কাজিরবাজার ডেস্ক :
নব্য জেএমবি জঙ্গি সংগঠনটির তহবিলে দান করা কোটি কোটি টাকা, ধন-সম্পদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে তদন্ত সংস্থা। কোটি কোটি টাকা, ধন-সম্পদ দান করেছেন ধনাঢ্য শ্রেণীর শীর্ষস্থানীয় কয়েক জঙ্গি নেতা। তারা এসব টাকার ধন-সম্পদ দান করেছে নব্য জেএমবির তহবিলে। নাশকতা চালানোর উদ্দেশ্যে কোটি কোটি টাকার তহবিল গঠন করে নব্য জেএমবি। এসব জঙ্গির কেউ নিহত হয়েছে, কেউ গ্রেফতার হয়েছে, আবার ইসলামিক স্টেটস (আইএস) যোগদানের জন্য নিরুদ্দেশ হওয়ার পর কারোর খোঁজ নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে জঙ্গিদের দানের কোটি কোটি টাকার ধন-সম্পদ গেল কোথায়? জঙ্গিদের দানের কোটি কোটি টাকার ওই সম্পদের সন্ধানে মাঠে নেমেছে তদন্তকারীরা।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগঠিত হওয়া নব্য জেএমবির তহবিলের প্রধান অর্থদাতা ওই সংগঠনেরই ধনাঢ্য শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃস্থানীয় কয়েক জঙ্গি। মূলত নাশকতা চালানোর লক্ষ্যেই ওই তহবিল গঠন করা হয়। নব্য জেএমবির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার পর ইসলামিক স্টেসটে (আইএস) যোগদানকারী চিকিৎসক ডাঃ রোকনুদ্দীন খন্দকার একাই ৮০ লাখ টাকা দেন। সপরিবারে সিরিয়ায় যাওয়ার আগে নব্য জেএমবির তহবিলে দেয়ার জন্য এই টাকা তিনি তার স্বজন ও সহযোগীদের কাছে দিয়ে যান।
নব্য জেএমবির আরেক জঙ্গি মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম। রূপনগরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত। সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নেয়ার সময় তিনি পেনশন বাবদ পাওয়া কোটি টাকার পুরোটাই দিয়ে দেন জঙ্গি তহবিলে। আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরী উত্তরায় তার ফ্ল্যাট বিক্রি করে পাওয়া প্রায় কোটি টাকা দান করেন নব্য জেএমবির তহবিলে। এছাড়া দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ টাকা আসে। গুলশানে ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার খরচ মেটানো হয় ওই তহবিল থেকেই। ডাঃ রোকনসহ তিনজনের তহবিল গঠনের বিষয়টি জঙ্গি তৎপরতা তদন্তকালে তহবিলে কোটি কোটি টাকার অর্থ সম্পদ দানের বিষয়টিও উঠে আসে। ডাঃ রোকন যাদের মাধ্যমে টাকা দিয়েছিলেন ওই মাধ্যমটিও একটি বিরাট অঙ্কের টাকা মেরে দিতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আশুলিয়ায় অভিযানের সময় নিহত আবদুর রহমান ওরফে নাজমুল হোসেনসহ অন্তত ১২ জঙ্গি ৩০ লাখ টাকা অর্থায়ন করে নব্য জেএমবির তহবিলে। তবে এখনও প্রকৃত নাম-পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় রহমানের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি সিটিটিসি ইউনিট। দেশী উৎস থেকে পাওয়া টাকার বিরাট অংশ খরচ করেই গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলা চালানো হয়। এছাড়া দুবাই থেকে হুন্ডির মাধ্যমে প্রায় ১৪ লাখ টাকা আসে, যা তামিমসহ অন্য জঙ্গিদের হাতে পৌঁছে। তামিম ছাড়া পলাতক জঙ্গি বাশারুজ্জামান ওরফে চকোলেট ওরফে রাহুল টাকা সংগ্রহ করে।
সূত্র মতে, মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়েন ডাঃ রোকনুদ্দিন খন্দকার। তিনি ছিলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক বিভাগের ডিসঅর্ডারের চিকিৎসক। দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি চাকরিতে ইস্তফা দেন। তার স্ত্রী নাইমা আক্তার নিলু যশোর সরকারী এমএম কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন। দেশ ছাড়ার আগে তিনি বিদেশে ভ্রমণ করবেন বলে কলেজ থেকে ছুটি নিয়েছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকার কবি নজরুল সরকারী কলেজেও শিক্ষকতা করেন। তাদের সঙ্গে দেশ ছাড়ে দুই মেয়ে রেজোয়ানা রোকন, রামিতা রোকন ও রেজোয়ানার স্বামী সাদ কায়েস ওরফে শিশির। রোকন খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় তার ৪১১/বি নম্বর পাঁচতলা ভবন, চেম্বারসহ বেশ কিছু সম্পত্তিও স্বজনদের দান করে যান। বড় মেয়ে রেজোয়ানা রোকন ও তার স্বামী সাদ কায়েস শিশির নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্য বিভাগে পড়তেন। ’১৪ সালের মার্চে তারা নিজেরাই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। শিশিরের বাড়ি শনিরআখড়ায় একটি কিন্ডারগার্টেনের পাশে। ডাঃ রোকনের ছোট মেয়ে রামিতা রোকন ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ছিল। তবে পরীক্ষার আগেই সে মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে দেশ ছেড়ে চলে যায়।
পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়া হয়ে সিরিয়ায় পাড়ি জমান ডাঃ রোকন। রাকা শহরের পতনের আগে আইএস ঘাঁটিতে অবস্থান করছিল তারা। সেখানে আইএস জঙ্গিদের শিশুবিষয়ক বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন রোকন। তার স্ত্রী নাইমা আইএস মতাদর্শীদের শিক্ষাবিষয়ক কাজে সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে অবস্থানকারী নব্য জেএমবির কয়েক সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রোকন। যেসব জঙ্গির সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদে এই তথ্য পান তদন্তকারীরা। ডাঃ রোকন দেশ ছাড়ার আগে তার স্থাবর অস্থাবর, নগদ অর্থ, ধন সম্পদ দান করে যান জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবিতে। নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় যাদের কাছে এসব অর্থ ধন-সম্পদ দান করে গেছে, তাদের কেউ বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে, কেউ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছে, আবার কেউবা আইএসে যোগদানের উদ্দেশ্যে দেশত্যাগ করেছে। কিন্তু জঙ্গি সংগঠনের দানের ওই কোটি কোটি টাকার অর্থ ধন-সম্পদের কোন হদিস নেই।