চাঞ্চল্যকর আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য লিটন হত্যা মামলার রায় ॥ জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি সহ ৭ আসামির ফাঁসি

29

কাজিরবাজার ডেস্ক :
চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যা মামলার রায়ে ৭ জনকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন ওই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুল কাদের খান, তার পিএস শামছুজ্জোহা, গাড়ি চালক হান্নান, ভাতিজা মেহেদি, শাহীন ও চন্দন কুমার রায়। এদিকে আদালত দন্ডপ্রাপ্ত আসামি চন্দন কুমার রায়কে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। যেদিন তাকে গ্রেফতার করা হবে সেদিন থেকেই তার রায় কার্যকর হবে বলে বিচারক তার রায়ে উল্লেখ করেন।
হত্যা মামলার রায় ঘোষণার সময় কাদের খানসহ ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে দন্ডপ্রাপ্ত আসামি চন্দন কুমার রায় ভারতে পলাতক রয়েছে। এছাড়া মামলার অপর আসামি কসাই সুবল সম্প্রতি কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় মারা যান। জেলা ও দায়রা জজ দিলীপ কুমার ভৌমিক তার আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ ১৮ মাস যুক্তিতর্কের পর এই রায় ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করে লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল। তদন্ত শেষে কাদের খানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৭ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার বাসা থেকে কাদের খানকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই তিনি গাইবান্ধা জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
উল্লেখ্য, এই হত্যাকান্ডের পর পুলিশ দুটি মামলা দায়ের করে। একটি অস্ত্র মামলা ও অপরটি হত্যা মামলা। ইতোমধ্যে অস্ত্র মামলার রায়ে একমাত্র আসামি ওই আসনের জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি ও অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আব্দুল কাদের খানকে গত ১২ জুন যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।
আলোচিত এ মামলায় ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল প্রথম দফায় আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। বাদী, নিহতের স্ত্রী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ এ পর্যন্ত ৫৯ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে আদালত। গত ৩১ অক্টোবর মামলার সাক্ষী গ্রহণ কার্যক্রম শেষ হয়। এই মামলায় কাদের খানসহ পলাতক চন্দন কুমার রায় ছাড়া অন্য ৫ আসামি শামছুজ্জোহা, হান্নান, মেহেদি, শাহীন, রানা এই হত্যাকান্ডে তাদের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। চলতি বছরের গত ১৮ ও ১৯ নবেম্বর মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের পিপি শফিকুল ইসলাম শফিক। ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালতের বিচারক।
এদিকে এমপি লিটনের স্ত্রী সৈয়দা খুরশিদ জাহান স্মৃতি গাইবান্ধা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের কাছে আবেগ আপ্লুত হয়ে তার বক্তব্য উল্লেখ করেন, তিনি এই রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। কাদের খানের কিলাররা তার বাড়িতে ঢুকে নির্মমভাবে তার স্বামী এমপি লিটনকে হত্যা করে। সেজন্য কাদের খান এবং তার সহযোগীদের একমাত্র ফাঁসিই তাদের কাম্য ছিল। এছাড়া তিনি তার বক্তব্যে উচ্চ আদালতেও এই ফাঁসির রায় বহাল থাকবে এবং এই রায় দ্রুত কার্যকর করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে তিনি কাদের খানসহ দন্ডপ্রাপ্ত সকল খুনীর সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াফত করতে সরকারের কাছে আবেদন জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যার শাসনামলেই এদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলেই তিনি দ্রুততম সময়ে তার স্বামীকে হারানোর বিচার পেয়েছেন।
এই মামলার বাদী লিটনের বড় বোন ফাহমিদা কাকুলী বুলবুল বলেন, এই রায়ে তিনি এবং লিটনের পরিবার খুশি হয়েছে। এজন্য তিনি সরকারকে ধন্যবাদ জানান এবং এই রায় যাতে দ্রুত কার্যকর হয় তা প্রত্যাশা করেন।
এ ব্যাপারে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, তিনি এবং বাদীসহ প্রয়াত এমপি লিটনের পরিবারের সদস্যরা এই রায়ে সন্তুষ্ট হয়েছেন। আদালতে এই রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেননা মূল আসামি কাদের খানসহ আরও ৫ জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে প্রমাণ করেছেন তারা এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, উচ্চ আদালতে এই রায় বহাল থাকবে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল হামিদ বলেন, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট নই, কেননা, আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। এমপি লিটনকে যেভাবে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে আসামি কাদের খানকে এ মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, কেননা হত্যাকান্ডের সময় কাদের খান দেশের বাইরে ছিলেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে আপীল করব।
এই রায় ঘোষণার সময় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ আদালতে ভিড় জমায়। রায় ঘোষণার পর তাদের সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়। এসময় আদালত চত্বরে আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে আসামিদের আদালতে হাজির করেন এবং রায় ঘোষণার পর দ্রুত তাদের আদালত থেকে গাইবান্ধা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতে হাজির হওয়ার সময় মূল আসামি কাদের খানের মুখে কোন উদ্বেগ ছিল না। বরং মৃদু হাসি মুখে ফুটিয়েই তিনি আদালত চত্বরে প্রবেশ করেন। রায় ঘোষণার পরে কাদের খানের মুখ ছিল বির্মর্ষ এবং চিন্তাযুক্ত।
যেভাবে হত্যা করা হয় এমপি লিটনকে
সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে সরিয়ে দিয়ে পুনরায় ওই আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার উচ্চাভিলাষ ও ক্ষমতার মোহেই সাবেক এমপি কাদের খান এক বছর আগে থেকেই এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনা করেন। এজন্য তিনি তার ঘনিষ্ঠ ৪ সহচর মেহেদী হাসান, শাহীন, হান্নান ও রানাকে প্রলুব্ধ করে এবং নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে তাদের ৬ মাস ধরে নানাভাবে প্রশিক্ষণ দেন। তার ছক অনুযায়ী ইতোপূর্বে ঢাকা থেকে গাইবান্ধা আসার পথে এমপি লিটনকে গত ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী রাস্তায় প্রথমে তার গাড়িতে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এতে গাড়ি থামিয়ে লিটন বের হয়ে আসা মাত্রই তাকে গুলি করে হত্যার পরিকল্পনা করে কিলাররা। কিন্তু সে মিশনও ব্যর্থ হয়।
লিটন হত্যা মিশন : ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় এমপি লিটনের নিজ বাড়িতে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। লিটন হত্যা মিশনে ৩ হত্যাকারী অংশ নেয়। তারা হলো- মেহেদী হাসান, শাহীন ও হান্নান। এরমধ্যে ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়ে হত্যা নিশ্চিত করে মেহেদী হাসান। প্রথমে ৩ খুনী লিটনের সঙ্গে জরুরী কথা আছে এ কথা বলেই তার সঙ্গে বৈঠকখানা ঘরে ঢোকে। সেখানে ঢুকে তাকে সালাম দিয়েই ১ রাউন্ড গুলি ছোড়ে মেহেদী। যা লিটন হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করে। ফলে সে গুলিটি হাতে লাগে। যেহেতু খুনীরা পেশাদার কিলার ছিল না, সেজন্য প্রথম গুলিটি ব্যর্থ হলে খুনী মেহেদী ঘাবড়ে যায় এবং চোখ বন্ধ করে এলোপাতাড়ি পরবর্তী ৪ রাউন্ড গুলি ছুড়ে হত্যা নিশ্চিত করে। হত্যাকা- শেষে তাদের ব্যবহৃত ডাইং বাউন্সার রানার ১০০ সিসির কালো রংয়ের মোটরসাইকেলটিতে চড়ে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। খুনে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি কাদের খানের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত এবং রেজিঃ বাবদ প্রদত্ত ফি জমা করা হয়েছে এমডি আলী নামে, যা পুলিশ জব্দ করে। এর পর রাস্তায় অপেক্ষমাণ কাদের খানের গাড়িতে কিলাররা বগুড়ায় তার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে পরে খুনীরা বাসে ঢাকায় গিয়ে কাদের খানের সহযোগিতায় আত্মগোপন করে থাকে।
যেভাবে কিলাররা শনাক্ত হয় : এমপি লিটনের কিলাররা ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে ধোপাডাঙ্গায় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত পিস্তলটি দিয়ে ভয় দেখিয়ে ফাইম নামে এক যুবকের কাছ থেকে তার মোবাইল ও টাকাপয়সা ছিনতাই করে। ছিনতাই শেষে তাড়াহুড়া করে পালাতে গিয়ে পিস্তলের ৬ রাউন্ড বুলেটের ম্যাগাজিনটি তাদের অগোচরে রাস্তায় পড়ে যায়, যা স্থানীয় জনগণের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ উদ্ধার করে। এই পিস্তলের বুলেট পরীক্ষা করে দেখা যায় এমপি লিটনের শরীর থেকে অপারেশন করে বের করা এবং তার বাড়িতে হত্যার পর প্রাপ্ত বুলেটের খোসার সঙ্গে ওই ম্যাগাজিনের বুলেটের মিল রয়েছে। পরে এই সূত্র ধরে খুনীদের আটক করা হয় এবং পিস্তলটি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়।
খুনীদের স্বীকারোক্তি : গ্রেফতারকৃত ৩ খুনী সে সময় ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে খুনের ঘটনা স্বীকার করে এবং ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, অর্থ যোগানদাতা ও প্রশিক্ষণদাতা হিসেবেও আব্দুল কাদের খানের নাম উল্লেখ করে। এদিকে খুনীরা কাদের খানের পিস্তলটি ব্যবহার করেছিল বলেই বিভিন্ন সূত্র থেকে নিশ্চিত করে পুলিশ। তৎকালীন সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আতিয়ার রহমান খুনীদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক কাদের খানের পিস্তল এবং বুলেট জব্দ করে। কিন্তু ৪০ রাউন্ড বুলেট ক্রয় করলেও কাদের খান পুলিশকে মাত্র ১০ রাউন্ড বুলেট জমা দেয়। বাকি ৩০ রাউন্ড বুলেটের হিসাব তিনি দিতে পারেননি।
খুনে ব্যবহৃত পিস্তল উদ্ধার : পুলিশ কাদের খানের গ্রামের বাড়ি সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে এমপি লিটন খুনে ব্যবহৃত পিস্তলসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধারে ২০১৭ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্যাপক তল্লাশি শুরু করে। এ সময় ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা বাড়ি সংলগ্ন ৩টি পুকুরের পানি সেচে ফেলে। কিন্তু সেখান থেকে কোন আলামতই পাওয়া যায়নি। অবশেষে রিমান্ডে নিয়ে কাদের খানকে চাপ সৃষ্টি করা হলে তিনি পিস্তলের কথা স্বীকার করেন এবং তাকে সঙ্গে নিয়ে ওইদিন রাতেই তার বাড়িতে যাওয়ার পর তার নির্দেশিত আমগাছের গোড়ায় মাটি খুঁড়ে অস্ত্র ও ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়। মাটির নিচ থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তল ও ম্যাগাজিন দেখেই বোঝা যায় দেড় থেকে দু’মাসের মধ্যেই এগুলো মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছিল।
কিলারদের প্রশিক্ষণ : সুন্দরগঞ্জের ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খান বাড়িতে কাদের খানের একটি দোতলা বাড়ি রয়েছে। বাড়িটি দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল গ্রেফতারকৃত কিলার শাহীন। পুলিশকে দেয়া তাদের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে, এই বাড়িতেই কিলারদের পিস্তল চালানো এবং কিলিং মিশন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিত কাদের খান। বাড়ি থেকেই অস্ত্রসহ গিয়ে এমপি লিটনকে হত্যা করা হয়। সেদিন ওই পিস্তলটির ম্যাগাজিনে ৬ রাউন্ড বুলেট ছিল। কাদের খানের বাড়িতে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অনবধানবশত পিস্তল থেকে একটি বুলেট বেরিয়ে দেয়ালে লাগে। পুলিশের অভিযানকালে ঘরের দেয়ালে বুলেটের আঘাতের চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। ওই পিস্তলের ম্যাগাজিনে থাকা ৫ রাউন্ড গুলি ছুড়েই খুনীরা এমপি লিটনকে হত্যা করে।
যেভাবে কাদের খান গ্রেফতার : গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ যোগানদাতা সুন্দরগঞ্জের জাপা (এ) সাবেক এমপি কর্নেল (অব) ডাঃ আব্দুল কাদের খানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বগুড়া শহরের রহমান নগর জিলাদারপাড়ায় তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে রাতে গাইবান্ধায় নিয়ে আসা হয়। এছাড়া ওইদিন সকালে গাইবান্ধা শহরের ব্রিজ রোড এলাকা থেকে তিন খুনী কাদের খানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর সমস কবিরাজপাড়া গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে রাশেদুল ইসলাম ওরফে মেহেদী হাসান (২২), উত্তর সমস বেকাটারি গ্রামের ওসমান গণির ছেলে শাহীন (২৩) এবং কাদের খানের গাড়ি চালক বগুড়ার শাহজাহানপুর থানার কামারপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে হান্নান (২৭) কে গ্রেফতার করা হয়।
কে এই কাদের খান : সুন্দরগঞ্জ এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কাছে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, কাদের খানের পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল ময়মনসিংহ জেলায়। তার দাদা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি গ্রামে জমি কিনে পরিবার-পরিজনসহ বসবাস শুরু করে। কাদের খানের পিতা হাসেন আলী খা। তার স্ত্রী ডাঃ নাসিমা আকতার একজন গাইনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে সরকারী চাকরি করছেন। সেনাবাহিনী থেকে কাদের খান কর্নেল হিসেবে অবসর নেয়ার পরে বগুড়ার রহমান নগর দিলাদারপাড়ায় গরিব শাহ ক্লিনিক নামে একটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করে স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই সেটি পরিচালনা করেন। ক্লিনিকের সঙ্গেই তিনি বসতবাড়িও নির্মাণ করে বগুড়াতেই বসবাস শুরু করেন। এর পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতেও একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে সেখানে মাঝে মধ্যে এসে বসবাস করতেন। এ সময়টিতে জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে জাতীয় পার্টির রাজনীতি শুরু করেন। মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে জামায়াত প্রার্থী সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুল আজিজকে পরাজিত করে ২০০৮ সালে গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।