পিন্টু দেবনাথ কমলগঞ্জ থেকে :
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ভানুগাছ বাজারে দীর্ঘ ১৫ বছর পর আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০০৪ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি সর্বশেষ কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছিল। ওই সম্মেলনে মো. বেলায়েত আলীকে সভাপতি ও অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে ৬৭ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। বেলায়েত আলীর মৃত্যুর পর থেকে সভাপতির পদটি সহ সভাপতি এম, মোসাদ্দেক আহমেদ মানিককে দিয়ে চালানো হচ্ছিল। ৬৭ সদস্যের কমিটি থাকলেও বিগত ১৫ বছরে ১৪ জন নেতা মৃত্যুবরণ করায় বর্তমানে উপজেলা আওয়ামীলীগে ৫৩ জন নেতা জীবিত আছেন। এর মধ্যে অনেকেই বার্ধক্যজনিক ও অসুস্থতার কারণে দলের কর্মকান্ড থেকে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন বলে দলের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এরপর বিভিন্ন সময়ে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও আর হয়নি। তাই দীর্ঘ ১৫ বছর পর এই সম্মেলনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়কের মোড়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানিয়ে তৈরি করা হয়েছে বেশ কয়েকটি তোরণ। গোটা পৌরশহর ছেয়ে গেছে সভাপতি ও সম্পাদক পদপ্রার্থীদের ছবি সংবলিত পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও পদপ্রার্থীদের সমর্থকরা নিজেদের প্রার্থীর সমর্থনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতা-কর্মীদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, দীর্ঘ ১৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।
৯ নভেম্বর শনিবার বেলা ২টায় কমলগঞ্জ পৌরসভার ভানুগাছ বাজারে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। এ জন্য ভানুগাছ বাজারের চৌমুহনা সংলগ্ন স্টেশন রোড গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সড়কের অর্ধেক জুড়ে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ ও প্যান্ডেল। শনিবার বেলা ২টায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেটের সাবেক সিটি মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ শহীদ এমপি, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এমপি। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাউর রহমান। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এম, মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক ও সঞ্চালনা করবেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান।
কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের তরুণ নেতাকর্মীরা নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশা করছেন। তবে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠিত হবে এমন আশা করছেন দলের বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারা। অন্যদিকে দীর্ঘ ১৫ বছর পর উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সম্মেলন হওয়ায় নেতাকর্মীদের প্রাণচাঞ্চল্য অনেকটা বেড়ে গেছে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সম্মেলনের মধ্য দিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে বড় ধরণের পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। দ্বিধাবিভক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে কারা হচ্ছেন প্রার্থী এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে। সমঝোতা না ভোটে নেতা নির্বাচিত করা হবে এ নিয়েও রয়েছে আলোচনা। অনেকে আলোচনার মাধ্যমে কমিটির পক্ষে মত দিলেও কেউ কেউ কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে কমিটি হওয়ার পক্ষে মত দিচ্ছেন। আবার অনেকে সমঝোতার মাধ্যমে নেতৃত্বে আসার জন্যও তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থী হিসেবে বিভিন্নভাবে আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এম, মোসাদ্দেক আহমেদ মানিক, সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মো. নুরুল ইসলাম, আলীনগর ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুল হক বাদশা, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. সিদ্দেক আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রত্যাশী হিসেবে যাদের নাম শোনা হচ্ছে তারা হলেন- উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এএসএম আজাদুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. হেলাল উদ্দিন, রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমদ বদরুল, শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমলগঞ্জ পৌর মেয়র মো. জুয়েল আহমেদ।
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ফজলুল হক বাদশা ও সদস্য সচিব মো. সিদ্দেক আলী জানান, সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামতের উপর ভিত্তি করে সরাসরি সভাপতি ও সম্পাদক নির্বাচন হতে পারে, অথবা গোপন ভোটে নির্বাচন হতে পারে। তবে প্রকৃত ও ত্যাগী নেতৃবৃন্দদের নির্বাচিত করা হবে তারা মন্তব্য করেন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর সম্মেলন হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। এই সম্মেলনে প্রবীণ ও নবীনের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেতৃত্ব আসবে। কমিটিতে প্রকৃত আওয়ামীলীগের, ত্যাগীরা স্থান পাবে- এটাই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা।