কাজিরবাজার ডেস্ক :
চৌদ্দ বছর আগে ২০০৫ সালে সারাদেশে ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসা জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ জেএমবি নামের জঙ্গি সংগঠনটি নব্য জেএমবিতে আত্মপ্রকাশ করার সঙ্গে কৌশলও পরিবর্তন করেছে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, অস্ত্রের ব্যবহার, পোশাক পরিচ্ছদ, বাসস্থান, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট, অস্ত্রের চালান, সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দলে কৌশলগত পরিবর্তন এনেছে জঙ্গি সংগঠনটি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলা দিতে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের আদর্শে অনুপ্রাণিত ও অনুকরণে জঙ্গি হামলা, নাশকতা, দেশী-বিদেশী মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ, অর্থ সংগ্রহসহ সর্বক্ষেত্রে কৌশল পরিবর্তন করেছে নব্য জেএমবি।
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, নব্য জেএমবি যেমন কৌশল বদল করছে তেমনি কৌশল পরিবর্তন করেছে জঙ্গি বিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী তদন্ত কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দা সংস্থাও। জঙ্গি বিরোধী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মুখে নব্য জেএমবির স্থানীয় নেতারা নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রযুক্তিগত কৌশলের দিকে ঝুঁকছে এরা। তবে, জঙ্গিদের নতুন এই কৌশল মাথায় নিয়েই গোয়েন্দা তদন্তেও আনা হয়েছে নতুন কৌশল এতে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে গেছে, জঙ্গি তৎপরতা বন্ধের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুরনো জেএমবি নব্য জেএমবিতে আত্মপ্রকাশের বিষয়টি প্রকাশ পায় তিন বছর আগে গুলশানের হলি আর্টিজানে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানোর ঘটনায়। তদন্তের বিভিন্ন পর্যায়ে গোয়েন্দা অনুসন্ধান ও নব্য জেএমবির নেতাদের গোপন আলাপচারিতা থেকে এসব তথ্য পায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনাকারী ও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সিটিটিসি। নব্য জেএমবির শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিহত হওয়ার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার অন্যতম কারণ। আর এ কারণেই নব্য জেএমবির নেতারা তাদের প্রযুক্তিগত কৌশল বদল করছে। তারা এখন উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। তারা এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে যাচ্ছে, যা নাকি রাডারের মতো যন্ত্রের মাধ্যমেও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আগে শনাক্ত করা সম্ভব করতে পারবে না!
সূত্র জানায়, নব্য জেএমবি শুধু প্রযুক্তি নয়, অস্ত্রের ব্যবহার, পোশাকপরিচ্ছদ, বাসস্থান, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট, অস্ত্রের চালান, দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৌশলগত পরিবর্তন এনে তৎপর হওয়ার চেষ্টা করছে। এ কারণে এখন আর তদন্তে শুধু পরিচিত মুখ নয়, অপরিচিতদেরও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যাদের কখনো গ্রেফতার করা হয়নি, যারা পুলিশের নজদারিতে নেই, সন্দেহের তালিকায় নেই, এমনকি কোন মামলার আসামিও নয়, তারাও থাকবে তদন্ত তালিকায়। একই দলগত আদর্শ ধারণ করা অপরিচিত ব্যক্তিরাও। অপরিচিত নব্য জেএমবি জঙ্গিদের খোঁজার জন্য সিটিটিসিও তৎপরতা শুরু করেছে। ধৃত ও তালিকায় থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে যাদের স্বাভাবিক যোগাযোগ ছিল সেখান থেকেও ক্লু খোঁজা হচ্ছে। কোন কিছুই বাদ দেয়া হচ্ছে না।
সিটিটিসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত তাদের প্রযুক্তিগত কৌশল পরিবর্তন করছে। সাইবার ক্রাইমকে তারা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। ফেসবুক, হ্যাকিং, ই-মেল, বিভিন্ন ধরনের এ্যাপস, ভিডিও কনফারেন্সসহ অত্যাধুনিক অনেক প্রযুক্তি ব্যবহার করছে জঙ্গিরা। এক কথায় বলা যায়, তারা এখন রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে একসঙ্গে অনেকে যোগাযোগ রক্ষা করছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা তাদের দক্ষতা বাড়ানোর ফলে কৌশল পরিবর্তন করেও বেশিদূর জঙ্গিরা এগোতে পারেনি।