কাজিরবাজার ডেস্ক :
সরকার অনুমতি দিলে কর্মসূচি, না দিলে ঘরে বসে থাকার দীর্ঘদিনের এই চর্চা থেকে বেরোতে চায় বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা। এর অংশ হিসেবে গত কয়েক বছরে প্রথমবারের মতো অনুমতি না পাওয়ার পরেও সম্প্রতি ঢাকায় সমাবেশে করেছে বিএনপি। আর আগামী ২২ অক্টোবর ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। অনুমতি না পেলেও এই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে তারা।
গত এক দশকে আন্দোলনের মাঠে বিএনপি ছিল পুরোপুরি ব্যর্থ। তাদের আন্দোলন দাবি আদায়ের জন্য তা সাধারণ মানুষ একবারও মনে করেনি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরেও বড় কোনো আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে পারেনি বিএনপিসহ শরিক দলগুলো। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের পরে ২০১৪ সালের শুরুতে কিছুদিন এবং সরকারের এক বছর মেয়াদ পূরণ হওয়ার পরে ২০১৫ সালে বিরতিহীন আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট। সেই আন্দোলনে বিএনপিসহ জোট শুধু ব্যর্থই হয়নি বরং সন্ত্রাসী দল হিসেবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাদের পরিচয় করিয়েছে। পাশাপাশি পরবর্তী যে কোনো আন্দোলন সফলের সক্ষমতা যে তাদের নেই তা প্রমাণিত হয়েছে। অনুমতি ছাড়া একটি কর্মসূচি পালনের কথা চিন্তাও তারা করতে পারেনি। অন্যদিকে একই সময়ে অনুমতিহীন অরাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মসূচি বেশির ভাগই সফল হয়েছে। আন্দোলনের মুখে সরকার অনেক দাবিই মানতে বাধ্য হয়েছে। তা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে কোনো সহিংসতা নয়, সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে সফল হতে চায় বিএনপি।
বিএনপির দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপি কোনো বেআইনি কর্মকান্ডে লিপ্ত হবে না। প্রতিটি কর্মসূচি পালনের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতিও নেয়া হবে। কিন্তু অনুমতি না দিলে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন থেমে থাকবে না। সময় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে অনুমতি না দিলেও কর্মসূচি পালন করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হবে। এর উদাহরণ হচ্ছে, গত ১২ অক্টোবর ‘দেশবিরোধী চুক্তি’ বাতিল ও বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে দুই দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির প্রথম দিনে রাজধানীর সমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়েছিল বিএনপি। অনুমতি না পেয়ে তারা বসে থাকেনি। কর্মসূচি পালন করেছে।
এদিকে গত ১৩ অক্টোবর বিএনপি ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে নাগরিক শোকর্ যালি করতে দেয়নি পুলিশ। এরপরেও আগামী ২২ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় ঐক্যফ্রন্ট। অনুমতি না পেলেও এই কর্মসূচি পালনের ইঙ্গিত দিয়েছেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের তো করে যেতেই হবে। পারমিশন দেবে, না দেবে- আমাদের করে যেতেই হবে। দেখা যাক।’
আর এ বিষয়টি বৃহস্পতিবার পরিষ্কার করেছেন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, যদি অনুমতি দেয়া না হয়, যদি বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, তারপরেও কর্মসূচি পালন করবেন।
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট সূত্রমতে, আগামী ২২ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করার জন্য বড় ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। স্মরণ কালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ করার টার্গেট নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতারা কাজ করছেন। সামনের অবশিষ্ট দিনগুলোতেও একাধিক প্রস্তুতি সভা হবে।
বিএনপির সূত্রমতে, আগামী ২২ অক্টোবরের সমাবেশ থেকে নতুন নির্বাচন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া পরে যাতে আন্দোলন ব্যর্থ না হয়, সেজন্য বিগত সময়ে আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করেছে বিএনপিও তাদের মিত্ররা। সে কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সামনে এসেছে, পরিকল্পনাহীন আন্দোলনের কর্মসূচি, সর্বসাধারণের চেয়ে দলীয় ব্যক্তি ইস্যুতে বেশি কর্মসূচি, জামায়াতের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের দায় বিএনপির ঘাড়ে আসা, রাজপথের আন্দোলনকে সন্ত্রাসী আন্দোলন হিসেবে চালানোর রাজনৈতিক পরিপক্ষের সফলতা, যখন যে ইস্যুতে কর্মসূচি দেয়া উচিত ছিল তা না করা, নেতাদের পলায়নপর মনোবৃত্তি, আন্দোলন সফলে সঠিক নেতৃত্বে দায়িত্ব না দেয়া, সংগঠনকে শক্তিশালী করার কার্যকরী উদ্যোগ নিতে না পারা এবং একের পর এক মামলায় নেতাকর্মীদের বিপর্যস্ত হয়ে পড়া।
এছাড়া নেতৃত্বে যে দুর্বলতা আছে, বিষয়টি সিনিয়র নেতারা অস্বীকার করেন না। খালেদা জিয়ার কারাবন্দির এক বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ সিনিয়র নেতারা নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকারও করেছেন।
বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, যেসব কারণে আন্দোলন সফল হয়নি, সেই সব ত্রম্নটি শুধরে আগামীর আন্দোলন সফলের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।