কাজিরবাজার ডেস্ক :
বহুল আলোচিত ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় বিদেশ পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে গঠন করা হয়েছে টাস্কফোর্স। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বিদেশে পলাতক ১৮ আসামির মধ্যে ৮ আসামি কে কোন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে সেই দেশগুলোর অবস্থান শনাক্ত করেছে সরকার। বিদেশের দেশগুলো শনাক্ত করার পর তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করছে টাস্কফোর্স। অপর পলাতক ১০ আসামি কে কোথায় অবস্থান করছেন এখনও তার কোন হদিস করা যায়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পলাতক ১৮ জন আসামির মধ্যে যে ৮ আসামি কে কোন দেশে অবস্থান করছে তা শনাক্ত করার পর তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। এই ৮ আসামির মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক এটিএম আমিন দুবাই, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার যুক্তরাষ্ট্রে, মাওলানা তাইজউদ্দিন ও রাতুল আহেমদ বাবু দক্ষিণ আফ্রিকায় পালিয়ে আছেন। সৌদি আরবে আছেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী কায়কোবাদ। আর মহিবুল মুত্তাকিন ও আনিসুল মুরসালিন আছেন ভারতের তিহার জেলে। পলাতক ৮ আসামিকে ফিরিয়ে আনার আইনগত জটিলতা নিরসনে কাজ করছে গঠিত টাস্কফোর্স। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এই হামলার মামলায় মোট ৫২ জনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে জেল হাজতে আছেন ২৩ জন, জামিনে ৮ জন, পলাতক ১৮ জন এবং অন্য মামলায় এরই মধ্যে ফাঁসি হয়েছে ৩ জনের। জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও শরীফ শাহেদুল আলম বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে অন্য মামলায়। কারাগারে আটক থাকা আসামিদের মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টু, এনএসআইয়ের সাবেব ডিজি রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক আব্দুর রহিম ও জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাটসহ ১৮ আসামি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার জন্য সেই দেশটির সঙ্গে চিঠি চালাচালি করছে বাংলাদেশ। আইনগত জটিলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করে। এরপর রেড নোটিস জারি করার পর আবার আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা তা প্রত্যাহার করেছে। লন্ডনও আইনগত জটিলতায় তাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি সরকারকে অবহিত করার পর তা মোকাবেলা করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। দন্ড মাথায় নিয়ে লন্ডনে বসে সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্রের ছক কষে নাশকতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগ আছে তারেকের বিরুদ্ধে।
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মাওলানা তাইজউদ্দিন আছেন দক্ষিণ আফ্রিকায়। তাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে সে দেশের সরকারের সঙ্গে বহিঃসমর্পণ চুক্তি করবে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের অনুরোধে দক্ষিণ আফ্রিকা ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাইজউদ্দিনসহ যে কোন অপরাধীকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পারবে। দুই দেশ মিলে চুক্তিটি সই করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তাইজউদ্দিনকে আটক করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল রেড নোটিস জারি করে। ২০১৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশ বাংলাদেশকে নিশ্চিত করে মাওলানা তাইজউদ্দিনকে গ্রেফতার করা না হলেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তবে কূটনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাকে পাঠাতে হলে দুই দেশের মধ্যে বহিঃসমর্পণ চুক্তির প্রয়োজন হবে। জঙ্গিনেতা মাওলানা তাইজউদ্দিন বিগত বিএনপির জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ছোট ভাই। পিন্টুও একই মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি। বর্তমানে কারাগারে আছেন পিন্টু। ইন্টারপোলের দক্ষিণ আফ্রিকার শাখা কার্যালয় বাংলাদেশের পুলিশকে জানিয়েছে, মাওলানা তাইজউদ্দিন ‘পাকিস্তানের পাসপোর্ট’ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন। তিনি সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারকে বিষয়টি জানিয়ে তাইজউদ্দিনের প্রকৃত তথ্য যাচাই করতে তার পাসপোর্ট সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে ইন্টারপোল। ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলার আসামি তাইজউদ্দিন একই ব্যক্তি কি না, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে সরকার।
যমজ ভাই মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন ও আনিসুল মুরসালিনকে ফিরিয়ে আনতে অবশেষে তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ। ১৩ বছর ধরে ভারতের কারাগারে আছে এই দুই জঙ্গি। জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-জিহাদের এই দুই জঙ্গি ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়িত ছিল। এই মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। বাংলাদেশে দন্ডিত এই দুই আসামিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে ভারতে গিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত দন্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হস্তান্তর চুক্তি, বহিঃসমর্পণ চুক্তি নাকি পুশব্যাকের মাধ্যমে ফেরত আনা হবে তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। ২০০৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বিস্ফোরক, পিস্তলসহ মুত্তাকিন ও মুরসালিনকে নয়াদিল্লীতে ভারতের পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর থেকে তারা দিল্লীর তিহার জেলে আছে। তাদের বাড়ি ফরিদপুর শহরে।