মর্যাদাপূর্ণ ভ্যাকসিন হিরো পুরস্কার পেলেন প্রধানমন্ত্রী ॥ শিশুদের টিকাদান কর্মসূচীতে ব্যাপক সাফল্য

42
বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননায় ভূষিত করেছে সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (ডিএভিআই)। সোমবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেন জিএভিআই বোর্ডের চেয়ারম্যান নগচি ওকোনজো-আইয়েলা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
শিশুদের টিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপক সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচীর ব্যাপক সফলতায় পোলিও এবং রুবেলার মতো মরণব্যাধি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এছাড়া ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি ও হেপাটাইটিস বি’র মতো ঘাতকরোগ নির্মূল করা হয়েছে টিকাদানের মাধ্যমে। আর এ সব কর্মসূচী বাস্তবায়নের কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
সোমবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ সদর দফতরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাক্সিনেশন এ্যান্ড ইমিউনাইজেশনের (জিএভিআই) এ পুরস্কার প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়া হয়। ওই সময় জেভিআই বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. এনগোজি অকোনজো ইবিলা প্রধানমন্ত্রীর এই সাফল্যের জন্য ব্যাপক প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই পুরস্কার তাদের জন্য যারা শিশুদের জীবন রক্ষার জন্য জরুরী টিকাদানে উদ্যোগী হয়েছেন। শুধু টিকাদান কর্মসূচী নয়, শিশু অধিকার ও নারীর ক্ষমতায়নে শেখ হাসিনা একজন সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন।
প্রসঙ্গত, শিশুদের জীবনরক্ষায় বিশ্বব্যাপী কাজ করছে জেভিআই। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী সেথ বার্কলে বলেন, টিকাদান কর্মসূচীতে সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি একজন সত্যিকারের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি শিশুদের সুস্থভাবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সম্মাননা পুরস্কার পাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ পুরস্কার বাংলাদেশের। এটা বাংলাদেশের জনগণকে আমি উৎসর্গ করলাম। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে তিনি যখন প্রথমবার ক্ষমতায় ছিলেন তখন পরিস্থিতি ভাল ছিল না। এ বিষয়ে অনেকেরই আপত্তি ছিল। কিন্তু টিকার সাফল্য ও গুণাগুণ নিয়ে আমি নিজে মানুষের কাছে যাই। নিজে শিশুদের ভ্যাকসিন খাওয়াতে শুরু করি। এভাবে করার ফলে আস্তে আস্তে দেশের মানুষ এটা গ্রহণ করেছে। এখন সবাই বিশেষ করে শিশুদের মায়েরা এই কর্মসূচীতে অংশ নিচ্ছে। তিনি বলেন, টিকাদান কর্মসূচী এখন বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যেও সাফল্যগাথা গল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের কমিউনিট ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়াও স্কুল এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকা দেয়া হয়ে থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার পুষ্টি ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভিশন-২১ এবং ভিশন-২০৪১ এর মাধ্যমে দেশকে এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যেখানে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি নিশ্চিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সংক্রান্ত এক তথ্যে জানান, টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় ডিটিপি-৩ বিশেষ করে ডিপথেরিয়া, ধনুষ্টংকার ও হুপিংকাশি কাভারেজ ৮৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৮ শতাংশ। এমসিসি-১ কাভারেজ ৭৭ থেকে বেড়ে ৯৭ শতাংশ এবং গত পাঁচ বছরে দেশের সব জেলায় বেড়ে হয়েছে ৮২ শতাংশের বেশি।
সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী : স্বাস্থ্যসেবা মৌলিক অধিকার এ কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধুমাত্র দারিদ্র্যের কারণে কেউ যেন সাস্ব্যসেবা থেকে বঞ্চিত না হন। শুধু তাই নয়, বিশ্বে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্তরের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
সোমবার জাতিসংঘ সদর দফতরে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ (ইউএইচসি) নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে অনুষ্ঠানে কো-চেয়ার ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের ৮০ ভাগ কাজ প্রাথমিক স্তরেই পূরণ করা সম্ভব। তাই শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা গড়ে তোলা গেলে তা সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে প্রথম প্রাচীর হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। আর এ কারণেই সারাদেশে ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন ৪০ জন স্বাস্থ্য সেবা নেয় এবং এর মধ্যে ৯০ শতাংশই নারী ও শিশু। ওই হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে শুধু প্রতিমাসে গড়ে এক কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পেয়ে থাকে। সাম্যতার ভিত্তিতে সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এই অসমতা দূর করতে ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ যার মাধ্যমে সমাজের দারিদ্র্য মানুষের কাছে সাশ্রয়ী ও কার্যকরী স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে কোন পরিবার যেন দারিদ্র্য না হয়ে পড়ে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবায় ব্যয় করতে গিয়ে প্রতিবছর ১০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে পড়ে। ৮০ কোটি মানুষকে তাদের পারিবারিক খরচের কমপক্ষে ১০ শতাংশ আরও বেশি ব্যয় করতে হয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায়। এই প্যানেলে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলে। ম্যালেরিয়া নির্মূলে বিশ্বে নেতৃত্ব দেয়া মাহা তায়সির বারকাত, অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক উইনি বিয়নিয়া প্রমুখ।