কাজিরবাজার ডেস্ক :
আগামীতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল-কারিগরি শিক্ষাবোর্ড এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষা সনদ সংশোধন হবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জাতীয় পরিচয়পত্রের আদলে। সম্প্রতি তিন শিক্ষা বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিবন্ধন অনুবিভাগের সঙ্গে এক নীতি-নির্ধারণী সভায় কমিশন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সাংবিধানিক সংস্থা ইসির এ সিদ্ধান্ত অনুসরণে বোর্ডের সংশ্লিষ্টরা সভায় একমত পোষণ করেন। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে আগামীতে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী নাগরিকরা বিশেষ করে জন্ম তারিখ, পুরো নাম এবং পিতা-মাতার নাম সংশোধনে বোর্ডের সনদ সংশোধনে স্ব স্ব বোর্ডের কাছে আবেদন করতে হবে। খবর ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম-সচিব এবং এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) মো. আবদুল বাতেন বলেন, দেশের নাগরিকদের মধ্যে যারা জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই বলছেন বিদ্যমান এনআইডিতে যে জন্ম তারিখ ও নাম রয়েছে সেটি সঠিক নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত নাম এক্স ও ওয়াইজেদ। অথচ ওই সব ব্যক্তির মধ্যে অনেকে চাকরিতে কর্মরত আছেন, অনেকের শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পর মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ও টেকনিক্যাল ও কারিগরি অথবা উন্মুক্ত থেকে সনদ এনে ওই আদলে এনআইডি সংশোধনে আবেদন জানাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, ইসিতে সংশোধনের জন্য আবেদন করা ব্যক্তিদের কাগজপত্র বা দালিলিক প্রমাণসমূহ তদন্ত করে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে এনআইডি পাওয়ার পর ভিন্ন অথবা অন্য কোনো উদ্দেশে নতুন করে ওই সব শিক্ষা বোর্ড থেকে সনদ নিয়ে তার আদলে তারা সংশোধন করতে চাইছে। তাই কমিশন থেকে এ নিয়ে তিক্ত এবং বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্ট বোর্ডগুলোকে নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে, প্রাপ্ত সনদ সংশোধন হবে আগামীতে ওই জাতীয় পরিচয়পত্রের আদলে, যোগ করেন ইসির এই কর্মকর্তা।
তবে, বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ইসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে সঠিক। তবে বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় রয়েছে। এনআইডিকে ভিত্তি ধরলে শিক্ষাজীবনের সনদ অনেকটা ফিকে হয়ে যায়। এটা বাণিজ্যের একটা অংশও হয়ে যেতে পারে। আইডি নাগরিক পরিচয় হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও শিক্ষা সনদ মানুষের সামাজিক মর্যাদার অংশ। এমনকি চাকরিসহ সর্বক্ষেত্রে শিক্ষা সনদকে প্রধান পরিচয়ক হিসেবে ব্যবহার হয়; এটা মানুষের আত্মগৌরবের বিষয়, যোগ করেন ওই কর্মকর্তা।
এনআইডির সংশ্লিষ্টরা জানান, এক-এগারো প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ছবিযুক্ত জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম হাতে নেয় নির্বাচন কমিশন। এর আগে একজন ব্যক্তি ম্যানুয়ালি পদ্ধতিতে একাধিক স্থানে ভোটার হতেন বলে অভিযোগ ছিল। পরে ভোটার হওয়ার পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা কার্যকর শুরু হয় ২০০৭ সালে, ওই তালিকায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। বর্তমানে সাড়ে ১০ কোটির মতো ভোটার রয়েছে। বেশির ভাগ ভোটারের নাম-জন্ম তারিখ ভুল বিদ্যমান জাতীয় পরিচয়পত্রে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ম এনআইডি সংশোধনে আবেদন নিয়ে ইসিতে হাজির হচ্ছে। গত কয়েকবছরে এ সংখ্যা মোট ভোটারের ৪০ শতাংশের মতো।