ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪৮ হাজার ছাড়িয়েছে

11

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ছাড়পত্র পাওয়া রোগীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৈনিক নতুন করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। চলতি মাসে ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত দৈনিক গড়ে ৩ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুতে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সরকারী পরিসংখ্যানে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ বলা হলেও বেসরকারী পরিসংখ্যানে এই সংখ্যা ৮৫ ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর বিভিন্ন নির্ভরশীল মিডিয়ায় প্রকাশিত হচ্ছে। ২৭ ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর স্বীকার করেছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন স্থানে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আর ডেঙ্গুর পিক মৌসুম আগষ্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস। সামনে ডেঙ্গুর পিক মৌসুমের আরও আড়াই মাস পড়ে আছে। তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই সিটি মেয়র সেপ্টেম্বরের শুরুতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছেন তা বাস্তবে রূপ দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। চলতি মাসে ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত সারাদেশে দৈনিক গড়ে তিন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৌসুমি আক্তার নামে এক নারী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তার মৃত্যু হয়। এনিয়ে ঢামেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২৭-এ। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা শিশু হাসপাতালে। তার নাম রাজ চৌধুরী। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মৃত্যু হয়। রাজের বয়স ছিল মাত্র দুই বছর দশ মাস। সে জাতীয় হৃদরোগ ইনষ্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী রেজিষ্ট্রার ডাঃ নির্মল কান্তি চৌধুরীর ছেলে। বৃহস্পতিবার মাদারীপুর ও মাগুরায় একজন করে দুই ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে বুধবারও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীতে এক সিআইডি সদস্য, খুলনায় এক যুবক, মাদারীপুরে একজন, নোয়াখালীতে একজন এবং ফরিদপুর ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে দুটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এভাবে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। সরকারী পরিসংখ্যানে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০ বলা হলেও বেসরকারী পরিসংখ্যানে এই সংখ্যা ৮৫ ছাড়িয়ে গেছে।
অধিদফতরের ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত সর্বমোট ডেঙ্গু আল্ডান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮২৮০ এবং ছাড়পত্র পাওয়া মোট ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ৪০৬৭০। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে সর্বমোট ডেঙ্গু আল্ডান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭৫৭০ জন। রাজধানীসহ সারাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী ভর্তি হয়েছে ১৯২৯ জন। বর্তমানে ঢাকার ৪০টি সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে ডেঙ্গু আল্ডান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩,৯১০জন এবং ঢাকা শহর ব্যতীত অন্যান্য বিভাগে চিকিৎসাধীন মোট ৩,৬৬০জন। আর ১-১৪ আগষ্ট পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে ২৯৮১৯ জন।
সূত্রটি আরও জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৩১ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ৬৭ জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৫ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬৬ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ জন, রাজারবাগের পুলিশ হাসপাতালে ১৩ জন, মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০৯ জন, পিলখানার বিজিবি হাসপাতালে ৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৩ জন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৬৫ নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।
আর ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলায় ২৯৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলায় ৫৬ জন, চট্টগ্রামের ১১টি জেলায় ২০৯ জন, খুলনা বিভাগের ১০টি জেলায় ১৫১ জন, রাজশাহী বিভাগের ৮টি জেলায় ১৩০ জন, রংপুর বিভাগের ৮টি জেলায় ৮১ জন, বরিশালের ৬টি জেলায় ১৭১ জন এবং সিলেট বিভাগের ৪টি জেলায় ২৫ নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে।
আর বর্তমানে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ৭৭৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৭৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৬১ জন, খুলনা বিভাগে ৬৬৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৩৯৯ জন, রংপুর বিভাগে ২৮১ জন, বরিশাল বিভাগে ৫৬৩ জন এবং সিলেট বিভাগে ৪০ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছে।