কাজিরবাজার ডেস্ক :
একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ পলাতক ১৬ আসামিকে দেশে ফেরত আনতে জোরালো কূটনৈতিক তৎপরতা চালাচ্ছে সরকার। এছাড়া ভারতের তিহার জেলে বন্দী সরাসরি হামলায় অংশ নেয়া হুজি জঙ্গি সহোদর মুরসালিন ও মুত্তাকিনকে দেশে ফেরত আনতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানসহ পলাতক ১৬ জনকে দেশে ফেরত আনতে জোরালো তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও বিষয়টি সময় সাপেক্ষ হতে পারে। আসামিদের দেশে ফেরত আনতে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করছে পুলিশের ইন্টারপোল শাখা।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ২০০৪ সালের ২১ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হন। মামলার রায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদন্ড ও ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- হয়। বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড হয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, মামলা দুইটিতে আসামি ৫২ জন। এরমধ্যে ২৫ জন বর্তমানে কারাগারে। বাকিরা পলাতক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, দ্রুততার সঙ্গে পলাতক সব আসামিকে দেশে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে ভারতের তিহার জেলে বন্দী থাকা সহোদর মুরসালিন ও মুত্তাকিনকে ফেরত পেতে চলছে নানামুখী তৎপরতা। অন্য আসামিদের ফেরত আনার ক্ষেত্রে সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তারপরেও জোরালো চেষ্টা অব্যাহত আছে।
সূত্র বলছে, আসামিদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনপ্রবাসী তারেক রহমানসহ ১৮ জন এখনও পলাতক। পলাতক আসামিদের মধ্যে তারেক রহমান লন্ডনে, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ সৌদি আরবে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালিন এবং তার ভাই মুহিবুল মুক্তাকীন ভারতের তিহার কারাগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে।
জঙ্গি নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গির আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (পূর্ব) এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ওবায়দুর রহমান এবং খান সাঈদ হাসান বিদেশে অবস্থান করছে বলে পুলিশের ইন্টারপোল শাখা সূত্রে জানা গেছে। অনেকের সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানা গেলেও তাদের গ্রেফতার করে দেশে আনার স্বার্থে তারা কোন কোন দেশের কোন কোন রাজ্যে অবস্থান করছে তা স্পষ্ট করেনি সূত্রটি। তবে এদের বেশিরভাগই পাকিস্তানে পলাতক বলে সূত্রটি বলছে। আর হারিস চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি। পলাতকদের মধ্যে মাওলানা তাইজউদ্দিন ও বাবু ওরফে রাতুল বাবু এরা দু’জন বিএনপি সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই।
আর ভারতের তিহার জেলে বন্দী আছে দুই ভাই হুজি জঙ্গি আনিসুল মোরসালিন ওরফে সুজয় ও মহিবুল মোত্তাকিন। পলাতক আসামিদের মধ্যে এ দুজন সরাসরি গ্রেনেড হামলায় অংশ নিয়েছিল। তারা নিজ হাতে গ্রেনেড ছুঁড়েছিল সমাবেশে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে মোষ্টওয়ান্টেড আসামি হিসেবে পলাতকদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে রেডনোটিস জারি করা হয়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের ইন্টারপোল (এনসিবি) শাখা সূত্রে জানা গেছে, পলাতকদের অবস্থান শনাক্ত করার কাজ চলছে। পাশাপাশি তাদের দেশে ফেরার আনার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। পলাতকদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি শনাক্ত হওয়া আসামিরা কোন দেশের কোথায় কি অবস্থায় রয়েছে, তাও বিস্তারিত জানানো হয়েছে। তাদের ফেরত আনতে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পুলিশের ইন্টারপোল শাখা কাজ করে যাচ্ছে। যেসব দেশে আসামিরা পলাতক রয়েছে, সেসব দেশের ইন্টারপোলের শাখা বাংলাদেশের ইন্টারপোল শাখাকে পলাতক আসামিদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সহযোগিতা করছে। তবে কয়েকটি দেশে সমস্যা হচ্ছে।
পুলিশ সদর দফতরের ইন্টেলিজেন্স এ্যান্ড স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পলাতক আসামিদের ফেরত পেতে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয়া হয়েছে। ভারতের তিহার জেলে বন্দী মুরসালিন ও মুত্তাকিনকে ফেরত পেতে বিশেষ চিঠি চালাচালি ও তৎপরতা অব্যাহত আছে।
মামলার সাজাপ্রাপ্ত হিসেবে কারাগারে আছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিডিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক আব্দুর রহিম, মাওলানা ফরিদ, মুফতি আব্দুল হান্নান ওরফে সাব্বির, হুজির সাবেক আমির মাওলানা আবদুস সালাম, পাকিস্তানের কাশ্মীরের জঙ্গি আব্দুল মজিদ বাট, জঙ্গি আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আবদুল মান্নান (অন্য এক মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে), মহিবুল্লাহ মফিজুর রহমান ওরফে অভি, শরিফ শাহেদুল আলম বিপুল, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডাঃ জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মোঃ জাহাঙ্গির আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম পিন্টু, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ, উজ্জ্বল ওরফে রতন, আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক ও বরিশালের মাওলানা আবু বকর।
এছাড়া মামলার অন্যতম আসামি জামায়াতে ইসলামের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ইতোমধ্যেই যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যু হয়েছে।