঠিক তদন্ত হলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে। এক প্রশ্নের জবাবে আমির খান বলেন, আমরা প্রবাসী রনিকে আসামী করতে চাইনি। মামলা লেখার ভুলে নানু মিয়ার জায়গায় তার ভাই রনি মিয়ার নাম লেখা হয়েছে। তবে বর্তমানে আসামীদের হুমকিতে আমারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যে কান সময় আবারো কোন ঘটনা ঘটতে পারে।
এদিকে-স্থানীয় শালিসি ব্যক্তি আবদুল মতিন বলেন, ঘটনা সত্য নয়। আমির খানের যন্ত্রণায় গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। সাবেক পৌর কাউন্সিলর মইন উদ্দিন বলেন, ঘটনার ৬/৭ মাস আগ থেকেই রনি মিয়া গ্রীসে আছে। অথচ তাকে মামলার চার্জভুক্ত আসামী করা হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় মামলাটি মিথ্যা। মামলার প্রধান আসামী ছমির উদ্দিন বলেন, আমি আমির খানের বিভিন্ন অসামাজিক ও অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করায় সে আমাকে মামলায় ফাঁসিয়েছে। গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, ঘটনার সত্য-মিথ্যা জানি না। তবে তদন্তক্রমে ঘটনার সঠিক রহস্য উদঘাটন হোক। স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর দিপক গোপ বলেন, এসব ঘটনা মিথ্যা। মামলা দিয়ে অযথা মানুষকে হয়রানী করা হচ্ছে।
এ মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা জগন্নাথপুর থানার এসআই আফছার আহমদ বলেন, এ মামলাটি আদালতে দায়ের হয়েছে। তদন্তের জন্য থানায় এসেছে। তদন্ত চলছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আশা করছি এ মাসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।