কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশের জনগণের আস্থা-বিশ্বাস ধরে রাখতে দলের সবপর্যায়ের নেতাকর্মীদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, মাত্র এক দশকেই উন্নয়ন ও অগ্রগতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থা বিশ্বাস বেড়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষ কিছু পায়, দেশের উন্নয়ন হয়। তাই জনগণের এই আস্থা ধরে রাখতে হবে, জনগণের আস্থা অটুট রাখতে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। শনিবার রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে সূচনা বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। দেশের অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। নষ্ট করতে পারবে না। তবে আমাদের আরও অনেকদূর যেতে হবে, জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে হবে, তার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দশকেই বাংলাদেশ অগ্রগতির দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে আমরা দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে। একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল যাদের সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক নীতিমালা রয়েছে। শুধুমাত্র সরকারে থাকতেই নয়, বিরোধী দলে থাকতেও অর্থনৈতিক নীতিমালা তৈরি করি, যাতে আগামীতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কী কী করব, দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব। ক্ষমতায় এসে সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই দেশকে আমরা উন্নয়ন ও অগ্রগতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রনীতির কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি- ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারোর সঙ্গে বৈরিতা নয়’, এই নীতি নিয়েই দেশ পরিচালনা করছি। পৃথিবীর সকল দেশের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছি। বিনিয়োগে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় দেশ। বিদেশী বিনিয়োগ আমরা আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছি। এত অল্প সময়ের মধ্যে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন দেখে বিশ্বের সকলেই এখন বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহী।
স্বল্প সময়ে দেশের বিশাল উন্নয়ন ও অগ্রগতির কারণ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দল আন্দোলন-সংগ্রাম করে, দেশের জন্য আত্মত্যাগ করে, যে দলের আন্দোলনে দেশ স্বাধীন হয়, সেই দল কেবলমাত্র ক্ষমতায় থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়, মানুষের কল্যাণ হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে গঠিত দল ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন বা কল্যাণ হয় না, তা অতীতে প্রমাণ হয়েছে। তারা ক্ষমতায় থেকে নিজেদের ভাগ্য গড়ে। জনগণের কোন কল্যাণ তারা করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব দিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের একটা আস্থা-বিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের মানুষের এই আস্থা-বিশ্বাস ধরে রাখতে হবে। আন্তরিকতা নিয়ে জনগণের কল্যাণের জন্য নেতাকর্মীদের কাজ করে যেতে হবে। তবেই আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। গত এক দশকে আমরা দেশের যে ব্যাপক উন্নয়ন করেছি, সেই উন্নয়নের গতিধারাটি ধরে রাখতে হবে। আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য এক শ’ বছরের ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ ঘোষণা করেছি। দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে সেজন্য আমরা সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা দিয়ে যাচ্ছি।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল হিসেবে আমাদের (আওয়ামী লীগ) জনগণের প্রতি অনেক দায়-দায়িত্ব রয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল। উড়ে এসে জুড়ে বসে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল গঠিত হয়, সেই দলের দেশ ও জনগণের প্রতি কোন দায়-দায়িত্ব থাকে না। এরা নিজেদের ভাগ্য গড়তে আসে। তাই আমাদের জনগণের কল্যাণে কাজ করে যেতে হবে। চলতি মাসেই জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের জন্য তার যুক্তরাষ্ট্র সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে হবে। বেশ কয়েকদিন দেশে থাকতে পারব না। কিন্তু বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। দূরে থাকলেও এখন আর সেই দূর নেই। দূরে থাকলেও আমি আওয়ামী লীগ অফিসের কর্মকা- দেখতে পারি, বিদেশে বসেই ই-ফাইলিংয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সরকারী কর্মকা- সম্পন্ন করি। দেশের সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল টেলিফোন। আমরা দেশকে ডিজিটালভাবেই গড়ে তুলেছি। সন্ত্রাস-অগ্নিসন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ-মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস, অগ্নিসন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ আমরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে যে অভিযান চলছে তা অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।
তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে (আওয়ামী লীগ) শক্তিশালী করে গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি কথা মনে রাখতে হবে- আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। কাজেই আমাদের দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সেই কথা মাথায় রেখেই সংগঠনকে তৃণমূল পর্যায় থেকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা আর কেউ থামাতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগের সম্মেলনটা যেন নিয়মিত হয়, সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। দলের উপ-কমিটিগুলোকেও কাজ করতে হবে।
সূচনা বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সাংগঠনিক বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। বৈঠকে দেশবাসী কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর, দলের ত্রি-বার্ষিকী জাতীয় সম্মেলন, দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাসহ দেশের সবশেষ রাজনৈতিক-সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং বেশকিছু সিদ্ধান্ত হয়।