কাজিরবাজার ডেস্ক :
মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রম বাজার খুলছে আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে। মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে কর্মী নিয়োগের এমন একটি আশ্বাস দিয়েছেন মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। ৬ নভেম্বরের বৈঠকে একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এতদিন মালয়েশিয়ার বাজারটি খুলবে কি খুলবে না এমন একটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছিল। এখন সেই দ্বিধা দ্বন্দ্ব কেটে গেছে। আগামী ১৭ ও ১৮ নভেম্বর ঢাকায় দুই দেশের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক বসবে। ওই বৈঠকে কর্মী নিয়োগে বিভিন্ন বিষয় চূড়ান্ত করা হবে। এরপর কর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া শেষ করতে পুরো ডিসেম্বর মাস চলে যাবে। মন্ত্রী আগামী রবিবার মালয়েশিয়া সফর নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করবেন। সেখানেই তিনি মালয়েশিয়া সফরের বিস্তারিত তুলে ধরবেন। মালয়েশিয়ায় অবস্থানকারী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ টেলিফোনে এ কথা জানিয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রী ওয়াই বি কুলা সেগরানের সঙ্গে ৬ নভেম্বর বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। কর্মী নিয়োগের বৈঠকে আগামী ২৪ ও ২৫ নবেম্বর ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের তারিখ ঠিক করা হয়। কিন্তু পরে আমি দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। পরে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় বৈঠকের তারিখ কয়েকদিন এগিয়ে এনেছে। এখন নতুন তারিখ করা হয়েছে ১৭ ও ১৮ নবেম্বর। ওই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগের বিষয়টি। মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে আগ্রহী। তিনি আমাকে বলেছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করতে হবে। সোর্স কান্ট্রি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে তার দেশে কর্মী নিয়োগের যৌক্তিকতা রয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও কর্মী নিয়োগে আগ্রহের কথা বলেছেন। এর বাইরেও দেশটির বড় বড় কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও আগ্রহী বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগে। কারণ বাংলাদেশের কর্মীরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারেন। তারা অল্পদিনেই অদক্ষ থেকে দক্ষকর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন।
টেলিফোনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেছেন, এবার মালয়েশিয়া সফর বেশ ফলপ্রসূই হয়েছে। কারণ নির্ধারিত কর্মসূচীর বাইরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সৌহার্দ্য পূর্ণ পরিবেশে কথা হয়েছে। এতে বোঝা গেছে তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করতে আগ্রহী। বন্ধ বাজারটি খুলে যাক দেশটির সব পক্ষই চেয়েছে। তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে বাজারটি খোলার কথা সব পক্ষই কম বেশি বলেছে। এর মধ্যে নিয়োগ ব্যয় কমাতে হবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠাতে হবে। এবার বাজার খোলার বিষয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশীদের বৈধ করার দাবির বিষয়ে মন্ত্রী বলেছেন, এটি তাদের আইনগত বিষয়। অবৈধদের বিষয়ে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের কর্মীদের বৈধ করে নিতে পারেন। তখন বাংলাদেশী কর্মীরাও বৈধ হবেন। অবৈধ কর্মীদের বিষয়ে আলোচনা হলেও আমার টার্গেট ছিল বন্ধ বাজারটি আগে খোলা। এই টার্গেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হলেও অনেকখানি পূরণ হয়েছে। এ বছরের মধ্যে কর্মী নিয়োগের সব প্রক্রিয়া শেষ হবে এটা বলা যায়। আমি দেশের মানুষকে বেশি আশা দিতে চাই না। তাই বলছি, এ বছরটা চলে যাবে কর্মী নিয়োগের সব প্রক্রিয়া শেষ করতে। আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে আশা করছি মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ হবে। বাজারটি খোলা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভেতরে ভেতরে অনেক চেষ্টা করেছি। তারই ফলশ্রুতিতে আজকের অবস্থানে আসতে পেরেছি। এ জন্য আমার মন্ত্রণালয়ের সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানাই। তারাও আমার পরিশ্রমের সঙ্গে ছিলেন।
মন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মনিরুস সালেহিন, যুগ্ম সচিব মোঃ ফজলুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান, বিএমইটির পরিচালক নুরুল ইসলাম। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা শেষে শুক্রবার দেশে ফিরছেন।
মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারটি খোলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছে। দুই দেশের পক্ষ থেকে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বাজারটি খোলার বিষয়টি বার বার সামনে এলেও বাজর খোলেনি। এবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাজারটি খোলার।
মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার খুলতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ওই দেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সুপারিশগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদমন্ত্রী কুলাসেগরান বলেছেন, তার দেশে বর্তমানে বিভিন্ন সেক্টরে ৬ লাখ কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার দক্ষ কর্মীর খুব বেশি প্রয়োজন। দক্ষ কর্মীর অভাবে কয়েকটি সেক্টরে কাজের সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশের মন্ত্রী ইমরান আহমেদ মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীকে বলেছেন, বাংলাদেশে এখন দক্ষ কর্মীর কোন কমতি নেই। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে কর্মীদের।