বোর্ডের সভা শেষে পাপন ॥ দেশের ক্রিকেট ধ্বংস করতেই এই ধর্মঘট

15


দেশের ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। ক্রিকেটারদের কোন দাবি থাকলে তা নিয়ে আগে বোর্ডের দ্বারস্থ হতে হবে। এরপর সেই দাবি পূরণ না হলে আন্দোলন, ধর্মঘট হতে পারে। কিন্তু ক্রিকেটাররা কী করলেন ? কোন দাবি নিয়ে বিসিবির কাছে না গিয়ে, বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে না গিয়েই আন্দোলন শুরু করে দিলেন। ১১ দফা দাবি তুলে ধরলেন ক্রিকেটাররা। দাবি না মানা পর্যন্ত সব ধরনের ক্রিকেট বর্জন করার ঘোষণাও দিয়ে দিলেন। আর এখানেই ক্রিকেটকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
সোমবার ক্রিকেটাররা দাবি তুলে ধর্মঘট শুরু করল। মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের বিসিবি কার্যালয়ে বিসিবি সভাপতির নেতৃত্বে পরিচালকদের নিয়ে সভা হলো। এই সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি ক্রিকেটকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা স্পষ্ট করে বলে দিলেন। তিনি বলেন, ‘দেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করতেই এই ধর্মঘট।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। যার অংশ হিসেবে ক্রিকেটাররা আন্দোলনে নেমেছে এবং ধর্মঘট ডেকে খেলা বন্ধ করে দিয়েছে। বিসিবি সভাপতি পাপন বলেন, ‘আমাদের কাছে দাবি না তুলে তারা যে উদ্দেশে মিডিয়ার সামনে তুলে ধরল, সে উদ্দেশ্য আপাতত তারা সাকসেস। এসিসি-আইসিসি থেকে শুরু করে সবাই ফোন করে বলছে, বাংলাদেশের ক্রিকেট নষ্ট হয়ে গেছে। তার মানে, বাংলাদেশের ইমেজ এবং ক্রিকেটের ইমেজ নষ্ট করতে সফল হয়েছে তারা।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই খেলা বন্ধ। এমন এক সময়ে বন্ধ করল- যখন ফিটনেস এবং ক্যাম্প শুরু করার কথা রয়েছে। নতুন কোচ এসেছে, সামনে (ড্যানিয়েল) ভেট্টরিও আসবে। আমার মনে হয়, ওদের বিদেশী এসব কোচ পছন্দ নয়। তারা তো এমনও বলেছে, কোচই চাই না। এখন চায় দেশী কোচ। কিন্তু তাদের মতো করে তো আমরা কোচ নিয়োগ দিতে পারি না।’
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভারতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সেই সুযোগ ধরা দিয়েছে। সামনেই ভারতের মাটিতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ খেলবে বাংলাদেশ। ৩ নবেম্বর থেকে প্রথম টি২০ দিয়ে তিন ম্যাচের টি২০ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হবে। সর্বশেষ টেস্টটি কলকাতার ইডেন গার্ডেনে হবে। যে টেস্টটির জন্য বিশেষ আয়োজন করছে ভারত ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদে বসতে যাওয়া সৌরভ গাঙ্গুলী। কলকাতার এ সেরা ক্রিকেটার বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এমনকি কলকাতার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও টেস্টটি সশরীরে দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। যখন ভারত সফর শুরু হতে আর কয়েকটি দিন বাকি। প্রস্তুতি ক্যাম্প এ সপ্তাহে শুরু হওয়ার কথা। ঠিক এর আগেই ক্রিকেটারদের এমন আচরণ হতাশাজনকই! পাপন বলেন, ‘ভারতে পূর্ণাঙ্গ সিরিজে এই প্রথম যাচ্ছে। এত কষ্ট করে একটি ফুল সিরিজ ভারত থেকে আসল। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ শুরু হচ্ছে এবং প্রথম খেলাটাই ভারতের সঙ্গে। অথচ তার আগেই তারা বলে দিল, আমরা খেলব না।’
হঠাৎ করে এমন উত্তপ্ত অবস্থা তৈরি করা পূর্বপরিকল্পিত নয় কি? পাপনের প্রশ্ন, ‘ঠিক এমন সময়টাতেই ধর্মঘট ডেকে ক্যাম্পে যোগ না দিয়ে তারা কি করতে চাচ্ছে, এটা আমাদের কাছে পরিষ্কার। যা যা জিনিস ওরা চাইলেই পাবে, তবুও আমাদের কাছে আসল না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে এটা পুরোপুরি প্রি-প্ল্যানড। ওরা আমাদের কাছে দাবি না দিয়ে মিডিয়ায় বলেছে। তারা আপাতত সাকসেস। তারা আমাদের কাছে দাবি না দিয়ে আগেই খেলা বন্ধ করেছে। এটা কোন পূর্ব পরিকল্পনার অংশ।’
সবার মনে একটিই প্রশ্ন, যখন ভারত সফর আসন্ন, প্রস্তুতি ক্যাম্প শুরু হওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে; এমন সময় আন্দোলন করা কি যৌক্তিক? বিসিবির সঙ্গে আলোচনায় বসে যদি দাবি না মানা হতো, তখন আগে কিংবা পরেওতো করা যেত? বিসিবি সভাপতি অবশ্য আলোচনার দরজা এখনও খোলা রেখেছেন। বলেছেন, ‘(আন্দোলনকারী ক্রিকেটাররা) আসলে দরজা খোলা আছে। তারা বসলে কথা বলব।’ ক্রিকেটাররা কি কথা বলবেন? কিভাবে বলবেন? বিসিবি সভাপতির ফোনইতো ধরেন না ক্রিকেটাররা।
বিসিবি সভাপতি পাপন নিজেই অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত তারা আসেনি আমাদের কাছে। দু’তিনজনকে ফোন করা হলেও তারা ফোনও রিসিভ করছে না। ক্রিকেটের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।’ বিসিবি সভাপতির ফোন না ধরা মানে তো সমস্যা সমাধানের উদ্যেগে সহযোগিতা না করাই বোঝায়। তাহলে সমাধান আসবে কিভাবে?
এরপরও ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরার অনুরোধ জানিয়েছেন বিসিবি সভাপতি। তিনি বলেছেন, ‘কেউ পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। ষড়যন্ত্রের কারণে দেশের ক্রিকেটের ইমেজ নষ্ট করে দিয়েছে। ক্রিকেটাররা আগে কেন এলো না আমাদের কাছে। তারা তো জানে, আমাদের কাছে এলে তাদের দাবি আমরা মেনে নেব। তাহলে ক্রিকেট তো বন্ধ করতে পারত না। তবুও ডোর ইজ ওপেন। ওরা আসতে চাইলে, আমাদের সঙ্গে বসতে চাইলে বসব। আমি অবশ্যই বসব। ওরা আমাদের সঙ্গে বসতে চাইলে বসতে পারে এবং যে কোন সময়। আমি অবশ্যই বিশ্বাস করি ক্যাম্পও হবে, ভারত সফরও হবে। ক্রিকেটাররা তাদের দাবি পেশ করতেই পারে। তবে সেটা কোনভাবেই ক্রিকেট বন্ধ করে নয়। ওদের দাবিগুলো তো অধিকাংশই মেনে নেয়া হয়েছে। কিন্তু খেলা বন্ধ কোনভাবেই হতে পারে না।’
এরপরও যদি ক্রিকেটাররা আন্দোলন চালিয়ে যান, কথা বোঝার চেষ্টা না করেন, তাহলে কঠোর হবে বিসিবি। বিসিবি সভাপতি জানান, ‘বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই জানে না আসল পরিকল্পনাটা কি। ওরা না জেনেই এসেছে। আসল পরিকল্পনা জানে দু-একজন। খেলোয়াড়রা যদি খেলতে না চায় তারা খেলবে না। এতে তাদের কি বেনিফিট আমি বুঝি না। দুদিন পর ক্যাম্প, তারা আসতে চাইলে আসবে। না হলে এভাবেই ক্যাম্প চলবে। ভারতে যদি যেতে চায় তাহলে যাবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘টাকার জন্য ধর্মঘটে ক্রিকেটাররা, এটা বিশ্বাস করতে পারছি না। ধর্মঘটের পেছনে কোন কারণ আছে। এগুলো একটা পরিকল্পনার অংশ। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে অচল করতে একটা ষড়যন্ত্র চলছে, এটা অনেকেই জানেন।