সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

14

স্টাফ রিপোর্টার

উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির মধ্যেই নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জে। তবে এই ৩টিতে ভয়াবহতা এখনো তীব্র হয়নি। সীমান্ত এলাকায় পানি কিছুটা কমলেও বাড়ছে শহর ও নিম্নাঞ্চলে। অকাল বন্যায় এরইমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে গেছে সিলেট শহরের কিছু অংশসহ ৮টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে বিশ্বনাথ, বিয়ানীবাজারে ও গোলাপগঞ্জের একাধিক এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ডাইক ভেঙ্গে বিয়ানীবাজার উপজেলার একাধিক স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
এদিকে সুরমার পানি বেড়ে যাওয়ায় সিলেট মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরীর মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সুরমা নদীর পানি বেড়ে এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর থেকে নগরীর তালতলা, মেন্দিবাগ, উপশহর, যতরপুর ও মাছিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে সড়কে পানি উঠতে শুরু করেছে। এছাড়া শুক্রবার সকাল থেকে সুুরমা নদীর পানি ঢুকতে শুরু করে নগরীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত উপশহর সি-বøক, ডি-বøক ও ই-বøক একাংশ, তোপখানা, মাছিমপুর, সোবহানীঘাট, শেখঘাট ও কাজিরবাজার এলাকায়। শুক্রবার সকালে তালতলা ও মেন্দিবাগ-মাছিমপুর সড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়ক দুটিতে প্রায় হাটু পানি জমে গেছে। তালতলাস্থ সিলেটের ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স কার্যালয়েও পানি প্রবেশ করেছে বৃহস্পতিবার থেকে। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেন। শুক্রবার ফায়ার সার্ভিস অফিসে পানি আরো বেড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, বন্যার পানি ওঠার কারণে এ স্টেশন থেকে মেশিনারিজ ২৭ নং ওয়ার্ডের আলমপুর স্টেশনে নিয়ে রাখা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকার সড়ক ও বিভিন্ন বাসাবাড়ি ও দোকানপাট, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদে পানি প্রবেশ করে। এতে বিপাকে পড়েন নগরীর বাসিন্দারা। অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নেন। এদিকে নগরীর ১৫ নং ওয়ার্ডের কিশোরী মোহন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উঠেছে কয়েকটি পরিবার। একই ওয়ার্ডের মতিন মিয়ার কলোনীর ৪০টি পরিবার, পাশ্ববর্তী ২৯নং বাসায়ও আশ্রয় নিয়েছেন কেউ কেউ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলরদের মাধ্যমে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেকেই আশ্রয় কেন্দ্রে পরিবার নিয়ে উঠতে শুরু করেছেন। তিনি জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসা সামগ্রী প্রেরণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উদ্ধারকাজের জন্য নৌকার ব্যবস্থা, নিম্নাঞ্চলের বিদ্যুৎকেন্দ্র, উপ-কেন্দ্রগুলো বন্যার পানিতে যাতে ডুবে না যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগকে সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া উপজেলাগুলোর মধ্যে বিভিন্ন এলাকার বাড়ি-ঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলমগ্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার সিলেটের নদ-নদীর পানি জেলার পাঁচটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২টি পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। তবে অনেকের অভিযোগ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোন সহযোগিতা বা ত্রাণ আসেনি তাদের কাছে।
গত বুধবার বিকেল থেকে এসব উপজেলায় পানি বাড়তে শুরু করে। মধ্যরাতে অনেকের ঘরে হাটু পানি থেকে কারো ঘর গলা পানিতে ডুবেছে। অনেকের ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়। ভেসে যায় মুরগীর খামার, গবাদি পশু ও পুকুর-খামারের মাছ। এদিকে, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানা প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে এসব উপজেলায় ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৭ উপজেলায় ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন বন্যাকবলিত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছেন ৪ হাজার ৮০২ জন।। এছাড়া বন্যাকবলিত লোকজনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ২০০ বস্তা করে মোট ১ হাজার বস্তা শুকনো খাবার, ১৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন চাল, ৫০ হাজার টাকা করে আড়াই লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, বেশ কয়েকটি উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত সিলেটের নদ নদীগুলির তিনটি পয়েন্টের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক দুর্গত এলাকাগুলোর খোঁজখবর নিচ্ছি। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২শ মি.মি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের দিন যা ছিলো সাড়ে ৬শ মি.মি। ভারতে বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, সুরমা নদীতে পানি বেড়েছে এবং সকালে গিয়ে আমরা দেখেছি- পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে সিলেট নগরীর কাজিরবাজারসহ যেসব ড্রেন সুরমায় পড়েছে সেসব ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের বদলে উল্টো পানি ঢুকছে। এর জন্য কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে আর যদি বৃষ্টি না হয় তবে সে পানি নেমে যাবে। তিনি বলেন- সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে সিটি করপোরেশন। এছাড়া যে কোনো সাহায্যের জন্য ২৪ ঘন্টা কন্ট্রোল রুম (০১৯৫৮২৮৪৮০০) অথবা ভারপ্রাপ্ত মেয়র, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।