কাজিরবাজার ডেস্ক :
মালয়েশিয়ার বন্ধ শ্রমবাজারের জন্য এবার সুখবর আসতে পারে। দীর্ঘদিনের জট খুলতে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শুরু হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমেদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল সোমবার রাতে মালয়েশিয়া গেছে। সে দেশের মানব সম্পদ মন্ত্রী ওয়াই বি কুলা সেগরানের সঙ্গে ৬ নবেম্বর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে মন্ত্রীর। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেছেন, এবার বাজার খোলার বিষয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের ইচ্ছেকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হবে। টার্গেট থাকবে উচ্চ অভিবাসন ব্যয় কমানো। আর দেশটিতে অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশীদের বৈধ করার দাবিও তোলা হবে। বাজারে যাতে কোন সিন্ডিকেট না হয় সে দিকটিও আলোচনায় থাকবে। দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়নে আলোচনা হবে।
মন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে যাচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা, অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মনিরুস সালেহিন, যুগ্ম সচিব মোঃ ফজলুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান, বিএমইটির পরিচালক নুরুল ইসলাম। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নানা বিষয়ে আলোচনা শেষে আগামী ৮ নবেম্বর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, মালয়েশিয়ার বাজারটি খোলা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চলছে। দুই দেশের পক্ষ থেকে বেশ কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বাজারটি খোলার বিষয়টি বার বার সামনে এলেও বাজর খোলেনি। এবার একটা বড় সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বাজারটি খোলার। কিছু আইনের বিষয়ের কারণে বাজারটি হয়ত এতদিন খোলেনি মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ। এবার আমাদের চেষ্টা থাকবে আইনের বিষয়গুলো সমাধান করে বাজারটি খোলা। অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রেখে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি বেশকিছু সুপারিশ রয়েছে। বৈঠকে বসছে দুই দেশ বিষয়গুলো আলোচনা পর্যালোনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার খুলতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে ওই দেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করবেন। জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সুপারিশগুলো আলোচনায় আসবে। মালয়েশিয়া সরকারের মানব সম্পদমন্ত্রী কুলাসেগারান বিভিন্ন সময় দেয়া তার বিবৃতিতে বার বার মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু বাংলাদেশী কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির রিপোর্ট বাস্তবায়নের জন্য তিনি তাগিদ দিয়েছেন।
মালয়েশিয়া থেকে খবর মিলেছে সোমবার মানব সম্পদমন্ত্রী সংসদে প্রশ্ন উত্তর পর্বে বলেছেন, বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সেক্টরে ৬ লাখ কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ ৪০ হাজার দক্ষ কর্মীর খুব বেশি প্রয়োজন। দক্ষ কর্মীর অভাবে কয়েকটি সেক্টরে কাজের সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে কর্মী ও দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং মালয়েশিয়ার ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে এবারের বৈঠকে। শ্রমবাজার চালুর ক্ষেত্রে এবার মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয় সামনে আসতে পারে। এর মধ্যে কর্মীদের কম অভিবাসন ব্যয়ে পাঠানো, কোম্পানি পরিবর্তন না করা, মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে আসা, যোগ্য সকল রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী পাঠানো, মেডিক্যালসহ অন্য বিষয়গুলো মালয়েশিয়ার পদ্ধতিতে পরিচালনা করা।
গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায় মালয়েশিয়ার কর্মী পাঠানোর অনলাইন পদ্ধতি এসপিপিএ। এরপর সে সময়ের মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি ২৫ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়া গিয়ে বৈঠক করেও, শ্রমবাজারটি চালু করতে পারেননি। এরপর ৩১ অক্টোবর ঢাকায় দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে নতুন করে কর্মী নেয়ার কিছু পদ্ধতি ঠিক হয়। চলতি বছরের ১৪ মে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী (তখন প্রতিমন্ত্রী) ইমরান আহমেদ মালয়েশিয়া সফরে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তানশ্রি মুহিউদ্দিন ইয়াসিন ও মানব সম্পদমন্ত্রী এম কুলাসেগারানের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের অগ্রগতি হিসেবে ২৯ ও ৩০ মে মালয়েশিয়ায় দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেখান থেকেও শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে কোন রূপরেখা পাওয়া যায়নি। ৭ জুলাই মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুউদ্দিন বিন আব্দুল্লাহর বাংলাদেশ সফরের বৈঠক শেষে পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছিলেন, আগস্টেই খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার।