বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধন আজ

12

স্পোর্টস ডেস্ক :
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে এবার দেশের জনপ্রিয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরের নাম রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই বিশেষ আসরটির উদ্বোধন করবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সন্ধ্যায় আয়োজিত বর্ণাঢ্য এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন ক্রীড়াপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী। কোন ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যতীত নিজেদের অর্থায়নে এই বিশেষ বিপিএল জাতির পিতাকে উৎসর্গ করে আয়োজন করতে গিয়ে মনোমুগ্ধকর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। শুরু আজ বিকেল ৪টা থেকে (মূল অনুষ্ঠান সাড়ে ৫টা থেকে), চলবে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। সেখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ও দেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে থাকবে বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য প্রকাশের জন্য নানা আয়োজন। এছাড়া দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা চলচ্চিত্র তারকা, কণ্ঠশিল্লীরা পারফর্ম করবেন স্টেডিয়ামের মূল মাঠে স্থাপিত মঞ্চে। বেশ খানিকটা সময় অনুষ্ঠান উপভোগ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু বিপিএলে মাঠের ক্রিকেট লড়াই ১১ ডিসেম্বর শুরু হলেও আজই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বিকেল ৪টা থেকে শুরু হবে অনুষ্ঠান। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় এসে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রেসিডেন্ট’স বক্সের বাইরে বিশেষভাবে স্থাপিত ব্যালকনিতে এসে উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৯ মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয় বাংলাদেশ। পরবর্তীতে একটি সমৃদ্ধ ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল তরুণদের বিপথগামী হওয়া থেকে বাঁচাতে ক্রীড়াক্ষেত্রে আগ্রহী করতে মনোনিবেশ করেছিলেন। দেশের জনপ্রিয় ক্লাব আবাহনী ক্রীড়াচক্র গঠন করেন তিনি। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও দারুণ ক্রীড়াপ্রেমী। বিভিন্ন সময়ে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা উপভোগ করতে মাঠে উপস্থিত হয়েছেন, ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করতে তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এমনকি সম্প্রতি দেশের ঐতিহাসিক প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট উদ্বোধন করতে কলকাতার ইডেনেও উপস্থিত ছিলেন। এবার দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও ক্রীড়াবান্ধব ও ক্রিকেটপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। আর ৭ দলের ক্রিকেটাররাও অনুপ্রাণিত হবেন এ সময় মাঠে উপস্থিত থেকে।
উদ্বোধনী ভাষণের পর শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট’স বক্সে বসে উপভোগ করবেন বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। সেখান থেকে সরাসরি মঞ্চটা স্পষ্টভাবে দেখতে পাওয়ার সুবিধার্থে স্টেডিয়ামের পূর্ব গ্যালারির সামনে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চের সামনেও সীমিত পরিমাণে দর্শক বসতে পারবেন মাঠের মধ্যে। তবে উইকেট ও আউটফিল্ড রক্ষায় সেখানে বিশেষভাবে ব্যারিকেড রাখা হয়েছে। এরপরও যদি মাঠ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেক্ষেত্রে বিসিবি তা ঠিকঠাক করার জন্য ২ দিন সময় পাবে। পূর্ব গ্যালারির সামনে মঞ্চ হওয়াতে সবচেয়ে বেশি দর্শক ধারণক্ষমতার এই গ্যালারিতে এবং দুই পাশের গ্যালারিতে বসে দর্শকরা সরাসরি অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন না। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রেখে কিছুটা সীমিত করা হয়েছে সাধারণ দর্শকদের আগমন। তাই সাধারণ দর্শকদের জন্য মাত্র ৫০০০ টিকেট রাখতে পেরেছে বিসিবি। তাছাড়া ক্রিকেট সংগঠক, অংশগ্রহণকারী ৭ দলের ক্রিকেটার, কোচ ও সংশ্লিষ্ট স্পন্সর প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সাবেক ক্রিকেটার, বিসিবি পরিচালক ও কর্মকর্তাদের জন্য অনেক টিকেট ছেড়ে দিতে হয়েছে বিসিবিকে। তবে সাধারণ দর্শকদের বর্ণাঢ্য আয়োজনটা মাঠে বসেই দেখার মতো অনুভূতি দিতে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের টাইটেল স্পন্সর স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল সম্প্রচার প্রতিষ্ঠান আকাশ ডিটিএইচ বিভাগীয় শহরগুলোর কেন্দ্রে এবং রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন জনাকীর্ণ স্থানে জায়ান্ট স্ক্রিনে সরাসরি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে। খেলাগুলোও এভাবে তারা সরাসরি সম্প্রচার করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর, গুলশান-বনানী, মিরপুর সিটি ক্লাবসহ কয়েক জায়গায় বড় স্ক্রিন স্থাপন করা হয়েছে। মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে সাড়ে ৫টায় ডি রকস্টার মইদুল ইসলাম খানের পারফর্মেন্স দিয়ে। এরপর রেশমি মির্জার পারফর্মেন্স, সন্ধ্যা ৬টায় জেমস, সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে মমতাজ স্টেজে উঠে গান পরিবেশন করবেন। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার পর আসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন। এরপরই হবে ১০ মিনিটব্যাপী বর্ণিল আতশবাজি। রাত পৌনে ৮টায় সনু নিগম গান পরিবেশন করবেন, তারপরই হবে লেজার শোসহ বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্র পরিবেশনা। রাত ৯টায় কৈলাস খেরের সঙ্গিত শেষে থাকবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পরিবেশনা। সাড়ে ৯টায় মঞ্চে উঠবেন বলিউড সুন্দরী ক্যাটরিনা, রাত ১০টায় সালমান আলাদা আলাদাভাবে। সাড়ে ১০টায় উভয়ে মঞ্চে উঠে সর্বশেষ পরিবেশনা করবেন সম্মিলিতভাবে।
দুর্দান্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়েই এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএলে দেশের ক্রিকেটপ্রেমী মানুষকে আকৃষ্ট করতে চায় বিসিবি। তাই বলিউড তারকা সালমান খান ও ক্যাটরিনা কাইফের মতো বিশ্ব¦ব্যাপী জনপ্রিয় দুই অভিনয়শিল্পীকে এনেছে বিসিবি। এছাড়া ভারতের জনপ্রিয় শিল্পী সনু নিগম, কৈলাস খের ও অরিজিৎ সিং গান পরিবেশ করবেন। থাকবে বিদেশী অনেক তারকারও সম্মিলন যা ইতোমধ্যেই বিজ্ঞাপন ও পোস্টারিং করে প্রচার করেছে বিসিবি। এছাড়া দেশের খ্যাতনামা অনেক তারকাই থাকবেন এ অনুষ্ঠানে। ব্যান্ড তারকা মাহফুজ আনাম জেমস ও পপ স¤্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম গান পরিবেশন করবেন। আগের ৬ বিপিএলের মধ্যে শুধু প্রথম দুই আসরে হয়েছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এবার যেহেতু বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ বিপিএল তাই আকর্ষণীয় এই আয়োজনগুলো থাকবে। এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আগেই বলেছিলেন, ‘এবারের বিপিএলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সেরা। এমনভাবে আয়োজন করা হবে যা দেশের মানুষ আগে দেখেনি।’ তার জন্য এত আয়োজন যার শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর ওপর বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র, মুক্তিযুদ্ধের প্রামাণ্যচিত্র থাকবে। বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নানা লেজার শো ও বর্ণিল ডিসপ্লে এবং পারফর্মারদের পারফর্মেন্সে ফুটিয়ে তোলা হবে।