এসএমই খাতে ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ছে, নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা

21
মন্ত্রী পরিষদ কক্ষে মন্ত্রী পরিষদ বৈঠকে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের সুবিধা বাড়াতে একটি নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। এতে এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সভায় ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন আইন, ২০১৯’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস’ হিসেবে ঘোষণা এবং দিবসটি উদ্যাপনের জন্য সায় দিয়েছে মন্ত্রী সভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় শিল্পনীতির আলোকে এ নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। এ খাতে প্রায় ৭৮ লাখ অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান হলো প্রায় ২৫ শতাংশ। এসএমই’র বাইরে মাইক্রো এবং কুটির শিল্পও যুক্ত করা হয়েছে। মাইক্রো, কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মিলে এসএমই। মোটামুটি সারা পৃথিবীতে এভাবেই এসএমই গণ্য করা হয়।
তিনি বলেন, ছয়টি উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে নীতিমালা করা হচ্ছে। এসএমই উদ্যোক্তাদের অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সুযোগ, বাজারে প্রবেশের সুযোগ, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ, ব্যবসায় সহযোগিতা এবং তথ্যের সুযোগপ্রাপ্তি। নীতিমালার বাস্তবায়ন কৌশল তুলে ধরে তিনি বলেন, কৌশলগত অর্থায়ন সুবিধাপ্রাপ্তিতে এসএমই খাতের সুযোগ বৃদ্ধি করা, এসএমই খাতের ঋণপ্রবাহ বৃদ্ধি করা, অর্থায়নের ব্যবস্থা করা, এসএমই ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড চালু করা। এ ফান্ড চালু হলে মর্টগেজ (বন্ধক) থাকবে না, অর্থপ্রাপ্তি সহজীকরণ হবে। সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের কথাও বলা হয়েছে নীতিমালায়।
এছাড়া নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (স্ট্যার্টআপ) করার ক্ষেত্রে সহায়তা করা, অনলাইন বা ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে স্ট্যার্টআপ প্রক্রিয়া সহজ করার কথা নীতিমালায় বলা হয়েছে।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে নীতিমালায় ই-কমার্স, অনলাইন সাপোর্ট, আউট সোর্সিং ও আইটি ভিত্তিক এ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে এসএমইদের সহায়তা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।
নীতিমালায় নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দেয়ার কথা বলা আছে জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, তাদের (নারী) সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, ঋণ দেয়া, তহবিল গঠন, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্বুদ্ধকরণ এবং বাজার সংযোগে সুযোগ বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়েছে। টেকসইয়ের জন্য ফরোয়ার্ড ও ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এসএমই তথ্যভান্ডার তৈরি, পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠায় এসএমইদের উৎসাহিতকরণ, শিল্প বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসএমইদের প্রণোদনা দেয়া, পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং ব্যবহার বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে।
শফিউল আলম বলেন, এসব নীতি-কৌশল বাস্তবায়নের জন্য দুই ধরনের পর্ষদ থাকবে। শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩৭ জনের পর্ষদে প্রতিমন্ত্রী সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, বেসরকারী খাতের পাঁচজন প্রতিনিধি থাকবেন। আর সচিবের নেতৃত্বে পর্ষদে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২৯ সদস্য থাকবেন। এ নীতিমালা ২০১৯-২০২৪ সালের জুনের মধ্যে কার্যকর করা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে এসএমই উদ্যোক্তারা এসএমই ফাউন্ডেশন এবং ব্যাংক থেকে সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা পেয়ে থাকেন। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩৬টি এ্যাকটিভিটিজ ও ৬২টি কৌশল আছে। সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনায় রয়েছে কী কী অর্জন করতে হবে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ২০২৫ সালে এসএমই খাতের জিডিপিতে অবদান ৩২ শতাংশে উন্নীত হবে।
মূলধন বৃদ্ধি করে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন আইন অনুমোদন : সভায় ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন আইন, ২০১৯’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, আইনটি অনেক পুরনো, পাকিস্তান আমল থেকে ইস্ট পাকিস্তান ল হয়ে শুরু হয়ে এ পর্যন্ত আছে। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার হয় বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন অর্ডার, এর পর দুই এ্যামেন্ডমেন্ট হয় ১৯৭৬ ও ৭৯ অর্ডিন্যান্স আকারে, যেহেতু এগুলো সামরিক আমলে হওয়া তাই এগুলোকে আপডেট করে বাংলায় করার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
আগের যে ১৯৭২ সালের যে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার তার সঙ্গে প্রস্তাবিত আইনের খুব বেশি ব্যবধান নেই জানিয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে তা হলো, অনুমোদিত মূলধন আগে ছিল মাত্র ৫ কোটি টাকা , পেইড আপ ক্যাপিটাল সম্পর্কে বলা হয়েছে সরকার কর্তৃক সময় সময় যা জোগান দেয়া হবে তা। এখন সেই পর্যায়ে এটা বাড়তে বাড়তে ৪৫ কোটিতে এসে ঠেকেছে। এখন বলা হচ্ছে কর্পোরেশনের অনুমোদিত মূলধন হবে ৫০০ কোটি টাকা এবং পেইড আপ ক্যাপিটালের বিষয়ে বলা আছে সরকার জোগান দিয়ে ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করবে।
পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগ আগের মতোই সরকার দেবে জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, পরিষদের গঠন ছিল একজন চেয়ারম্যান, ৪ জন পরিচালক নিয়ে, এখন প্রস্তাব করা হয়েছে একজন চেয়ারম্যান ও ৪ জন পরিচালকের সঙ্গে আরেকজন খন্ডকালীন পরিচালক যুক্ত হবে যিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব হবেন।
আইনে বার্ষিক প্রতিবেদনের বিধান রাখা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রীপরিষদ সচিব বলেন, পরবর্তী অর্থবছর শেষ হওয়ার ৬ মাস আগেই তা শেষ করতে হবে। অর্থাৎ জুলাইতে আমাদের অর্থবছর শেষ হয়, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই বার্ষিক রিপোর্ট প্রদান করতে হবে। কর্পোরেশনের পাওনা আদায়ে নতুন ম্যানেজমেন্ট দেয়া হয়েছে আগে কোন সুনির্দিষ্ট বিধান ছিল না জানিয়ে মন্ত্রী পরিষদ সচিব বলেন, কর্পোরেশনের কোন পাওনা থাকলে সেটা ১৯১৩ সালের পিডিআর এ্যাক্ট অনুযায়ী আদায়যোগ্য হবে।
৪ ডিসেম্বরে ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস’ : প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর জাতীয় বস্ত্র দিবস পালিত হবে। এ জন্য এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। একই সঙ্গে দিবসটি উদযাপনের জন্য মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের জারি করা পরিপত্রের ‘খ’ ক্রমিকে তা অন্তর্ভুক্তকরণের প্রস্তাবও অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা।
আলম বলেন, প্রতিবছর ৪ ডিসেম্বরে ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস’ হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রী সভা। এখন থেকে প্রতিবছর ৪ ডিসেম্বর ‘জাতীয় বস্ত্র দিবস’ পালিত হবে। এভাবে দিবস পালন মানে মানুষকে একটু সেনসিটাইজড করা। মানুষ স্মরণ করবে আজ বস্ত্র দিবস, এ জন্য আমাদের কিছু করণীয় আছে। আমাদের রফতানি আয় সবচেয়ে বেশি বস্ত্র থেকেই পাই।
তিনি বলেন, পাট দিবস মার্চের একটা তারিখে (৬ মার্চ) আছে। মার্চ হচ্ছে স্বাধীনতার মাস, আর ডিসেম্বর হচ্ছে বিজয়ের মাস, দুটো মিলে ওনারা (বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়), ওনারা স্বাধীনতা ও বিজয়কে একসঙ্গে নিয়ে চলতে চান।
ড. নঈম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক : বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রী সভা। মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন,‘সভার শুরুতে একটি শোকপ্রস্তব গ্রহণ করা হয়। বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরীর মৃত্যুতে মন্ত্রীসভা গভীর শোক প্রকাশ করেছে। গত শুক্রবার ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন নঈম চৌধুরী।