কাজিরবাজার ডেস্ক :
ওরা বাঙালি নয়, বাংলাদেশীও নয়। ওরা রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের নাগরিক। কিন্তু সৌদি থেকে এ রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশী হিসেবে। আবার ফেরত আসা এসব রোহিঙ্গাদের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয়ও দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি একদিকে বাংলাদেশের জন্য যেমন বিব্রতকর, তেমনি রোহিঙ্গাদের অনৈতিক কাজের দায়ভারও এদেশের ঘাড়ে বর্তাচ্ছে। গত দু’মাসে শতাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ফেরত আসার ঘটনা ঘটেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশী দূতাবাসের কতিপয় কর্মকর্তারা দালালদের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশী পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, রোহিঙ্গারাতো মিয়ানমারের নাগরিক। ওরা যেভাবে বা যে পথেই হোক সৌদি আরব গেছে। দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। জানা গেছে, মিয়ানমারে নির্যাতিত হওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে এদের সৌদিতে থাকা একটি কার্ড দেয়া হয়ে থাকে। এ কার্ড নিয়ে বছরের পর বছর সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে বসবাস করে আসছে। এ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে। ধরা পড়লেই বাংলাদেশী পরিচয় দিয়ে থাকে। যা এদেশের জন্য বড় ধরনের বদনাম বয়ে আনছে।
সূত্র জানায়, এরা রোহিঙ্গা। সৌদিতে বিভিন্ন অপরাধে বা জাল ভিসা ও ভিসাবিহীনভাবে থাকার দায়ে অভিযানে ধরা পড়ছে। অভিযোগ রয়েছে, সৌদি আরবে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় পৌঁছার পর দালালদের মাধ্যমে টাকা খরচ করে বাংলাদেশী দূতাবাস থেকে এদের অনেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে থাকে। সৌদি পুলিশের অভিযানে আটক হওয়ার পর এ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। আর বাংলাদেশ তাদের গ্রহণ করছে। শুধু তাই নয়, এদের থাকার জন্য উখিয়া টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে প্রেরণ করা হচ্ছে। এদের অনেকে ইতোমধ্যে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কাছে অন্য রোহিঙ্গাদের মতো নিবন্ধনের আবেদনও করেছে।
বর্তমানে উখিয়া টেকনাফের ৩০ থেকে ৩২ শিবিরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস রয়েছে। নিবন্ধিত হয়েছে ১১ লাখেরও বেশি। এসব ক্যাম্প থেকে বিভিন্ন সময়ে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চলে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে। ওরা যেখানে যাচ্ছে, সেখানে সে সব দেশের পুলিশের অভিযানে ধরা পড়লেই ফেরত আসছে বাংলাদেশে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে ভাবিয়ে তুলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানিয়েছে, সৌদি আরবে ধরা পড়ার পর সে দেশের ১৭০০ থেকে ১৮০০ রিয়াল দিয়ে বাংলাদেশী সাজিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে এসব রোহিঙ্গাদের। ঢাকা বিমানবন্দরে নামার পর সেখানেও অর্থ খরচ করে সেখানকার নিরাপত্তা কর্মীরা ছেড়ে দেয়। এরপর তারা নিজ উদ্যোগে চলে যাচ্ছে উখিয়া টেকনাফ ক্যাম্পে। সেখানে অবাধে তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সদস্যদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে।
এক সময় সৌদি আরব সরকার এসব রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে বসবাসের জন্য সুযোগ করে দেয়। কিন্তু বর্তমান সৌদি সরকার এদের অনেককে পাকড়াও করছে। পরে রোহিঙ্গারা নিজেদের বাংলাদেশী হিসেবে প্রমাণ করে এদেশে চলে আসছে। এর নেপথ্যের অভিযোগে জানা গেছে, সৌদি আরবে বাংলাদেশী দূতাবাসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সে দেশের দালালদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রোহিঙ্গাদের পক্ষে পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ইস্যু করে দিচ্ছে। পরবর্তীতে এদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে ফেরত আসা যাদের নাম জানা গেছে তাদের মধ্যে রয়েছে সানাউল্লাহ, শামসুল আলম, মোহাম্মদ নুর, ইলিয়াস, মোঃ হারুন, শামসু, আমিনুল ইসলাম, নুরুল হুদা। এ ধরনের দুই শতাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য ফেরত আসলেও এদের কোন তালিকা করা হয়নি। রোহিঙ্গা আশ্রয় ক্যাম্পে আশ্রয় পেয়ে এরা অন্যদের মতো রেশন সুবিধাও পাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার (ইউএনএইচসিআর) কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের অনেকের আবেদন পাওয়া গেলেও কাউকে এখনও লিস্টে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এদের অনেকে বহু আগে সৌদি আরব গেছেন বিভিন্ন পথে। অনেকে বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করেও সৌদি আরব পাড়ি জমিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে সৌদি আরবে সাধারণ বাঙালীদের যেভাবে ফেরত পাঠানোর তৎপরতা চলছে সে সঙ্গে এসব রোহিঙ্গাদেরও আটকের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এরা বাঙালী বা বাংলাদেশী না হয়েও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বাংলাদেশী পাসপোর্ট বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে এদেশে চলে আসছে। আর বাংলাদেশ তাদের সহজভাবে গ্রহণ করে নিচ্ছে। আবার এসব রোহিঙ্গারা আশ্রয় শিবিরেও স্থান করে নিচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সরকারের উর্ধতন মহলে জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে বিভিন্ন মহলে দাবি উঠেছে।